০৩:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভাত না রুটি, কী খাওয়া উচিত?

ভাত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি রুটি, মানুষের মধ্যে এই নিয়ে বিতর্ক অনেক সময়ই দেখা যায়।

অনেকেই রাতের খাবারে ভাত এবং রুটি দুটোই খান, তাদের কাছে এটিকে এক ধরনের ভারসাম্যও মনে হয়।

বাংলাদেশ তো বটেই, ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ বা ওডিশার মতো রাজ্যে ভাত মানুষের প্রধান খাবার। আবার, পাঞ্জাব বা মধ্যপ্রদেশসহ কিছু এলাকায় মানুষ রুটি পছন্দ করেন। অনেকে আবার ভাতের বদলে রুটি খাওয়া স্বাস্থ্যকর মনে করেন।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এই বিতর্ককে শুধু ভাত আর রুটির ভিত্তিতে দেখছেন না।

খাবারের প্লেটে রুটি থাকবে নাকি ভাত থাকবে- তা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে।

কীভাবে খাচ্ছেন, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ

খাবারের থালায় ভাত থাকুক বা রুটি, দুটোতেই কার্বোহাইড্রেট থাকে।

সাধারণভাবে মনে করা হয় রুটিতে ভাতের তুলনায় কম কার্বোহাইড্রেট থাকে, তাই স্বাস্থ্যের দিক থেকে রুটি বেশি ভালো।

স্বাস্থ্য বিষয়ক নেটওয়ার্ক ‘নিউট্রিফাই টুডে’র ডায়েটিক্সের প্রধান এবং মুম্বাই-ভিত্তিক ডায়েটিশিয়ান নাজনীন হুসেন বলছেন, “আপনি যদি মোটা আটা বা বেশি ফাইবার বা আঁশ আছে এমন রুটি খান, তাহলে ভালো, কিন্তু যদি পুরোপুরি মিহি ময়দা দিয়ে বানানো রুটি খান, তাহলে সেটা ভাতের মতোই। এটি খাওয়ার পর শরীরে শর্করার মাত্রা বা সুগার দ্রুত বেড়ে যায়।”

তিনি বলেন, বেশি পালিশ করা চিকন চাল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, তবে পালিশ ছাড়া ছোট দানার চাল তুলনামূলক ভালো।

ফাইবারের কথা মাথায় রেখে ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানরা অনেক সময় মানুষকে বাদামি চাল (ব্রাউন রাইস) বা পালিশ ছাড়া চাল খাওয়ার পরামর্শ দেন।

আরেকটি পরামর্শ দেওয়া হয়, তা হচ্ছে ডাল, দই বা সবজির সঙ্গে ভাত খাওয়া। খিচুড়ি বা পোলাও বানিয়ে খেলে এটাও শরীরের জন্য ভালো।

দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তার এম. ওয়ালি বলেন, “আজ আমরা যেভাবে চিকন আটা বা ময়দা খাচ্ছি, সেটা চিনি আর লবণের মতোই সাদা বিষে পরিণত হচ্ছে।”

“আমাদের খাদ্যাভ্যাসে এটাও ভুল যে আমরা ভাত বা রুটি বেশি খাই এবং সবজি কম খাই। আপনি ভাতের সঙ্গে বেশি সবজি খেলে এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স উন্নত হয়, অর্থাৎ ভাত থেকে তৈরি হওয়া শর্করা বা চিনি শরীরে ধীরে ধীরে মিশে যায়। এভাবে ভাত রুটির চেয়ে ভালো হয়ে ওঠে।”

ডাক্তার ওয়ালি বলেন, যদি রুটির আটা শাকপাতা বা লাউ দিয়ে মেখে নেওয়া যায়, অর্থাৎ শুধু ময়দা বা আটার রুটি না হয়, তবে সেটাও ভালো ফল দিতে পারে।

ভাত আর রুটির মৌলিক পার্থক্য হলো, যাদের ভারী মাত্রার শারীরিক পরিশ্রম বেশি করতে হয় বা বেশি শক্তির দরকার, তাদের জন্য ভাত ভালো।

