০৮:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

উইন্ডসরের প্রাসাদে মেলানিয়া ট্রাম্পের রহস্যময় সাজ

রহস্যময় টুপি আবার আলোচনায়

মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প আবারও ফিরিয়ে এনেছেন তাঁর পরিচিত ফ্যাশন চিহ্ন — মুখ ঢেকে রাখা প্রশস্ত কিনারাযুক্ত টুপি। এবারকার টুপিটি আগের চেয়ে আরও নিচে নেমে এসে মুখমণ্ডল আড়াল করেছিল, ফলে তাঁর অভিব্যক্তি বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।

বুধবার প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়াকে উইন্ডসর ক্যাসেলে স্বাগত জানান, তখন তিনি গাঢ় ধূসর ডিওরের পোশাকে আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি জানান দেন। মাথায় ছিল গাঢ় বেগুনি রঙের ছাতার মতো টুপি, যা তাঁকে আরও আড়ালে রাখে।


ক্যামিলার সঙ্গে তুলনায় ভিন্নতা

প্রাসাদের বাগানে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কুইন ক্যামিলা। দুজনের চেহারার বৈপরীত্য ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। ক্যামিলার হালকা টুপির ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো মুখে পড়ছিল, অথচ মেলানিয়ার মুখ ঢাকা পড়েছিল টুপির গাঢ় কিনারায়। টুপির কোণাকৃতি আকার তাঁর সামরিক-স্টাইলের স্কার্টসুটকে আরও কড়া করে তোলে। আবহাওয়ার কারণে নয়, বরং বার্তা স্পষ্ট — ‘আমার দিকে তাকানোর দরকার নেই।’


সুরক্ষার আড়ালে সাজ

প্রথম নারী প্রায়ই টুপি বা বিশাল আকারের সানগ্লাসকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। জানুয়ারির প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি এমন এক প্রশস্ত টুপি পরেছিলেন, যা স্বামী ট্রাম্পকে তাঁর গালে চুম্বন দিতে বাধা দেয়। অনেকের মতে, সেটিও ছিল এক ধরনের ইঙ্গিত — চার বছর ধরে অবাঞ্ছিত নজরদারির শুরু।

এই সফরেও, যেখানে জনসম্পৃক্ততা কম রাখা হয়েছিল এবং উইন্ডসর ও লন্ডনে প্রতিবাদ হচ্ছিল, মেলানিয়া যেন আরও একবার জানালেন — তিনি আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে চান না।


রাতের সাজে চমক

তবে মেলানিয়ার ফ্যাশন প্রায়ই বিপরীত বার্তা দেয়। দিনের পোশাক যদি ছিল দৃষ্টি এড়ানোর চেষ্টা, রাতের ভোজসভায় তাঁর সাজ ছিল একেবারে নজরকাড়া।

 

সন্ধ্যার ভোজে টুপির জায়গায় এল রাজকীয় নিয়ম — শুধু মুকুট ও টিয়ারা পরিধান করেন রাজপরিবারের সদস্যরা। তাই মেলানিয়া টুপি খুললেন এবং প্রকাশ পেল তাঁর মুখ। সেই সঙ্গে তিনি পরলেন ড্যান্ডেলিয়ন হলুদ রঙের ক্যারোলিনা হেরেরা গাউন, যা একেবারেই চোখে পড়ার মতো।


পোশাকের দুঃসাহসী ধরন

ব্রিটিশ রাজকীয় ভোজসভা সাধারণত অত্যন্ত আনুষ্ঠানিক। সেখানে মেলানিয়ার কাঁধখোলা স্ট্র্যাপলেস গাউন অনেকটাই সাহসী হিসেবে ধরা হয়। যদিও গাউনটি মেঝে ছোঁয়া এবং লম্বা হাতাওয়ালা ছিল, তবে কাঁধ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত রাখা অনেকের ভ্রু কুঁচকেছে। বিশেষ করে তাঁর হালকা গোলাপি রঙের বড় বকলোয়ালা বেল্ট আরও আলোচনার জন্ম দেয়।

সেলিব্রিটি স্টাইলিস্ট মারিয়ান কুইয়ের ভাষায়, এটি ছিল ‘কিছুটা সাহসী নির্বাচন।’ অনেকে মনে করেন, মেলানিয়া ফ্যাশনের মাধ্যমে স্পষ্ট বার্তা দিতে আগ্রহী নন, বরং পরিচিত ইউরোপীয় বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করেন। কখনও তাঁর পোশাক নিছকই নীরব, আবার কখনও এতটাই অপ্রাসঙ্গিক যে বিতর্ক তৈরি হয়। যেমন ২০১৮ সালে টেক্সাসে অভিবাসী শিশুদের আটককেন্দ্র পরিদর্শনে তিনি যে কোট পরেছিলেন, তাতে লেখা ছিল — “I REALLY DON’T CARE, DO U?” পরে তাঁর মুখপাত্র ব্যাখ্যা দেন, এর পেছনে কোনো গোপন বার্তা ছিল না।


কূটনৈতিক পোশাকশৈলীর মৌলিকতা

তবুও, মেলানিয়া কূটনৈতিক পোশাকের মৌলিক শিষ্টাচার মেনে চলেন। সফরকালে আতিথেয় দেশের কোনো ফ্যাশন ব্র্যান্ডকে সম্মান জানানো ভালো দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। বুধবার তিনি ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এয়ার ফোর্স ওয়ানে ওঠার সময় পরেছিলেন লম্বা বারবেরি ট্রেঞ্চ কোট। কলার উঁচু করে পরা এই কোটের সঙ্গে ছিল বিশাল সাঁ লোরঁর সানগ্লাস। একই পোশাকে তিনি নামেন লন্ডনের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে। কোটের উড়ন্ত ভাঁজে বারবেরির স্বাক্ষরচিহ্নিত চেক প্যাটার্ন চোখে পড়ে। যদিও এই নির্বাচন পূর্বানুমেয় ছিল, তবুও এটি নিঃসন্দেহে ব্রিটিশ ঐতিহ্যকে সম্মান জানানোর ইঙ্গিত বহন করে।

উইন্ডসরের প্রাসাদে মেলানিয়া ট্রাম্পের রহস্যময় সাজ

০৫:০০:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রহস্যময় টুপি আবার আলোচনায়

মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প আবারও ফিরিয়ে এনেছেন তাঁর পরিচিত ফ্যাশন চিহ্ন — মুখ ঢেকে রাখা প্রশস্ত কিনারাযুক্ত টুপি। এবারকার টুপিটি আগের চেয়ে আরও নিচে নেমে এসে মুখমণ্ডল আড়াল করেছিল, ফলে তাঁর অভিব্যক্তি বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।

বুধবার প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়াকে উইন্ডসর ক্যাসেলে স্বাগত জানান, তখন তিনি গাঢ় ধূসর ডিওরের পোশাকে আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি জানান দেন। মাথায় ছিল গাঢ় বেগুনি রঙের ছাতার মতো টুপি, যা তাঁকে আরও আড়ালে রাখে।


ক্যামিলার সঙ্গে তুলনায় ভিন্নতা

প্রাসাদের বাগানে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কুইন ক্যামিলা। দুজনের চেহারার বৈপরীত্য ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। ক্যামিলার হালকা টুপির ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো মুখে পড়ছিল, অথচ মেলানিয়ার মুখ ঢাকা পড়েছিল টুপির গাঢ় কিনারায়। টুপির কোণাকৃতি আকার তাঁর সামরিক-স্টাইলের স্কার্টসুটকে আরও কড়া করে তোলে। আবহাওয়ার কারণে নয়, বরং বার্তা স্পষ্ট — ‘আমার দিকে তাকানোর দরকার নেই।’


সুরক্ষার আড়ালে সাজ

প্রথম নারী প্রায়ই টুপি বা বিশাল আকারের সানগ্লাসকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। জানুয়ারির প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি এমন এক প্রশস্ত টুপি পরেছিলেন, যা স্বামী ট্রাম্পকে তাঁর গালে চুম্বন দিতে বাধা দেয়। অনেকের মতে, সেটিও ছিল এক ধরনের ইঙ্গিত — চার বছর ধরে অবাঞ্ছিত নজরদারির শুরু।

এই সফরেও, যেখানে জনসম্পৃক্ততা কম রাখা হয়েছিল এবং উইন্ডসর ও লন্ডনে প্রতিবাদ হচ্ছিল, মেলানিয়া যেন আরও একবার জানালেন — তিনি আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে চান না।


রাতের সাজে চমক

তবে মেলানিয়ার ফ্যাশন প্রায়ই বিপরীত বার্তা দেয়। দিনের পোশাক যদি ছিল দৃষ্টি এড়ানোর চেষ্টা, রাতের ভোজসভায় তাঁর সাজ ছিল একেবারে নজরকাড়া।

 

সন্ধ্যার ভোজে টুপির জায়গায় এল রাজকীয় নিয়ম — শুধু মুকুট ও টিয়ারা পরিধান করেন রাজপরিবারের সদস্যরা। তাই মেলানিয়া টুপি খুললেন এবং প্রকাশ পেল তাঁর মুখ। সেই সঙ্গে তিনি পরলেন ড্যান্ডেলিয়ন হলুদ রঙের ক্যারোলিনা হেরেরা গাউন, যা একেবারেই চোখে পড়ার মতো।


পোশাকের দুঃসাহসী ধরন

ব্রিটিশ রাজকীয় ভোজসভা সাধারণত অত্যন্ত আনুষ্ঠানিক। সেখানে মেলানিয়ার কাঁধখোলা স্ট্র্যাপলেস গাউন অনেকটাই সাহসী হিসেবে ধরা হয়। যদিও গাউনটি মেঝে ছোঁয়া এবং লম্বা হাতাওয়ালা ছিল, তবে কাঁধ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত রাখা অনেকের ভ্রু কুঁচকেছে। বিশেষ করে তাঁর হালকা গোলাপি রঙের বড় বকলোয়ালা বেল্ট আরও আলোচনার জন্ম দেয়।

সেলিব্রিটি স্টাইলিস্ট মারিয়ান কুইয়ের ভাষায়, এটি ছিল ‘কিছুটা সাহসী নির্বাচন।’ অনেকে মনে করেন, মেলানিয়া ফ্যাশনের মাধ্যমে স্পষ্ট বার্তা দিতে আগ্রহী নন, বরং পরিচিত ইউরোপীয় বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করেন। কখনও তাঁর পোশাক নিছকই নীরব, আবার কখনও এতটাই অপ্রাসঙ্গিক যে বিতর্ক তৈরি হয়। যেমন ২০১৮ সালে টেক্সাসে অভিবাসী শিশুদের আটককেন্দ্র পরিদর্শনে তিনি যে কোট পরেছিলেন, তাতে লেখা ছিল — “I REALLY DON’T CARE, DO U?” পরে তাঁর মুখপাত্র ব্যাখ্যা দেন, এর পেছনে কোনো গোপন বার্তা ছিল না।


কূটনৈতিক পোশাকশৈলীর মৌলিকতা

তবুও, মেলানিয়া কূটনৈতিক পোশাকের মৌলিক শিষ্টাচার মেনে চলেন। সফরকালে আতিথেয় দেশের কোনো ফ্যাশন ব্র্যান্ডকে সম্মান জানানো ভালো দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। বুধবার তিনি ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এয়ার ফোর্স ওয়ানে ওঠার সময় পরেছিলেন লম্বা বারবেরি ট্রেঞ্চ কোট। কলার উঁচু করে পরা এই কোটের সঙ্গে ছিল বিশাল সাঁ লোরঁর সানগ্লাস। একই পোশাকে তিনি নামেন লন্ডনের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে। কোটের উড়ন্ত ভাঁজে বারবেরির স্বাক্ষরচিহ্নিত চেক প্যাটার্ন চোখে পড়ে। যদিও এই নির্বাচন পূর্বানুমেয় ছিল, তবুও এটি নিঃসন্দেহে ব্রিটিশ ঐতিহ্যকে সম্মান জানানোর ইঙ্গিত বহন করে।