ব্যারা
ভাদ্রমাস, ভাগীরথী কূলে কূলে পূরিয়াছেন, অনন্তপ্রবাহ সলিলরাশি তটে প্রতিহত হইয়া বেগে- সুবেগে-অতি বেগে-সেই বিরাট্ সাগর-হৃদয়ে আত্মবিসর্জনের জন্য ছুটিয়াছে। দিগন্তপ্রসারিত নীলাকাশ, নিবিড় মেঘমালায় সমাবৃত হইয়া, বিষাদাচ্ছন্নের হাস্যের ন্যায় ক্ষীণ বিদ্যুল্লতার আলোকে মধ্যে মধ্যে আপনার অস্তিত্ব দেখাইতেছে। রাত্রিকাল, নৈশ অন্ধকারে পৃথিবী ঢাকিয়া ফেলিয়াছে, রজনী জ্যোৎস্নাশালিনী হইলেও মেঘাবরণে তাহা অন্ধকারময়ী। চতুদিক্ নীরব, কেবল তটাভিঘাতিনী ভাগীরথীর জলোচ্ছাস ও তটপতনশব্দ মধ্যে মধ্যে গভীর নৈশ নীরবতা ভঙ্গ করিতেছে।
এইরূপ রজনীযোগে, ভাদ্রমাসের শেষ ‘বৃহস্পতিবারে প্রান্তবাহিনী ভাগীরথীবক্ষে এক অপূর্ব্ব আলোক দৃপ্ত নয়নপথে নিপতিত হয়। নিবিড় অন্ধকাররাশিকে দূরদূরান্তরে বিক্ষিপ্ত করিয়া সেই সঞ্চারিণী আলোকমালা ভাগীরথীহৃদয় প্রতিফলিত করিতে করিতে, তরঙ্গে তরঙ্গে প্রতিহত হইয়া যখন গমন করিতে থাকে, তখন সে দৃশ্য বড়ই সুন্দর বলিয়া বোধ হয়।
শত হস্ত পরিমিত আলোকযান অসংখ্য আলোক-মালায় বিভূয়িত হইয়া ভাসমান, চতুদ্দিকে ক্ষুদ্রাকারের সেইরূপ যান, ও শত শত ‘কমল’ • প্রস্ফুটিত কমলের ন্যায় হাসিতে হাসিতে ভাসিতে থাকে। তাহাদিগকে দেখিলে মনে হয় যেন, নীলাকাশস্থ সমস্ত তারকা-রাজি বিরাট অনন্তরাজ্য হইতে আত্মবিসর্জন করিয়া ভাগীরথীবক্ষে পতিত হইয়াছে। মুর্শিদাবাদের সৌধাবলী সেই আলোকমালায় পূর্ব্ব গৌরবের ক্ষণস্মৃতির ন্যায় নিমেষের জন্য হাসিয়া, আবার অন্ধকারে আপনাদিগকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, ভাগীরথীবক্ষঃস্থিত তরণীনিচয় তাহাতে উদ্ভাসিত হইয়া উঠে।
তরণী ও তীরস্থিত সহস্র সহস্র দর্শকের নয়নগোলক প্রতিবিম্বিত করিয়া, আপনাদিগের ছটা ছুটাইতে ছুটাইতে তাহারা ভাসিয়া চলিয়া যায়। জাহ্নবীসলিলরাশি জ্যোতিল হরীতে প্রতিফলিত হইয়া বোধ হইতে থাকে, যেন নদী-গর্ভে আলোকের তরঙ্গ ছুটাছুটি করিতেছে। মধ্যে মধ্যে আলোকযান হইতে এক এক, প্রকা-রের আতসবাজী সহসা প্রজ্বলিত হইয়া উঠে।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 



