কিন্তু যদি কেউ অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে চান বা খুব বেশি খেতে না চান, তাহলে আটার রুটি একটি ভালো বিকল্প, কারণ এতে বেশি ফাইবার থাকে।

এতে পেট দীর্ঘ সময় ভরা থাকে।

দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) এর ডায়েটিশিয়ান মালা মনরাল বলেন, “রুটি যদি ভালো প্রোটিনের (আমিষ) সঙ্গে খাওয়া যায়, তবে তা আরও ভালো। কেউ যদি নিরামিষভোজী হন তারা বিকল্প হিসেবে রুটির সঙ্গে সবজি বা ডাল খেতে পারেন।”

মালা মনরাল বলেন, “আপনার কী খাওয়া উচিত, সেটা আপনার কাজ এবং জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে। যদি কারও বসে থাকার কাজ হয়, তবে তার কম ক্যালোরির প্রয়োজন। আমরা এমন মানুষদের রুটি খেতে বলি, কারণ তারা বেশি ভাত খেলে মোটা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।”

মালা মনরাল বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তির শারীরিক সক্রিয়তা এবং বয়সের উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরির দরকার হয়। ধরুন কারও ১৬০০ কিলোক্যালোরি দরকার, তবে আমরা পরামর্শ দেই যাতে এর ৬০ শতাংশ শর্করা জাতীয় খাবার থেকে আসে, ২০ শতাংশ আমিষ এবং প্রায় ২০ শতাংশ ফ্যাট বা চর্বি থেকে আসে।”

এতে কার্বোহাইড্রেটের জন্য রুটি, ভাত, ইডলি, উপমা এমন খাবার থাকে, আর আমিষের জন্য ডাল বা আমিষভোজীদের ক্ষেত্রে ডিমের মতো খাবার থাকে।

একজন ব্যক্তির ভাত খাওয়া উচিত নাকি রুটি খাওয়া উচিত তা তার স্বাস্থ্যের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে।

সাধারণত ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করার মাত্রার সমস্যা থাকা রোগীদের ভাত না খাওয়ার এবং বেশি আঁশ বা ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ফ্রিজে রাখা ভাত ফাইবার বা আঁশের দিক থেকে তুলনামূলক ভালো বলে বিবেচিত হয়।

নাজনীন বলেন, “ভাত ফ্রিজে রাখলে এর রেসিস্ট্যান্স স্টার্চ ফাইবারে রূপান্তরিত হয়। ফলে খাওয়ার সময় হঠাৎ শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় না।”

খাবার কি অঞ্চলের ভিত্তিতেও নির্ধারিত হয়?

ধারণা করা হয়, যে ছোটবেলা থেকে আমরা যা খেতে অভ্যস্ত তা সাধারণত আমাদের জন্য হজম করা সহজ হয় এবং সে খাবারই আমাদেরকে বেশি তৃপ্তি দেয়।

নাজনীন হুসেন বলেন, “একটি নির্দিষ্ট এলাকায় যা উৎপাদন হয়, তা সেই এলাকার প্রধান খাবার হয়ে ওঠে এবং মানুষেরও সে ধরনের খাবার খাওয়া উচিত।”

যেমন কাশ্মীরের মানুষের জন্য ভাত প্রধান খাবার। তাদের জন্য রুটিকে ভাতের চেয়ে ভালো বলা যায় না।

ড. ওয়ালি বলেন, “আমি দেখি অনেক জায়গায় মানুষ রুটি ঠিক রান্না করতেও জানেন না। আপনি ভারতে দেখবেন, বেশিরভাগ মানুষ ভাত খান। দক্ষিণ ভারতে তো ডায়াবেটিস রোগীরাও ভাত খান। তবে এই ভাতে নানা কিছু মিশিয়ে রান্না করা হয়, যাতে এটি হজম করার জন্য অগ্ন্যাশয়ের উপর খুব বেশি চাপ না পড়ে।”

 BBC News বাংলা

ভাত না রুটি, কী খাওয়া উচিত?

