০৪:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
আলঝেইমার শনাক্তে নতুন দিগন্ত—রক্ত পরীক্ষায় যুগান্তকারী সাফল্য মেক্সিকোতে দুর্যোগ—তীব্র বৃষ্টিপাত ও বন্যায় মৃত ৬৪, নিখোঁজ ৬৫ জন          কেনিয়ার সংসদ পাস করল ক্রিপ্টো আইন—বিনিয়োগ ও ডিজিটাল সম্পদের জন্য নতুন দিগন্ত ওয়াশিংটনে ট্রাম্প–জেলেনস্কি বৈঠক ভারতের বিহার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন: আসন বণ্টনে এনডিএ ঐকমত্য—বিজেপি ও জেডিইউ ১০১ করে, চিরাগের দখলে ২৯ ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সতর্কতা মালয়েশিয়ায় ফ্লু–উদ্বেগ: পেনাংয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সতর্কতা জারি ও টিকার ওপর জোর অভিযোগ ‘মিথ্যা’, সাবেক সহকারীর বিরুদ্ধে বাস্টা রাইমসের পাল্টা মামলা জাপানে ভালুকের আনাগোনা রেকর্ড, বাড়ছে সতর্কতা ভূতাপ্পর্ষে চীন–আইসল্যান্ড জোট, লক্ষ্য পরিচ্ছন্ন তাপ

কেন ভারতের ফিল্ডিং সংস্কৃতি সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধাক্কা খেল

দুর্দান্ত ব্যাটিং ও বোলিং, কিন্তু ফিল্ডিংয়ে ভরাডুবি

এশিয়া কাপে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতেছে ভারত। অভিষেক শর্মারা ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন, আবার কুলদীপ যাদবরা স্পিনে প্রতিপক্ষকে বেঁধে রেখেছেন। তবু এমন দুর্দান্ত দলের খেলা বারবার খারাপ ফিল্ডিংয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হয়েছে। চলতি টুর্নামেন্টেই ভারত ফেলেছে অন্তত ১২টি ক্যাচ।

পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরে ৬ উইকেটে জিতলেও চারটি ক্যাচ ফেলে দেয় ভারত। পরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে সাইফ হাসান একাধিক সুযোগ পান—৪০, ৬৫, ৬৬ ও ৬৭ রানে বেঁচে থাকা এর উদাহরণ।

দীর্ঘদিন ধরেই একই সমস্যা

কেবল এশিয়া কাপেই নয়, মৌসুম জুড়েই ভারতের ফিল্ডিং নিয়ে সমালোচনা চলছে। ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে জিতলেও ভারত চারটি ক্যাচ ফেলেছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়—পাঁচ ম্যাচে ২৩টি ক্যাচ হাতছাড়া হয়, যা ভারতের ইতিহাসে কোনো সিরিজে সর্বোচ্চ।

৫ মাসে কোনো ম্যাচ না খেলেও র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে উঠলেন ভারতীয় ওপেনার

ফিটনেস বাড়লেও অনুশীলন কম

এখনকার খেলোয়াড়রা আগের চেয়ে অনেক বেশি ফিট। কিন্তু কেন ফিল্ডিংয়ে উন্নতি হচ্ছে না? ভারতের সাবেক ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর মনে করেন, এর মূল কারণ অনুশীলনের ঘাটতি। তার মতে, “সবাই ব্যাটিং আর জিম নিয়ে ব্যস্ত। ফিল্ডিংয়ের জন্য সময় কমে গেছে। এখন অনুশীলনে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট ফিল্ডিং হয়, যা একেবারেই যথেষ্ট নয়।”

এশিয়া কাপে ভারতের ক্যাচিং দক্ষতা মাত্র ৬৭.৬ শতাংশ। আট দলের মধ্যে তারা কেবল হংকংয়ের ওপরে আছে।

কেন ফিল্ডিং উপেক্ষিত?

শ্রীধরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, খেলোয়াড়রা ছক্কা মারলে তারকা হন, ভালো ক্যাচ ধরলে নয়। ছক্কার ওপর নির্ভর করেই তারা গ্রেড-এ চুক্তি বা কোটি টাকার আইপিএল অফার পান। ফলে ব্যাটিং অনুশীলনেই সময় ব্যয় হয় বেশি।

England beat India, England won by 5 wickets

ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে ভারতের ক্যাচ ধরার হার ছিল ৬৬.২ শতাংশ, যেখানে ইংল্যান্ডের ছিল ৭৮.৫ শতাংশ। শ্রীধরের মতে, ভারতীয় উইকেটে স্পিনাররা এতটাই আধিপত্য বিস্তার করেন যে স্লিপ ফিল্ডারদের তেমন সুযোগ আসে না। ফলে ফিল্ডিং পজিশনে অভিজ্ঞতা তৈরি হয় না।

