বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির তীব্র প্রতিযোগিতা
হংকংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সম্প্রতি ভর্তির নিয়মে পরিবর্তন এবং মূলভূখন্ড চীনের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর আগমনে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা এখন শুধু হংকংয়ের নয়, বাইরের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও প্রতিযোগিতা করছে। এদের বড় অংশই মূলভূখন্ড থেকে আসা এবং হংকংয়ের ডিপ্লোমা অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (ডিএসই) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
মূলভূখন্ডের শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা
শাংহাইয়ের ১৮ বছর বয়সী সিন্ডি লি সম্প্রতি চীনা চিকিৎসাশাস্ত্রে হংকংয়ের একটি শীর্ষস্থানীয় প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছেন। গণিত, অর্থনীতি, রসায়ন, ইংরেজি ও চীনা ভাষায় ভালো ফল করার পরই এই সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, ডিএসই-তে গণিত ও রসায়ন সহজ মনে হলেও ইংরেজি ছিল কঠিন। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করেও মূলভূখন্ডের প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির কারণে তার সুযোগ অনেকটাই কমে গেছে।
জন্মসূত্রে সুযোগ ও বিতর্কিত প্রজন্ম
লির জন্ম হংকংয়ে হলেও তার বাবা-মা কখনো সেখানে থাকেননি। শুধু হংকংয়ে জন্ম নেওয়ার কারণে তিনি স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে ডিএসই দিতে পেরেছেন এবং চীনের কঠিন গাওকাও পরীক্ষার চাপ এড়াতে সক্ষম হয়েছেন।
এভাবে জন্ম নেওয়া শিক্ষার্থীদের বলা হয় “ডাবল ননপার্মানেন্ট” প্রজন্ম। প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী লিয়াং চুন-ইং সম্প্রতি সতর্ক করেছেন, ২০০৮-২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার শিশু আগামী পাঁচ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বয়সে পৌঁছাবে। শুধু ২০২৫ সালেই ডিএসই-এর মাধ্যমে ১৫ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী স্নাতক কোর্সে ভর্তি হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।
জন্মবিস্ফোরণ ও নীতিগত পরিবর্তন
২০০১ সালের আদালতের এক রায়ে হংকংয়ে জন্ম নেওয়া সব শিশুই স্থানীয় বাসিন্দার মর্যাদা পায়। এতে ২০০৬ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে মূলভূখন্ডের পরিবারগুলো ব্যাপক হারে সন্তান জন্মদেয়। তবে উচ্চ খরচ এড়াতে অনেক পরিবার আবার সন্তানদের মূলভূখন্ডে নিয়ে যায়।
অতিরিক্ত চাপের কারণে ২০১৩ সালে নীতি পরিবর্তন করে মূলভূখন্ডের নারীদের হংকংয়ে সন্তান জন্মদানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবুও ২০০৮ সালে একাই ২৫ হাজারেরও বেশি শিশু হংকংয়ে জন্ম নেয়, যা স্থানীয় জন্মের প্রায় অর্ধেক।
নতুন ভিসা স্কিম ও বিশ্ববিদ্যালয় সুবিধা
জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকরের পর হংকং সরকার দক্ষ জনশক্তি ধরে রাখতে নতুন ভিসা স্কিম চালু করে। এর মধ্যে ২০২২ সালের “টপ ট্যালেন্ট পাস স্কিম”-এ এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার আবেদন অনুমোদন পেয়েছে। এই স্কিমের আওতায় আসা পরিবারগুলো সন্তানদের স্থানীয় হিসেবে পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছে, যেখানে শিক্ষাব্যয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এক-চতুর্থাংশ।
২০২৮ সাল থেকে নিয়ম কঠোর করার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে কমপক্ষে দুই বছর হংকংয়ে বসবাসের শর্ত যোগ হবে।
ডিএসই-এর প্রতি আকর্ষণ
ডিএসই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মূলভূখন্ডের শিক্ষার্থীদের আধিপত্য ক্রমেই বাড়ছে। শুধু গণিতে ২০২৫ সালে “নন-ডে স্কুল” প্রার্থীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৭,৫০০। এর মধ্যে শীর্ষ ফলপ্রাপ্তদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই মূলভূখন্ড থেকে আসা। একই প্রবণতা ইংরেজি ও পদার্থবিজ্ঞানে লক্ষ্য করা গেছে। ডিএসই-এর আকর্ষণ হলো— এটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সুযোগ দেয়। বর্তমানে হংকংয়ের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের শীর্ষ ১০০-এর মধ্যে রয়েছে এবং ডিএসই ফলাফল যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে স্বীকৃত।
স্থানীয় শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ
ডিএসই পরীক্ষায় সাম্প্রতিক সংস্কারে চীনা ভাষার শ্রবণ ও মৌখিক পরীক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং রাজনৈতিকীকরণের অভিযোগে লিবারেল স্টাডিজের গুরুত্ব কমানো হয়েছে। এতে মূলভূখন্ডের শিক্ষার্থীরা সহজেই মানিয়ে নিতে পারছে।
ফলে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে উঠেছে। ১০ম শ্রেণির স্থানীয় শিক্ষার্থী মুন সিট বলেন, “মূলভূখন্ড থেকে আসা শিক্ষার্থীরা প্রায় সব বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পায়। এতে আমাদের ওপর চাপ বাড়ছে এবং কখনো কখনো মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আশা ফুরিয়ে যাচ্ছে।”
অর্থনৈতিক চাপ ও ভবিষ্যৎ ভাবনা
মূলভূখন্ডের যুব বেকারত্ব আগস্টে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছেছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের সর্বোচ্চ। এই চাপ এড়াতেই অনেক শিক্ষার্থী হংকংয়ে থাকার চেষ্টা করছে। শাংহাইয়ের লি বলেন, “মূলভূখন্ডে চাকরির বাজার খুব প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এখানে কর্মীদের এতটা চাপে রাখা হয় না। তাই আমি হংকং-এই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই।”