১২:২০:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভাত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি রুটি, মানুষের মধ্যে এই নিয়ে বিতর্ক অনেক সময়ই দেখা যায়।

অনেকেই রাতের খাবারে ভাত এবং রুটি দুটোই খান, তাদের কাছে এটিকে এক ধরনের ভারসাম্যও মনে হয়।

বাংলাদেশ তো বটেই, ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ বা ওডিশার মতো রাজ্যে ভাত মানুষের প্রধান খাবার। আবার, পাঞ্জাব বা মধ্যপ্রদেশসহ কিছু এলাকায় মানুষ রুটি পছন্দ করেন। অনেকে আবার ভাতের বদলে রুটি খাওয়া স্বাস্থ্যকর মনে করেন।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এই বিতর্ককে শুধু ভাত আর রুটির ভিত্তিতে দেখছেন না।

খাবারের প্লেটে রুটি থাকবে নাকি ভাত থাকবে- তা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে।

কীভাবে খাচ্ছেন, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ

খাবারের থালায় ভাত থাকুক বা রুটি, দুটোতেই কার্বোহাইড্রেট থাকে।

সাধারণভাবে মনে করা হয় রুটিতে ভাতের তুলনায় কম কার্বোহাইড্রেট থাকে, তাই স্বাস্থ্যের দিক থেকে রুটি বেশি ভালো।

স্বাস্থ্য বিষয়ক নেটওয়ার্ক ‘নিউট্রিফাই টুডে’র ডায়েটিক্সের প্রধান এবং মুম্বাই-ভিত্তিক ডায়েটিশিয়ান নাজনীন হুসেন বলছেন, “আপনি যদি মোটা আটা বা বেশি ফাইবার বা আঁশ আছে এমন রুটি খান, তাহলে ভালো, কিন্তু যদি পুরোপুরি মিহি ময়দা দিয়ে বানানো রুটি খান, তাহলে সেটা ভাতের মতোই। এটি খাওয়ার পর শরীরে শর্করার মাত্রা বা সুগার দ্রুত বেড়ে যায়।”

তিনি বলেন, বেশি পালিশ করা চিকন চাল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, তবে পালিশ ছাড়া ছোট দানার চাল তুলনামূলক ভালো।

ফাইবারের কথা মাথায় রেখে ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানরা অনেক সময় মানুষকে বাদামি চাল (ব্রাউন রাইস) বা পালিশ ছাড়া চাল খাওয়ার পরামর্শ দেন।

আরেকটি পরামর্শ দেওয়া হয়, তা হচ্ছে ডাল, দই বা সবজির সঙ্গে ভাত খাওয়া। খিচুড়ি বা পোলাও বানিয়ে খেলে এটাও শরীরের জন্য ভালো।

দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তার এম. ওয়ালি বলেন, “আজ আমরা যেভাবে চিকন আটা বা ময়দা খাচ্ছি, সেটা চিনি আর লবণের মতোই সাদা বিষে পরিণত হচ্ছে।”

“আমাদের খাদ্যাভ্যাসে এটাও ভুল যে আমরা ভাত বা রুটি বেশি খাই এবং সবজি কম খাই। আপনি ভাতের সঙ্গে বেশি সবজি খেলে এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স উন্নত হয়, অর্থাৎ ভাত থেকে তৈরি হওয়া শর্করা বা চিনি শরীরে ধীরে ধীরে মিশে যায়। এভাবে ভাত রুটির চেয়ে ভালো হয়ে ওঠে।”

ডাক্তার ওয়ালি বলেন, যদি রুটির আটা শাকপাতা বা লাউ দিয়ে মেখে নেওয়া যায়, অর্থাৎ শুধু ময়দা বা আটার রুটি না হয়, তবে সেটাও ভালো ফল দিতে পারে।

ভাত আর রুটির মৌলিক পার্থক্য হলো, যাদের ভারী মাত্রার শারীরিক পরিশ্রম বেশি করতে হয় বা বেশি শক্তির দরকার, তাদের জন্য ভাত ভালো।

