০৮:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মাইনাস টু ফর্মুলা: রিজভীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

মাইনাস টু ফর্মুলার ইতিহাস

বাংলাদেশের রাজনীতিতে “মাইনাস টু ফর্মুলা” একসময় ছিল বহুল আলোচিত বিষয়। ২০০৭ সালের ১/১১ রাজনৈতিক সংকটের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সেনাসমর্থিত শাসকগোষ্ঠী মূলত দেশের দুই প্রধান দলীয় নেত্রী—বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। সেই সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচলিত হয়ে যায় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নামটি। এর উদ্দেশ্য ছিল দুই শীর্ষ নেত্রীকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা।

রিজভীর সাম্প্রতিক মন্তব্য

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেছেন, বিএনপিকে নির্মূল করার জন্য নতুন করে কাহিনি সাজানো হচ্ছে এবং কালো প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তার মতে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মহল বিএনপিকে কলঙ্কিত করতে নতুন প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০০৭ সালের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তখনো বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে টার্গেট করা হয়েছিল।

 

দমন-পীড়নের ধারাবাহিকতা

রিজভীর দাবি, ক্ষমতায় থাকা দল বারবার বিরোধীদের দমন-পীড়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলাতে চেয়েছে। তার ভাষায়, “একটি দল ক্ষমতায় ফিরে এসে গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে ফেলার চেষ্টা করে। তখন ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষ এর বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। বিএনপি ও তার মিত্ররা রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করে।” তার বক্তব্যে স্পষ্ট, বর্তমানেও একই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে।

নতুন কাহিনি তৈরির অভিযোগ

আগস্ট-পরবর্তী সময়ে “মাইনাস টু ফর্মুলা” বাস্তবায়নে ব্যর্থতার আড়াল করার জন্য বিএনপির বিরুদ্ধে নতুন কাহিনি বানানো হচ্ছে বলে রিজভী অভিযোগ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিএনপিকে ‘মাইনাস’ করা সম্ভব নয়, কারণ দলটি দেশের মাটি ও মানুষের গভীরে প্রোথিত।

শেখ হাসিনা ফেরার প্রসঙ্গ ও হুঁশিয়ারি

রিজভী সতর্ক করে বলেন, যারা বিএনপি-বিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত, তারা শেখ হাসিনা ফিরে এলে তার রোষ থেকে রেহাই পাবে না। তিনি নিউইয়র্কে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনাকে এর প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

নির্বাচন ও সমঝোতার সমীকরণ

তার অভিযোগ, কিছু রাজনৈতিক পক্ষ ফ্যাসিবাদী শক্তির সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনী বাধা অতিক্রমের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “যদি শেখ হাসিনা ফেরত আসেন, তাহলে আপনারাও রক্ষা পাবেন না। গণতান্ত্রিক শক্তির অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগে যেন ফ্যাসিবাদ না ফিরে আসে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে, তারা শেষ পর্যন্ত নিজেদের জন্য অমঙ্গল ডেকে আনবে।”

বিশ্লেষণ: অতীতের ছায়া বর্তমান রাজনীতিতে

রিজভীর মন্তব্য স্পষ্ট করে যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো ১/১১-র অভিজ্ঞতা এবং মাইনাস টু ফর্মুলার প্রভাব বিরাজমান। তার বক্তব্যে বোঝা যায়, বিএনপি মনে করছে বর্তমান পরিস্থিতিও এক ধরনের পুনরাবৃত্তি—যেখানে আবারো কালো প্রচারণা, প্রপাগান্ডা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে।

তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—রাজনীতির মাঠে এই অভিযোগ কতটা বাস্তব এবং কতটা কৌশলগত বক্তব্য। বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি চাইবে নিজেদের সমর্থকদের সংগঠিত রাখতে এবং অতীতের দমন-পীড়নের স্মৃতি সামনে এনে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে ধরতে। অন্যদিকে শাসকগোষ্ঠী চাইবে সেই অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রচারণা হিসেবে চিত্রিত করতে।

মাইনাস টু ফর্মুলা একসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছিল। রিজভীর সাম্প্রতিক মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, সেই ইতিহাস এখনো নতুন রূপে ফিরে আসছে রাজনৈতিক আলোচনায়। এটি কেবল অতীতের স্মৃতি নয়; বরং চলমান ক্ষমতার লড়াইয়েও একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। বিরোধী দল বিএনপির জন্য এই প্রসঙ্গ আবারো রাজনৈতিক প্রতিরোধের হাতিয়ার, আর শাসক পক্ষের জন্য এটি একটি অস্বস্তিকর অভিযোগ।

