সংক্ষিপ্তসার
- ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বিশ্বস্ত সহযোগী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন।
- বয়স ৩৯, একসময় রক্ষণশীল রাজনীতির তরুণ প্রতিভা ছিলেন লেকর্নু।
- এ সিদ্ধান্তে বামপন্থী দলগুলো ক্ষুব্ধ, তবে লেকর্নুকে কিছুটা নির্ভর করতে হবে কট্টর-ডানপন্থী আরএন পার্টির সমর্থনের ওপর।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লেকর্নুর নিয়োগ
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আনুষ্ঠানিকভাবে সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন। তিনি ম্যাক্রোঁর ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিকেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এই নিয়োগের মাধ্যমে ম্যাক্রোঁ স্পষ্ট করে দিলেন, তিনি তাঁর ব্যবসাবান্ধব সংস্কারনীতি থেকে সরে আসবেন না। এ নীতিতে ধনীদের ওপর কর কমানো হয়েছে এবং অবসরের বয়স বাড়ানো হয়েছে।

রাজনৈতিক ভারসাম্যের চেষ্টা
তবে এক ভিন্নধর্মী পদক্ষেপে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, লেকর্নুকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংসদের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বাজেটসহ গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করতে।
লেকর্নু সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “আমাকে একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—ফরাসি জনগণের সেবা, দেশের স্বাধীনতা ও শক্তি রক্ষা, এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।”
নতুন সংকটের প্রেক্ষাপট
লেকর্নু হচ্ছেন গত দুই বছরের মধ্যে ম্যাক্রোঁর পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী। সোমবারই সংসদ আগের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরুকে পদচ্যুত করেছে দেশটির ঋণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পরিকল্পনার কারণে।
এমন এক সময়, যখন জনগণের মধ্যে ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ক্ষোভ বাড়ছে, তাঁর এই নিয়োগকে অনেকেই ‘সংবেদনশীলতার অভাব’ হিসেবে দেখছেন।

বামপন্থীদের ক্ষোভ, ডানপন্থীদের কৌশল
নিয়োগের ঘোষণার পরপরই বামপন্থী দলগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। তারা বুধবার সারাদেশে “সবকিছু বন্ধ” শীর্ষক বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। কট্টর-বাম দল ‘ফ্রান্স আনবোউট’ লেকর্নুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে বলে ঘোষণা করেছে।
তবে এই প্রস্তাব পাশ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, কারণ কট্টর-ডান জাতীয় সমাবেশ (আরএন) পার্টির প্রেসিডেন্ট জর্ডান বারডেলা আপাতত বাজেট বিষয়ে লেকর্নুর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
বারডেলা জানিয়েছেন, “আমরা নতুন প্রধানমন্ত্রীর কাজকে বিচার করব তাঁর কর্মফল অনুযায়ী। তবে আমাদের লাল দাগের বাইরে কোনো কিছু গ্রহণযোগ্য হবে না।”
আরএন দল কর বৃদ্ধির বিরোধিতা করে, অভিবাসন ব্যয় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফ্রান্সের অবদান সীমিত করতে চায়।
বাজেটই বড় চ্যালেঞ্জ
২০২৬ সালের বাজেটে ঐকমত্য তৈরি করাই হবে লেকর্নুর প্রথম দায়িত্ব। পূর্বসূরি বাইরু ঘাটতি কমাতে ব্যাপক ব্যয় সংকোচন চাপিয়ে দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বর্তমানে ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমার প্রায় দ্বিগুণ। এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে আরও অনিশ্চয়তায় ফেলছে।
রাজনৈতিক যাত্রা ও অভিজ্ঞতা
লেকর্নু কিশোর বয়সেই রাজনীতিতে নাম লেখান। ১৬ বছর বয়সে সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির জন্য প্রচারণা চালান। মাত্র ১৮ বছর বয়সে নর্ম্যান্ডির একটি ছোট শহরের মেয়র হন এবং ২২ বছর বয়সে সারকোজির সবচেয়ে কনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন।
২০১৭ সালে তিনি রক্ষণশীল দল ‘লে রিপাবলিকান’ ছেড়ে ম্যাক্রোঁর দলে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে তাঁর পুনর্নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইউরোপের নিরাপত্তা কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

অর্থনৈতিক সংস্কার রক্ষার প্রয়াস
ম্যাক্রোঁ নিজের ঘনিষ্ঠ এবং রক্ষণশীল ব্যাকগ্রাউন্ডের মন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী করে অর্থনৈতিক সংস্কার রক্ষার কৌশল নিয়েছেন বলে বিশ্লেষকদের মত।
কারণ সমাজতান্ত্রিক দলগুলো আগেই ঘোষণা দিয়েছে, তারা ধনীদের ওপর কর পুনর্বহাল এবং অবসরের বয়স হ্রাস করবে, যেগুলোকে ম্যাক্রোঁ বিনিয়োগবান্ধব অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য বলে মনে করেন।
নতুন প্রধানমন্ত্রী লেকর্নুকে একদিকে বাজেট সংকট সমাধান করতে হবে, অন্যদিকে ডান ও বামপন্থী দুই শিবিরের চাপ সামলাতে হবে। তাঁর নিয়োগ রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাবে নাকি আরও জটিল করে তুলবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে স্পষ্ট যে, ফ্রান্সে ম্যাক্রোঁ নিজের সংস্কারনীতি রক্ষার জন্য আপসহীন পথই বেছে নিয়েছেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