কিন্তু যদি কেউ অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে চান বা খুব বেশি খেতে না চান, তাহলে আটার রুটি একটি ভালো বিকল্প, কারণ এতে বেশি ফাইবার থাকে।

এতে পেট দীর্ঘ সময় ভরা থাকে।

দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) এর ডায়েটিশিয়ান মালা মনরাল বলেন, “রুটি যদি ভালো প্রোটিনের (আমিষ) সঙ্গে খাওয়া যায়, তবে তা আরও ভালো। কেউ যদি নিরামিষভোজী হন তারা বিকল্প হিসেবে রুটির সঙ্গে সবজি বা ডাল খেতে পারেন।”

মালা মনরাল বলেন, “আপনার কী খাওয়া উচিত, সেটা আপনার কাজ এবং জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে। যদি কারও বসে থাকার কাজ হয়, তবে তার কম ক্যালোরির প্রয়োজন। আমরা এমন মানুষদের রুটি খেতে বলি, কারণ তারা বেশি ভাত খেলে মোটা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।”

মালা মনরাল বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তির শারীরিক সক্রিয়তা এবং বয়সের উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরির দরকার হয়। ধরুন কারও ১৬০০ কিলোক্যালোরি দরকার, তবে আমরা পরামর্শ দেই যাতে এর ৬০ শতাংশ শর্করা জাতীয় খাবার থেকে আসে, ২০ শতাংশ আমিষ এবং প্রায় ২০ শতাংশ ফ্যাট বা চর্বি থেকে আসে।”

এতে কার্বোহাইড্রেটের জন্য রুটি, ভাত, ইডলি, উপমা এমন খাবার থাকে, আর আমিষের জন্য ডাল বা আমিষভোজীদের ক্ষেত্রে ডিমের মতো খাবার থাকে।

একজন ব্যক্তির ভাত খাওয়া উচিত নাকি রুটি খাওয়া উচিত তা তার স্বাস্থ্যের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে।

সাধারণত ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করার মাত্রার সমস্যা থাকা রোগীদের ভাত না খাওয়ার এবং বেশি আঁশ বা ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ফ্রিজে রাখা ভাত ফাইবার বা আঁশের দিক থেকে তুলনামূলক ভালো বলে বিবেচিত হয়।

নাজনীন বলেন, “ভাত ফ্রিজে রাখলে এর রেসিস্ট্যান্স স্টার্চ ফাইবারে রূপান্তরিত হয়। ফলে খাওয়ার সময় হঠাৎ শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় না।”

খাবার কি অঞ্চলের ভিত্তিতেও নির্ধারিত হয়?

ধারণা করা হয়, যে ছোটবেলা থেকে আমরা যা খেতে অভ্যস্ত তা সাধারণত আমাদের জন্য হজম করা সহজ হয় এবং সে খাবারই আমাদেরকে বেশি তৃপ্তি দেয়।

নাজনীন হুসেন বলেন, “একটি নির্দিষ্ট এলাকায় যা উৎপাদন হয়, তা সেই এলাকার প্রধান খাবার হয়ে ওঠে এবং মানুষেরও সে ধরনের খাবার খাওয়া উচিত।”

যেমন কাশ্মীরের মানুষের জন্য ভাত প্রধান খাবার। তাদের জন্য রুটিকে ভাতের চেয়ে ভালো বলা যায় না।

ড. ওয়ালি বলেন, “আমি দেখি অনেক জায়গায় মানুষ রুটি ঠিক রান্না করতেও জানেন না। আপনি ভারতে দেখবেন, বেশিরভাগ মানুষ ভাত খান। দক্ষিণ ভারতে তো ডায়াবেটিস রোগীরাও ভাত খান। তবে এই ভাতে নানা কিছু মিশিয়ে রান্না করা হয়, যাতে এটি হজম করার জন্য অগ্ন্যাশয়ের উপর খুব বেশি চাপ না পড়ে।”

 BBC News বাংলা