জেমস কর্ডেনের ঝলমলে উপস্থিতি
ব্রডওয়েতে ইয়াসমিনা রেজার জনপ্রিয় নাটক ‘আর্ট’-এর নতুন মঞ্চায়নে জেমস কর্ডেন এমনভাবে আলো কেড়ে নিয়েছেন যে তাঁর দুই শক্তিশালী সহঅভিনেতা, ববি কানাভালে ও নীল প্যাট্রিক হ্যারিস অনেকটা ছায়ায় চলে গেছেন। কর্ডেনের চরিত্র ইভানকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন একদিকে অতি আবেগপ্রবণ শিশু-মানুষ হিসেবে, অন্যদিকে এক দয়ালু কুকুরছানার মতো বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে। মোটা, নরম টেডিবিয়ারের মতো চেহারা তাঁকে আরও আলাদা মাত্রা দিয়েছে।
নাটকের পটভূমি ও গুরুত্ব
ইয়াসমিনা রেজার এই নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৯৯৬ সালে লন্ডনে এবং দ্রুত আন্তর্জাতিক সাফল্য অর্জন করে। দুই বছর পর এটি ব্রডওয়েতেও সমানভাবে জনপ্রিয়তা পায়। নাটকটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন নাট্যকার ক্রিস্টোফার হ্যাম্পটন।
এবারের পুনর্মঞ্চায়ন বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে, কারণ ব্রডওয়েতে কৌতুক নাটক তুলনামূলকভাবে বিরল। চারপাশের দুঃসহ পরিস্থিতির মাঝেও এটি দর্শকদের দেয় মুক্তির হাসি, একই সঙ্গে বন্ধুত্বের ভাঙন ও সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে গভীর বার্তা।
মূল কাহিনি
নাটকের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তিন পুরোনো বন্ধু। তাদের মধ্যে সার্জ (নীল প্যাট্রিক হ্যারিস) একজন সফল চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, যিনি কিনেছেন এক আধুনিক মিনিমালিস্ট চিত্রকর্ম। যখন তিনি এটি দেখান মার্ককে (ববি কানাভালে), মার্ক হতবাক ও বিরক্ত হয়ে ওঠেন। আরও বিস্মিত হন তিনি যখন জানতে পারেন ছবিটির দাম ৩ লাখ ডলার।
এই তুচ্ছ ঘটনাই ধীরে ধীরে বন্ধুত্বে তিক্ততা তৈরি করে। মার্ক তাঁর রাগে ইভানকে (জেমস কর্ডেন) পাশে চান। কিন্তু ইভান, যিনি বিয়ের আগে নানা দুশ্চিন্তায় আছেন, শান্তিপ্রিয়তার চেষ্টা চালান এবং পক্ষ নিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে বিতর্ক আরও তীব্র হয়।
অভিনয়ের শক্তি
পরিচালক স্কট এলিস নাটকটিকে প্রাণবন্ত করেছেন নিখুঁত নির্দেশনায়। নীল প্যাট্রিক হ্যারিস সার্জ চরিত্রে একধরনের আত্মম্ভরী ভাব তুলে ধরেছেন। তিনি শিল্পের রসিক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে চান এবং বন্ধুদের রুচি নিয়ে ব্যঙ্গ করেন। ববি কানাভালে মার্ক চরিত্রে শক্তিশালী পৌরুষ ও অহংকার ফুটিয়ে তুলেছেন, যার আড়ালে লুকিয়ে আছে পুরোনো বন্ধুর পরিবর্তন মেনে নিতে না পারার কষ্ট।
জেমস কর্ডেনের উজ্জ্বলতর চরিত্র
তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছেন কর্ডেন। ইভান চরিত্রে তাঁর কৌতুকাভিনয় অনন্য। বেকার জীবনের ব্যর্থতা থেকে শুরু করে বিয়ের আগে নানা ঝামেলা নিয়ে তাঁর একক সংলাপ দর্শকদের হাসির ঝড় তুলেছে। আবার কখনো যখন তিনি বন্ধুত্বের ভাঙন ও একাকীত্বের কথা বলেন, তখন কৌতুকের আড়ালে মিশে যায় বেদনা।
বিশেষ করে এক পর্যায়ে সার্জের প্রশ্নে বারবার ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গিতে ‘হ্যাঁ’ বলে তিনি যে হাস্যরস সৃষ্টি করেছেন, তা দর্শকদের জন্য স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
নাটকের সার্থকতা
‘আর্ট’-এর গল্প ছোট ও সহজ, কিন্তু অভিনয়ের শক্তিতেই এটি মহিমান্বিত। তিন চরিত্রের তর্ক-বিতর্ক, বন্ধুত্বের টানাপোড়েন এবং কৌতুকের ঝাঁজ মিলে তৈরি হয়েছে এক গভীর অথচ বিনোদনপূর্ণ সন্ধ্যা। আর এই সবকিছুর কেন্দ্রে জেমস কর্ডেন উপহার দিয়েছেন অভিনয়ের এক মাস্টারক্লাস।