পরিসংখ্যান বলছে পতনের গল্প

২০২৩ সালের শুরু থেকে টেস্ট ক্রিকেটে ১২টি পূর্ণ সদস্য দেশের মধ্যে ক্যাচ ধরার দক্ষতায় ভারত রয়েছে দশম স্থানে (৭৮.১ শতাংশ)। ওয়ানডেতেও একই অবস্থা—ভারত ৭৫.৬ শতাংশ দক্ষতা নিয়ে দশম স্থানে।

আইপিএলেও একই চিত্র

জাতীয় দলই শুধু নয়, ২০২৫ আইপিএলেও বহু ক্যাচ হাতছাড়া হয়েছে। শ্রীধরের ভাষায়, “আইপিএল দলগুলোও কেবল ব্যাটিং অনুশীলনে মনোযোগ দেয়। ২০ জন নেট বোলার, ছয়-সাতজন থ্রোডাউন স্পেশালিস্ট থাকে, আর ব্যাটসম্যানরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছক্কা মারতে ব্যস্ত থাকে। ফিল্ডিং তাদের কাছে গৌণ বিষয়, কারণ এটা বিজ্ঞাপন বা রাজস্ব আনে না।”

Why India's fielding culture has taken a huge hit | Cricket

থ্রোডাউন সংস্কৃতির প্রভাব

ব্যাটিং অনুশীলনে অতিরিক্ত থ্রোডাউনের কারণে ব্যাটসম্যানরা নিজেরাই বল করাও বন্ধ করেছেন। একসময় শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি কিংবা বিরেন্দর শেবাগ অনুশীলনে কয়েক ওভার বল করতেন। এখনকার তরুণ ব্যাটসম্যানরা তা করছেন না। শ্রীধর লিখেছেন, এ কারণেই অলরাউন্ডারও কমে গেছে।

অভিষেক শর্মার মতো কেউ কেউ বোলিং করেন, কিন্তু শুভমন গিল, যশস্বী জয়সওয়াল বা সাই সুদর্শনরা বল হাতে নেন না। ফলে দল বিশেষায়িত ব্যাটসম্যান দিয়ে ভরে উঠছে।

ব্যাটিং-প্রধান সংস্কৃতি, ফিল্ডিং উপেক্ষিত

সাবেক কোচের মতে, খেলোয়াড়দের যতই ব্যাটিংয়ে গুরুত্ব দেওয়া হোক না কেন, ফিল্ডিং অনুশীলনেও যথেষ্ট সময় ব্যয় করা জরুরি। “ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাট করলে দলের জায়গা নিশ্চিত হয়, ঠিক আছে। কিন্তু বস, ফিল্ডিংও করতে হবে,” বলেন শ্রীধর।

জনপ্রিয় সংবাদ

আলঝেইমার শনাক্তে নতুন দিগন্ত—রক্ত পরীক্ষায় যুগান্তকারী সাফল্য

কেন ভারতের ফিল্ডিং সংস্কৃতি সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধাক্কা খেল

০৪:৪১:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দুর্দান্ত ব্যাটিং ও বোলিং, কিন্তু ফিল্ডিংয়ে ভরাডুবি

এশিয়া কাপে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতেছে ভারত। অভিষেক শর্মারা ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন, আবার কুলদীপ যাদবরা স্পিনে প্রতিপক্ষকে বেঁধে রেখেছেন। তবু এমন দুর্দান্ত দলের খেলা বারবার খারাপ ফিল্ডিংয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হয়েছে। চলতি টুর্নামেন্টেই ভারত ফেলেছে অন্তত ১২টি ক্যাচ।

পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরে ৬ উইকেটে জিতলেও চারটি ক্যাচ ফেলে দেয় ভারত। পরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে সাইফ হাসান একাধিক সুযোগ পান—৪০, ৬৫, ৬৬ ও ৬৭ রানে বেঁচে থাকা এর উদাহরণ।

দীর্ঘদিন ধরেই একই সমস্যা

কেবল এশিয়া কাপেই নয়, মৌসুম জুড়েই ভারতের ফিল্ডিং নিয়ে সমালোচনা চলছে। ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে জিতলেও ভারত চারটি ক্যাচ ফেলেছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়—পাঁচ ম্যাচে ২৩টি ক্যাচ হাতছাড়া হয়, যা ভারতের ইতিহাসে কোনো সিরিজে সর্বোচ্চ।

