আঘাতে আঘাতে ভাগীরথীবক্ষে শত শত মাণিক জ্বলিয়া উঠিতেছে। তাঁহার সেই শান্তভাব ঈষৎ উচ্ছ্বাসিত হওয়ায় আরও মধুর বোধ হইতেছে। যেখানে আঘাত লাগিতেছে, সেই খানে যেন চন্দ্রদেব সুধা ঢালিয়া বেদনা দূর করিতেছেন। বর্ষার জ্যোৎস্নাময়ী রজনীর শোভা বাস্তবিকই প্রীতিপ্রদ। এরূপ মধুর শোভা দেখিতে কাহার না ইচ্ছা হয়? বিশেষতঃ তরণীবক্ষ হইতে সেই শোভা আরও মধুর’। বলিয়া বোধ হইয়া থাকে।
পূর্ব্বেই বলিয়াছি, সে দিন বিষাদ-উৎসব মহরম। বিষাদ উৎসব কথাটি কেমন কেমন বোধ হয়। কিন্তু আজকাল সৰ্ব্বত্রই বিষাদ-উৎসব। যে কিছু উৎসব হইয়া থাকে, তাহাতেই বিষাদের মাখামাখি। মহরম উপলক্ষে নূতন মুর্শিদাবাদ উৎসবমর। নূতন মুর্শিদাবাদ বলিলাম, কারণ পুরাতন মুর্শিদাবাদ এক্ষণে মরুভূমির ন্যায় ধূ ধূ করিতেছে,-বিস্মৃতির অতলগর্ভে তাহার অস্তিত্ব ডুবিয়া গিয়াছে।
শত শত দীপালোকে সজ্জিত হইয়া মুর্শিদাবাদ রমণীয় রূপ ধারণ করিয়াছে। তাহাদের প্রতিবিম্ব ভাগীরথীবক্ষে পতিত হইয়া, তাঁহার গর্ভেও যেন উৎসবের তরঙ্গ ছুটাইতেছে। চন্দ্রালোকে ও দীপালোকে মুর্শিদাবাদের প্রান্তবাহিনী ভাগীরথী যেন শত শত মণিমাণিক্যখচিত হইয়া ঐশ্বর্যায়য়ী কান্তিতে শোভা পাইতেছেন। সমগ্রনগরব্যাপী কোলাহল প্রতিনিয়ত আকাশ-পানে উত্থিত হইতেছে। মধ্যে মধ্যে ক্রীড়া-বাস্থ্য ও বিষাদ-সঙ্গীত সেই কলধ্বনিকে মধুরতর করিয়া তুলিতেছে। বহুসংখ্যক তরণী সেই উৎসব দেখিবার জন্য নদীবক্ষে অবস্থিত।
প্রায় প্রত্যেক গৃহ আলোক-মালায় সুসজ্জিত হইয়া, জ্যোৎস্নালোককে স্নান করিতেছে। অনেক গৃহে কাগজ ও বস্তুনির্মিত তাজিয়া শোভা পাইতেছে নবাববংশীয়দিগের এমামবারায় উৎসবের ঘটা অধিক। যেমন দীপ- মালায় সুসজ্জিত, সেইরূপ লোকে পরিপূর্ণ। তাহার অদূরে সিরাজ-উদ্দৌলার মদীনা দুই একটি ক্ষীণালোক বক্ষে ধরিয়া আছে। এমাম-বারার সম্মুখে সহস্রদ্বার প্রাসাদ চন্দ্রালোকে উজ্জ্বলতর হইয়া, ইংরেজ রাজত্বের গৌরবচিহ্নের ন্যায় মস্তক উন্নত করিয়া দণ্ডায়মান। সহস্র-দ্বার-ভবন ইংরেজরাজত্বের সময়ে নির্মিত হয় এবং তাহা তাঁহাদেরই সম্পত্তি।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 



















