একদিনের স্মৃতি
বর্ষার জ্যোৎস্নাময়ী রজনীতে পবিত্রসলিলা ভাগীরথীর অপূর্ব্ব শোভা কেহ দেখিয়াছেন কি? সেই রজতবিনিন্দিত কৌমুদীরাশিতে স্নাত সলিল-প্রবাহের অতুল সৌন্দর্য্য কাহারও দৃষ্টিপথে পড়িয়াছে কি? লাবণ্যে ঢল ঢল যৌবনের সর্ব্বাঙ্গীণ স্ফূর্ত্তির ন্যায় সেই জ্যোৎস্নামাখা আতটপরিপূর্ণা কান্তি কাহারও নয়নগোচর হইয়াছে কি? মরি মরি সেই অতুলনীয় রূপ না জানি কতই সুন্দর! কতই মধুর! তাহার উপমা ত জগতে খুঁজিয়া পাই না।
যে রূপের মোহকর ভাবে লীলাময়ী চঞ্চলা কল্পনা আপনিই ঘুমাইয়া পড়ে, কে তাহার তুলনা আনয়ন করিবে? কল্পনা ব্যতীত কে আর তুলনা খুঁজিতে পারে নীল জলো-চ্ছ্বাসে পূর্ণদেহা পুণ্যস্রোতস্বিনী স্থির অচঞ্চল ভাবে, মন্থর গতিতে, কেমন গমন করিতেছেন। বায়ুর প্রবল ভাব নাই, কাজেই তরঙ্গিণীহৃদয়ে সেরূপ তরঙ্গ উঠিতেছে না। বিশ্ব যেরূপ স্থির ভাগীরথীও সেইরূপ শান্ত। কেবল অস্ফুট কলকল রব দূরাগত বীণাধ্বনির ন্যায় কর্ণে অমৃত ঢালিয়া দিতেছে।
কবির কথায় যে অনন্ত সঙ্গীত গ্রহ-উপগ্রহ হইতে মানব আত্মারও তারে তারে বাজিতেছে, সেই সঙ্গীতই যেন ভাগীরথী হৃদয় হইতে উঠিয়া আবার অনন্তে মিশিয়া যাইতেছে। নীলাকাশে বসিয়া চন্দ্রদেব হাসির লহর’ তুলিতেছেন, তাঁহার সেই মধুর হাস্তরাশি দিগ-দিগন্তে বিকীর্ণ হইতেছে, মাঝে মাঝে হাস্য সংবরণ করিতে না পারিয়া, দুই এক খানি শাদা মেঘাবরণে মুখ খানি ঢাকিতেছেন, আবার হাসিয়া আকুল হইতেছেন। আকাশের তারাগুলি চন্দ্রের হাসির ঘটা দেখিয়া অবাক্ হইয়া রহিয়াছে!
সে দিবস বিষাদ-উৎসব মহরম। যে চন্দ্রদেবকে মহম্মদীয়গণ অধিক-তর সম্মান করিয়া থাকেন, তাঁহাদের বিষাদ-উৎসবে চন্দ্রদেবের হাসি ভাল লাগিল না; অথবা ভারতে তাঁহাদের বর্তমান অবস্থায় রণোন্মত্তের ন্যায় বেশ দেখিয়া, হয়ত তাঁহার মনে হাসির উদয় হইয়া থাকিবে। কন্তু সাধের তরণী ভাগীরথীর স্থির, হৃদয়ে আঘাত করিয়া চলিয়া যাই-তেছে।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 



