মাইনাস টু ফর্মুলা: রিজভীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

০১:০৩:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মাইনাস টু ফর্মুলার ইতিহাস

বাংলাদেশের রাজনীতিতে “মাইনাস টু ফর্মুলা” একসময় ছিল বহুল আলোচিত বিষয়। ২০০৭ সালের ১/১১ রাজনৈতিক সংকটের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সেনাসমর্থিত শাসকগোষ্ঠী মূলত দেশের দুই প্রধান দলীয় নেত্রী—বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। সেই সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচলিত হয়ে যায় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নামটি। এর উদ্দেশ্য ছিল দুই শীর্ষ নেত্রীকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা।

রিজভীর সাম্প্রতিক মন্তব্য

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেছেন, বিএনপিকে নির্মূল করার জন্য নতুন করে কাহিনি সাজানো হচ্ছে এবং কালো প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তার মতে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মহল বিএনপিকে কলঙ্কিত করতে নতুন প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০০৭ সালের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তখনো বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে টার্গেট করা হয়েছিল।

 

দমন-পীড়নের ধারাবাহিকতা

রিজভীর দাবি, ক্ষমতায় থাকা দল বারবার বিরোধীদের দমন-পীড়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলাতে চেয়েছে। তার ভাষায়, “একটি দল ক্ষমতায় ফিরে এসে গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে ফেলার চেষ্টা করে। তখন ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষ এর বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। বিএনপি ও তার মিত্ররা রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করে।” তার বক্তব্যে স্পষ্ট, বর্তমানেও একই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে।

নতুন কাহিনি তৈরির অভিযোগ

আগস্ট-পরবর্তী সময়ে “মাইনাস টু ফর্মুলা” বাস্তবায়নে ব্যর্থতার আড়াল করার জন্য বিএনপির বিরুদ্ধে নতুন কাহিনি বানানো হচ্ছে বলে রিজভী অভিযোগ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিএনপিকে ‘মাইনাস’ করা সম্ভব নয়, কারণ দলটি দেশের মাটি ও মানুষের গভীরে প্রোথিত।

শেখ হাসিনা ফেরার প্রসঙ্গ ও হুঁশিয়ারি

রিজভী সতর্ক করে বলেন, যারা বিএনপি-বিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত, তারা শেখ হাসিনা ফিরে এলে তার রোষ থেকে রেহাই পাবে না। তিনি নিউইয়র্কে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনাকে এর প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

নির্বাচন ও সমঝোতার সমীকরণ

তার অভিযোগ, কিছু রাজনৈতিক পক্ষ ফ্যাসিবাদী শক্তির সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনী বাধা অতিক্রমের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “যদি শেখ হাসিনা ফেরত আসেন, তাহলে আপনারাও রক্ষা পাবেন না। গণতান্ত্রিক শক্তির অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগে যেন ফ্যাসিবাদ না ফিরে আসে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে, তারা শেষ পর্যন্ত নিজেদের জন্য অমঙ্গল ডেকে আনবে।”

বিশ্লেষণ: অতীতের ছায়া বর্তমান রাজনীতিতে

রিজভীর মন্তব্য স্পষ্ট করে যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনো ১/১১-র অভিজ্ঞতা এবং মাইনাস টু ফর্মুলার প্রভাব বিরাজমান। তার বক্তব্যে বোঝা যায়, বিএনপি মনে করছে বর্তমান পরিস্থিতিও এক ধরনের পুনরাবৃত্তি—যেখানে আবারো কালো প্রচারণা, প্রপাগান্ডা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে।

তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—রাজনীতির মাঠে এই অভিযোগ কতটা বাস্তব এবং কতটা কৌশলগত বক্তব্য। বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি চাইবে নিজেদের সমর্থকদের সংগঠিত রাখতে এবং অতীতের দমন-পীড়নের স্মৃতি সামনে এনে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে ধরতে। অন্যদিকে শাসকগোষ্ঠী চাইবে সেই অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রচারণা হিসেবে চিত্রিত করতে।

মাইনাস টু ফর্মুলা একসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছিল। রিজভীর সাম্প্রতিক মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, সেই ইতিহাস এখনো নতুন রূপে ফিরে আসছে রাজনৈতিক আলোচনায়। এটি কেবল অতীতের স্মৃতি নয়; বরং চলমান ক্ষমতার লড়াইয়েও একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। বিরোধী দল বিএনপির জন্য এই প্রসঙ্গ আবারো রাজনৈতিক প্রতিরোধের হাতিয়ার, আর শাসক পক্ষের জন্য এটি একটি অস্বস্তিকর অভিযোগ।