হলিউড হিলসে লুকানো নিবাস
লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউড হিলসের আঁকাবাঁকা রাস্তায় গাড়ি চালালে হয়তো চোখ এড়িয়ে যাবে প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা ডেভিড লিঞ্চের দীর্ঘদিনের বাসভবন। রাস্তা থেকে দেখা যায় ব্রুটালিস্ট শৈলীর একটি ভবন—চওড়া দেয়াল, সরু খাড়া জানালা আর কোণাকৃতি ছাদ। জানুয়ারিতে ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুর পর ভক্তরা রাস্তার ধারের সিঁড়িতে ফুল রেখে গিয়েছিলেন। কয়েক কদম দূরেই ঘন সবুজের ফাঁক থেকে দেখা যায় গোলাপি রঙের আরেকটি অদ্ভুত বাড়ি। পুরো কম্পাউন্ডটি ছড়িয়ে আছে ২.৫ একর জায়গাজুড়ে।
শিল্প আর জীবনের মিশেল
ডেভিড লিঞ্চ বহু দশক ধরে এই সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন, যেখানে তিনি তৈরি করেছেন তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কিছু কাজ। গোলাপি রঙের বাড়িটি ১৯৬০-এর দশকে খ্যাতনামা স্থপতি লয়েড রাইটের (ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইটের পুত্র) নকশায় নির্মিত। আর সামনের ব্রুটালিস্ট স্টুডিও ভবনটি দর্শকেরা চিনবেন ১৯৯৭ সালের চলচ্চিত্র Lost Highway থেকে।
তাঁর মৃত্যুর পর সম্পত্তিটি এখন বাজারে আসছে ১৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যে। প্রযোজক সাব্রিনা সাদারল্যান্ড, যিনি তাঁর এস্টেটের ট্রাস্টি, পরিবারকে প্রতিনিধিত্ব করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। লিঞ্চ একাধিকবার বিয়ে ও বিচ্ছেদ করেছিলেন এবং তাঁর চার সন্তান রয়েছে।
চলচ্চিত্র, সঙ্গীত ও দৃশ্যকলা
লিঞ্চকে প্রায়ই বলা হয় এক “ভিশনারি”। তাঁর সৃষ্টিশীলতা প্রকাশ পেয়েছে অস্বাভাবিক ও রহস্যময় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সিরিজে—যেমন Twin Peaks, Mulholland Drive (২০০১) এবং Blue Velvet (১৯৮৬)। তিনি শুধু পরিচালকই ছিলেন না; তিনি ছিলেন চিত্রশিল্পী, ভাস্কর এবং সঙ্গীতশিল্পীও। একাধিক অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন, যেগুলোকে তিনি “মডার্ন ব্লুজ” বলতেন।
লিঞ্চ নিজে বলেছিলেন তাঁর বাসস্থান তাঁর শিল্পীজীবনের সম্প্রসারণ। ১৯৯৭ সালের এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, লয়েড রাইটের বাড়িতে বসবাস তাঁর জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করেছে—এমনকি তাঁর আসবাবপত্রের নকশা ও চলচ্চিত্রকর্মের ধারণাও সেখান থেকে এসেছে।
সম্পত্তির ধাপে ধাপে বিস্তার
রেকর্ড অনুযায়ী, লিঞ্চ ১৯৮৭ সালে ৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার দিয়ে তিন শোবারঘরের লয়েড রাইটের বাড়িটি কেনেন। এরপর রাইটের ছেলে এরিক লয়েড রাইটকে দিয়ে সুইমিংপুল ও পুলহাউস নির্মাণ করান।
১৯৮৯ সালে তিনি পাশের একটি দুই শোবারঘরের ব্রুটালিস্ট বাড়ি কিনলেন ৫ লাখ ৪২ হাজার ৩০০ ডলারে। ১৯৯৫ সালে তিনি আরেকটি স্টুডিও বিল্ডিং যোগ করলেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ ডলারে। সময়ের সঙ্গে আরও জমি কিনে তিনি তৈরি করেন মোট সাতটি ভবনের একটি কম্পাউন্ড।
স্থাপত্যের বিশেষত্ব
কম্পাউন্ডের মূল আকর্ষণ লয়েড রাইটের নকশা করা বাড়ি। প্রায় ২,০০০ বর্গফুটের এই বাড়ির বাইরের দেয়ালে আছে সিমেন্টের জিগজ্যাগ নকশা, ভেতরে বড় জানালা আর স্কাইলাইট। মৃত্যুর আগে এক সাক্ষাৎকারে লিঞ্চ বলেন, তিনি ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইটের চেয়ে লয়েড রাইটকেই বেশি পছন্দ করতেন—“লয়েড রাইট বেশি সরল, বেশি নির্মল, তবে সমান সুন্দর।”
স্টুডিওতে ছিল লাইব্রেরি, প্রদর্শনী কক্ষ ও পেশাদার মানের মিডিয়া প্রোডাকশনের ব্যবস্থা, যার মধ্যে সম্পাদনার সুবিধাও ছিল। এখানেই তিনি তৈরি করেছেন Mulholland Drive-এর মতো বিখ্যাত কাজ।
অভ্যন্তরীণ নকশা ও শিল্পকর্ম
রাইট-নির্মিত অংশ ছাড়া বাকি ভবনগুলোও গাঢ় ধূসর রঙের মসৃণ ভেনিসীয় প্লাস্টার দিয়ে আচ্ছাদিত। সামগ্রিকভাবে একটি কাঁচা, শিল্পঘরানার আবহ ফুটে ওঠে। ভেতরে আছে প্রাকৃতিক কাঠের কাজ ও ধাতব শিল্পকর্ম, যেগুলোর কিছু লিঞ্চ নিজেই নকশা করেছিলেন।
এখানে তিনি একাধিক ওয়ার্কশপ বানিয়েছিলেন নতুন নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করার জন্য। এমনকি মহামারির সময় তিনি এখান থেকেই নিয়মিত ইউটিউবে আবহাওয়ার খবর দিতেন।
ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা
এজেন্সির সহ-তালিকাভুক্ত এজেন্ট মার্ক সিলভার বলেন, আশা করছেন সম্পত্তিটি কোনো লিঞ্চ-ভক্ত বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কিনবে, যারা এটি আসল অবস্থায় সংরক্ষণ করবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি কেউ লয়েড রাইটের নকশাকৃত বাড়িটি ভাঙার চেষ্টা করে তবে জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। তাঁর মতে, এই বাড়িটি সহজেই একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।