০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডে উন্মোচিত হলো আমেরিকার রক্তাক্ত ও ভাঙা রাজনীতি

ঘটনাস্থলের চিত্র

উটাহ অঙ্গরাজ্যের এক শান্ত কলেজ ক্যাম্পাসে হাজারো শিক্ষার্থী সমবেত হয়েছিল চার্লি কার্ককে শুনতে। ৩১ বছর বয়সী এই রক্ষণশীল আন্দোলনের তারকা বক্তা তাঁবুর নিচে বসে রাজনৈতিক বিরোধীদের সঙ্গে বিতর্ক করছিলেন। কেউ করতালি দিচ্ছিল, কেউ প্রতিবাদ করছিল। হঠাৎই গুলির শব্দে ভেঙে পড়ে সবকিছু।

কার্ক গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন এবং ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। ক্যামেরায় ধরা পড়ে রক্তাক্ত দৃশ্যগুলো, যা দীর্ঘদিন মনে গেঁথে থাকবে অনেক তরুণ রক্ষণশীল সমর্থকের কাছে। তাঁদের কাছে এখন কার্ক কেবল নেতা নন, বরং এক শহীদ।

কার্কের ভূমিকা ও মতাদর্শ

চার্লি কার্ক সবসময় বলতেন, তাঁর সমালোচকদের কাছ থেকে সহিংসতার আশঙ্কা আছে। তবুও তিনি নির্ভীকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতেন, যেখানে সাধারণত প্রগতিশীল রাজনীতির প্রভাব বেশি।

তিনি অস্ত্র বহনের অধিকারের পক্ষে, রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারক, ট্রান্সজেন্ডার অধিকারের কট্টর সমালোচক এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের অটল সমর্থক ছিলেন। তাঁর সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউ.এস.’ ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আমেরিকায় রাজনৈতিক সহিংসতার ধারাবাহিকতা

কার্কের হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতার সাম্প্রতিক উদাহরণ মাত্র। এর আগে মিনেসোটায় দুইজন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা গুলিবিদ্ধ হন, যার মধ্যে একজন মারা যান। ২০২৪ সালে ট্রাম্পের ওপরও দুইবার হামলার চেষ্টা হয়েছিল।

আরও পেছনে তাকালে দেখা যায়, সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির বাড়িতে হামলা, কিংবা ২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ায় রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানদের ওপর গুলিবর্ষণ—সবই একই প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।

বিভাজন ও উত্তেজনার বিপজ্জনক ধারা

বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকার রাজনীতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারময়। সহিংসতা আরও সহিংসতা ডেকে আনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভাজনমূলক বক্তব্য আর সহজে অস্ত্র পাওয়ার সুযোগ এই বিপদকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এখন রক্ষণশীল কর্মীরা তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—যদি ট্রাম্পের মতো উচ্চপর্যায়ের নেতাও আক্রমণ থেকে পুরোপুরি নিরাপদ না হন, তবে আসলেই কি কেউ নিরাপদ?

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর ট্রাম্প এক ভিডিও বার্তায় একে “আমেরিকার জন্য অন্ধকার মুহূর্ত” বলেছেন। তিনি সরাসরি “র‍্যাডিকাল বামপন্থীদের” দায়ী করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে তাঁর প্রশাসন দোষীদের খুঁজে বের করবে। এই বক্তব্য রক্ষণশীল মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

অন্যদিকে রিপাবলিকান কর্মী ক্রিস্টোফার রুফো সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, আইন মেনে হলেও বামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে ভেতর থেকে ভেঙে দেওয়া, গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো উচিত।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দল থেকেই অনেকে সহিংসতা নিন্দা করেছেন এবং উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসে কার্কের স্মরণে নীরবতার মুহূর্তের পরপরই আবারও পক্ষদ্বয়ের মধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়, যা দেখায় রাজনৈতিক বিভাজন এখনও কতটা তীব্র।

উটাহর গভর্নরের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া

উটাহর গভর্নর স্পেন্সার কক্স সংবাদ সম্মেলনে আবেগঘন বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ২৫০ বছর পূর্তি সামনে, অথচ দেশ এখন ভাঙা অবস্থায় আছে।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এটাই কি আমাদের ২৫০ বছরের অর্জন?”
সঙ্গে নিজেই উত্তর দেন, “আমি প্রার্থনা করি, যেন তা না হয়।”

তাঁর কণ্ঠের অনিশ্চয়তা প্রমাণ করে, আমেরিকার রাজনৈতিক সহিংসতা কমবে নাকি আরও বাড়বে—সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা।

চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডে উন্মোচিত হলো আমেরিকার রক্তাক্ত ও ভাঙা রাজনীতি

০১:০২:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঘটনাস্থলের চিত্র

উটাহ অঙ্গরাজ্যের এক শান্ত কলেজ ক্যাম্পাসে হাজারো শিক্ষার্থী সমবেত হয়েছিল চার্লি কার্ককে শুনতে। ৩১ বছর বয়সী এই রক্ষণশীল আন্দোলনের তারকা বক্তা তাঁবুর নিচে বসে রাজনৈতিক বিরোধীদের সঙ্গে বিতর্ক করছিলেন। কেউ করতালি দিচ্ছিল, কেউ প্রতিবাদ করছিল। হঠাৎই গুলির শব্দে ভেঙে পড়ে সবকিছু।

কার্ক গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন এবং ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। ক্যামেরায় ধরা পড়ে রক্তাক্ত দৃশ্যগুলো, যা দীর্ঘদিন মনে গেঁথে থাকবে অনেক তরুণ রক্ষণশীল সমর্থকের কাছে। তাঁদের কাছে এখন কার্ক কেবল নেতা নন, বরং এক শহীদ।

কার্কের ভূমিকা ও মতাদর্শ

চার্লি কার্ক সবসময় বলতেন, তাঁর সমালোচকদের কাছ থেকে সহিংসতার আশঙ্কা আছে। তবুও তিনি নির্ভীকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতেন, যেখানে সাধারণত প্রগতিশীল রাজনীতির প্রভাব বেশি।

তিনি অস্ত্র বহনের অধিকারের পক্ষে, রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারক, ট্রান্সজেন্ডার অধিকারের কট্টর সমালোচক এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের অটল সমর্থক ছিলেন। তাঁর সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউ.এস.’ ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আমেরিকায় রাজনৈতিক সহিংসতার ধারাবাহিকতা

কার্কের হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতার সাম্প্রতিক উদাহরণ মাত্র। এর আগে মিনেসোটায় দুইজন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা গুলিবিদ্ধ হন, যার মধ্যে একজন মারা যান। ২০২৪ সালে ট্রাম্পের ওপরও দুইবার হামলার চেষ্টা হয়েছিল।

আরও পেছনে তাকালে দেখা যায়, সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির বাড়িতে হামলা, কিংবা ২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ায় রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানদের ওপর গুলিবর্ষণ—সবই একই প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।

বিভাজন ও উত্তেজনার বিপজ্জনক ধারা

বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকার রাজনীতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারময়। সহিংসতা আরও সহিংসতা ডেকে আনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভাজনমূলক বক্তব্য আর সহজে অস্ত্র পাওয়ার সুযোগ এই বিপদকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এখন রক্ষণশীল কর্মীরা তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—যদি ট্রাম্পের মতো উচ্চপর্যায়ের নেতাও আক্রমণ থেকে পুরোপুরি নিরাপদ না হন, তবে আসলেই কি কেউ নিরাপদ?

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর ট্রাম্প এক ভিডিও বার্তায় একে “আমেরিকার জন্য অন্ধকার মুহূর্ত” বলেছেন। তিনি সরাসরি “র‍্যাডিকাল বামপন্থীদের” দায়ী করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে তাঁর প্রশাসন দোষীদের খুঁজে বের করবে। এই বক্তব্য রক্ষণশীল মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

অন্যদিকে রিপাবলিকান কর্মী ক্রিস্টোফার রুফো সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, আইন মেনে হলেও বামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে ভেতর থেকে ভেঙে দেওয়া, গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো উচিত।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দল থেকেই অনেকে সহিংসতা নিন্দা করেছেন এবং উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসে কার্কের স্মরণে নীরবতার মুহূর্তের পরপরই আবারও পক্ষদ্বয়ের মধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়, যা দেখায় রাজনৈতিক বিভাজন এখনও কতটা তীব্র।

উটাহর গভর্নরের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া

উটাহর গভর্নর স্পেন্সার কক্স সংবাদ সম্মেলনে আবেগঘন বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ২৫০ বছর পূর্তি সামনে, অথচ দেশ এখন ভাঙা অবস্থায় আছে।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এটাই কি আমাদের ২৫০ বছরের অর্জন?”
সঙ্গে নিজেই উত্তর দেন, “আমি প্রার্থনা করি, যেন তা না হয়।”

তাঁর কণ্ঠের অনিশ্চয়তা প্রমাণ করে, আমেরিকার রাজনৈতিক সহিংসতা কমবে নাকি আরও বাড়বে—সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা।