এই সময়ে নানাবিধ আতসবাজীর দ্বারা সাধারণের মনোরঞ্জন করা হইত। এক্ষণে আর সেরূপ আলোকগৃহ নিৰ্ম্মিত হয় না’ এবং আতসবাজীর ধূমও অনেক পরিমাণে লঘু হইয়াছে। এইরূপে ভাগীরথীর বক্ষে ও তীরে সর্ব্বত্রই আলোকের সুন্দর দৃশ্য দর্শকগণের তৃপ্তি সম্পাদন করিত। ভাদ্রমাসের মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকারময়ী রজনীতে এইরূপ আলোকের খেলা বাস্তবিক দেখিবার বিষয়।
ভাগীরথী আপন হৃদয়ে আলোকের মালা পরিয়াছেন। তীর হইতে অসংখ্য দীপশিখা ও আতসবাজী নৈশ অন্ধকাররাশির মধ্যে হাসিয়া উঠিতেছে। দেখিলেই মনোমধ্যে আনন্দের উদয় হয়। বহুদূর ব্যাপিয়া আলোক-আলোক-কেবলই আলোক- যে দিকে দৃষ্টিপাত করা যায়, সেই দিকে আলোকতরঙ্গ প্রবাহিত হইতেছে! সমগ্র ভাগীরথীর সলিল-তরঙ্গ যেন আলোক-তরঙ্গে পরিণত হইয়াছে!
যেন একটি বিশাল আলোক-প্রবাহ অনন্তজ্যোতিঃসাগরে মিশিবার জন্য অবিরামগতিতে ছুটিয়া যাইতেছে। এই উৎসবের দিন পূর্ব্বে নবাবপ্রাসাদে এক বিরাট্ দরবারের অধিবেশন হইত। দেশীয় ও ইউরোপীয় সম্ভ্রান্ত জনগণ সেই দরবারে সমাগত হইতেন। বাঙ্গলা, বিহার উড়িষ্যার নবাব-নাজিম সুচারু পরিচ্ছদে বিভূষিত হইয়া মসনদে উপবেশন করিলে, নিম্নে ইউরোপীয় ও দেশীয়গণ যথানিয়মে নজর প্রদান করিয়া, আপন আপন নিদ্দিষ্ট আসন গ্রহণ করিতেন।
সুকণ্ঠী গায়িকার মধুর সঙ্গীত দরবারস্থ সম্ভ্রান্ত লোক- দিগের তৃপ্তি সম্পাদন করিত। সহস্রদ্বার ভবনের গোলগৃহে এই দরবারেক্স নিদ্দিষ্ট স্থান ছিল। এক শ্রুত দশ শাখাযুক্ত একটি প্রকাণ্ড কাচের ঝাঁড় প্রজ্বলিত হইয়া, দরবারগৃহ আলোকময় করিয়া তুলিত। দরবার-শেষে মাননীয় ব্যক্তিগণ এক এক গাছি বাদলার মালা উপহার গ্রহণ করিয়া আসন পরিত্যাগ করিতেন। এই উৎসবে মুর্শিদাবাদস্থ শ্বেত প্রভুগণের অতি সমাদরে ভোজনক্রিয়া নির্বাহের কথা শুনা যায়। ঘন ঘন তোপধ্বনি উৎসবের গাম্ভীর্য্য বৃদ্ধি করিত। এক্ষণে দরবারাদি আর কিছুই হয় না।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 

