৫ মাসে কোনো ম্যাচ না খেলেও র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে উঠলেন ভারতীয় ওপেনার

ফিটনেস বাড়লেও অনুশীলন কম

এখনকার খেলোয়াড়রা আগের চেয়ে অনেক বেশি ফিট। কিন্তু কেন ফিল্ডিংয়ে উন্নতি হচ্ছে না? ভারতের সাবেক ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর মনে করেন, এর মূল কারণ অনুশীলনের ঘাটতি। তার মতে, “সবাই ব্যাটিং আর জিম নিয়ে ব্যস্ত। ফিল্ডিংয়ের জন্য সময় কমে গেছে। এখন অনুশীলনে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট ফিল্ডিং হয়, যা একেবারেই যথেষ্ট নয়।”

এশিয়া কাপে ভারতের ক্যাচিং দক্ষতা মাত্র ৬৭.৬ শতাংশ। আট দলের মধ্যে তারা কেবল হংকংয়ের ওপরে আছে।

কেন ফিল্ডিং উপেক্ষিত?

শ্রীধরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, খেলোয়াড়রা ছক্কা মারলে তারকা হন, ভালো ক্যাচ ধরলে নয়। ছক্কার ওপর নির্ভর করেই তারা গ্রেড-এ চুক্তি বা কোটি টাকার আইপিএল অফার পান। ফলে ব্যাটিং অনুশীলনেই সময় ব্যয় হয় বেশি।

England beat India, England won by 5 wickets

ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে ভারতের ক্যাচ ধরার হার ছিল ৬৬.২ শতাংশ, যেখানে ইংল্যান্ডের ছিল ৭৮.৫ শতাংশ। শ্রীধরের মতে, ভারতীয় উইকেটে স্পিনাররা এতটাই আধিপত্য বিস্তার করেন যে স্লিপ ফিল্ডারদের তেমন সুযোগ আসে না। ফলে ফিল্ডিং পজিশনে অভিজ্ঞতা তৈরি হয় না।

পরিসংখ্যান বলছে পতনের গল্প

২০২৩ সালের শুরু থেকে টেস্ট ক্রিকেটে ১২টি পূর্ণ সদস্য দেশের মধ্যে ক্যাচ ধরার দক্ষতায় ভারত রয়েছে দশম স্থানে (৭৮.১ শতাংশ)। ওয়ানডেতেও একই অবস্থা—ভারত ৭৫.৬ শতাংশ দক্ষতা নিয়ে দশম স্থানে।

আইপিএলেও একই চিত্র

জাতীয় দলই শুধু নয়, ২০২৫ আইপিএলেও বহু ক্যাচ হাতছাড়া হয়েছে। শ্রীধরের ভাষায়, “আইপিএল দলগুলোও কেবল ব্যাটিং অনুশীলনে মনোযোগ দেয়। ২০ জন নেট বোলার, ছয়-সাতজন থ্রোডাউন স্পেশালিস্ট থাকে, আর ব্যাটসম্যানরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছক্কা মারতে ব্যস্ত থাকে। ফিল্ডিং তাদের কাছে গৌণ বিষয়, কারণ এটা বিজ্ঞাপন বা রাজস্ব আনে না।”

Why India's fielding culture has taken a huge hit | Cricket

থ্রোডাউন সংস্কৃতির প্রভাব

ব্যাটিং অনুশীলনে অতিরিক্ত থ্রোডাউনের কারণে ব্যাটসম্যানরা নিজেরাই বল করাও বন্ধ করেছেন। একসময় শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি কিংবা বিরেন্দর শেবাগ অনুশীলনে কয়েক ওভার বল করতেন। এখনকার তরুণ ব্যাটসম্যানরা তা করছেন না। শ্রীধর লিখেছেন, এ কারণেই অলরাউন্ডারও কমে গেছে।

অভিষেক শর্মার মতো কেউ কেউ বোলিং করেন, কিন্তু শুভমন গিল, যশস্বী জয়সওয়াল বা সাই সুদর্শনরা বল হাতে নেন না। ফলে দল বিশেষায়িত ব্যাটসম্যান দিয়ে ভরে উঠছে।

ব্যাটিং-প্রধান সংস্কৃতি, ফিল্ডিং উপেক্ষিত

সাবেক কোচের মতে, খেলোয়াড়দের যতই ব্যাটিংয়ে গুরুত্ব দেওয়া হোক না কেন, ফিল্ডিং অনুশীলনেও যথেষ্ট সময় ব্যয় করা জরুরি। “ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাট করলে দলের জায়গা নিশ্চিত হয়, ঠিক আছে। কিন্তু বস, ফিল্ডিংও করতে হবে,” বলেন শ্রীধর।