ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ক্রিকেট কেবল একটি মাধ্যম। আসল খেলা হলো রাজনীতি, আর তা ভীষণ বিশৃঙ্খল। রবিবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপ ফাইনালে তার ব্যতিক্রম হবে না।
এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার চরিত্রই এমন, যা সাম্প্রতিক পাহালগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর কূটনৈতিক উত্তেজনায় আরও উসকে উঠেছে। ফলে খেলার ভক্তরাও কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন ম্যাচ-পূর্ব ও ম্যাচ-পরবর্তী রীতিনীতির খুঁটিনাটি জানতে।
যদি বাজি ধরা বৈধ হতো, তবে আলোচনা হতো পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা টসে সূর্যকুমার যাদবকে করমর্দনের ছলে খোঁচা দেবেন কি না, কিংবা সাহিবজাদা ফারহান আরেকটি অর্ধশতক করলে আবারও বন্দুক ছোড়ার ভঙ্গিতে উদযাপন করতে সাহস দেখাবেন কি না।
ফাইনালের আগের দিন আগা স্মরণ করিয়ে দিলেন তাদের প্রথম টি–টোয়েন্টি ম্যাচের করমর্দন নাটকের কথা। তিনি বলেন, “২০০৭ সাল থেকে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলছি। কখনও কোনো খেলা করমর্দন ছাড়া শেষ হতে দেখিনি। এটা ক্রিকেটের জন্য ভালো নয়। সবচেয়ে খারাপ সময়েও খেলোয়াড়রা করমর্দন করেছেন।”
ভারতের হাসিখুশি অধিনায়ক বিষয়টি পাত্তা না দিলেও ক্ষতি নেই। বরং জেতার পর ‘যাকগে’ ভেবে যদি একটি অমায়িক নয় এমন হাত বাড়িয়ে দেখান যে কে বস, সেটাও বিস্ময়কর হবে না।
এবার আসা যাক আসল প্রসঙ্গে—খেলাটা কীভাবে জেতা বা হারানো যেতে পারে। ১০ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এশিয়া কাপে ভারত এখনো খুব একটা সমস্যায় পড়েনি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলা ছয় ম্যাচের অন্তত পাঁচটিতে প্রতিপক্ষকে সহজেই হারিয়েছে তারা—কখনও সম্মান রেখে, কখনও আবার একেবারেই উপেক্ষা করে। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি জয়ও এই তালিকায় আছে।
শুধু একবারই প্রতিপক্ষকে হালকাভাবে নেওয়ার খেসারত দিয়েছে ভারত—গত শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার ফোরে। লঙ্কানরা প্রায়ই ভারতের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড তাড়া করে ফেলেছিল এবং ২০২ রানের সমতা টেনে ম্যাচকে নিয়ে গিয়েছিল সুপার ওভারে। শেষ পর্যন্ত ভারত এক ওভারের টাই ব্রেকারে জয় পায় এবং সময়মতো সতর্কবার্তাও পেয়ে যায়।
ভারতের দ্বিতীয় পাকিস্তান মুখোমুখি ছিল তুলনামূলক কঠিন। ১৪ সেপ্টেম্বরের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে লজ্জাজনকভাবে হারিয়ে ১২৮ রানের লক্ষ্য ২৫ বল বাকি থাকতেই পেরিয়ে যায় ভারত। কিন্তু দ্বিতীয় সাক্ষাতে ১৭২ রান তাড়া করতে হয়, এবং জয় নিশ্চিত হয় মাত্র ৭ বল হাতে রেখে।
পাকিস্তান চাইবে ভারতের দাপুটে ওপেনার অভিষেক শর্মাকে শুরুতেই ফিরিয়ে দিতে। বাঁহাতি এই ব্যাটার ছয় ইনিংসে ৩০৯ রান করেছেন, গড়ে ৫১.৫০। পাকিস্তানের পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদির বিরুদ্ধে তিনি ১৪ বলে ৩১ রান তুলেছেন, যার মধ্যে তিনটি ছক্কা। শর্মাকে যদি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তবে ভারতীয় ঝড় থামানো কঠিন হবে।
সাম্প্রতিক ম্যাচে হ্যারিস রউফ ছিলেন খলনায়কসুলভ চরিত্র। তার অসংযত ও উসকানিমূলক আচরণের জন্য কেবল জরিমানা দিয়েই রক্ষা পেয়েছেন। ভারতীয় ব্যাটারদের উচিত রউফকে শান্তভাবে সামলানো এবং ব্যাট দিয়েই উত্তর দেওয়া।
কুলদীপ যাদব ইতিমধ্যেই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের চার উইকেট নিয়েছেন। ১৪ উইকেটের সংগ্রহে আরও যোগ করার জন্য তিনি মুখিয়ে থাকবেন। অন্যদিকে, সঞ্জু স্যামসনের ভূমিকাও আবার আলোচনায় থাকবে—তিনি কি ৫ নম্বরে ব্যাট করবেন, নাকি সাম্প্রতিক তিন ম্যাচের মতো বেঞ্চেই বসে থাকবেন।
সবশেষে বলা যায়, ম্যাচ শেষে দুই দল যদি ফলাফল মেনে নেয় এবং মাঠের বাইরে রাজনৈতিক প্রচারণা রেখে আসে, তাহলে ক্রিকেট জিতবে। কারণ দিনের শেষে ক্রিকেট কেবল একটি খেলা।