০৩:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

জনআস্থা না থাকলে এআই ব্যর্থই হবে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ইতিমধ্যেই ঠিক করে দিচ্ছে—কে চাকরির সাক্ষাৎকার পাবে, কে ঋণ পাবে, কিংবা কার জামিন হবে। এই ব্যবস্থাগুলোর পক্ষে কেউ ভোট দেয়নি, তবু এদের সিদ্ধান্ত প্রতিদিনের জীবনকে প্রভাবিত করছে।

সরকারগুলো দ্রুত এগোচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এআই আইন পাস করেছে। যুক্তরাষ্ট্র নির্বাহী আদেশ ও ফেডারেল দিকনির্দেশনা জারি করেছে। ব্রিটেন এআই সেফটি সামিট ডেকেছিল। কিন্তু এসব উদ্যোগের কোনোটাই মূল প্রশ্নটির উত্তর দেয় না: মানুষ কি এই ব্যবস্থাগুলোর কর্তৃত্ব মেনে নিচ্ছে? কোনো টুল যতই নির্ভুল হোক, জনতা যদি তাকে বৈধতা না দেয়, তবে সেটি ব্যর্থ হতে পারে।

বৈধতা হলো টেকসই প্রতিষ্ঠানের নিঃশব্দ ভিত্তি। আদালত, আইনসভা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ চালিয়ে যেতে পারে, কারণ বহু নাগরিক তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের ধরনকে মেনে নেন—যদিও ফলাফল নিয়ে আপত্তি থাকে। এআই কোম্পানিগুলোর প্রভাবও তুলনীয়। তারা বিলিয়ন মানুষের ব্যবহার করা প্ল্যাটফর্মে বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করে। চিকিৎসা, জ্বালানি, পরিবহন ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারকারী ব্যবস্থা তারা তৈরি করছে। অথচ এই কর্তৃত্ব অর্পণ বা তার সীমানা কোথায় হবে—সে বিষয়ে জনসাধারণের মতামত খুব কমই নেওয়া হয়েছে।

ইতিহাস বলে দেয়—বৈধতার প্রশ্ন উপেক্ষা করলে কী ঘটে। ১৯৫০–এর দশকে পারমাণবিক শক্তিকে সস্তা ও প্রাচুর্যময় হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল। এর উন্নয়ন অনেক সময় গোপনে হয়েছে। থ্রি মাইল আইল্যান্ড ও চের্নোবিলের মতো দুর্ঘটনার পর জনআস্থা ভেঙে পড়ে। প্রকল্পগুলো দশকের পর দশক স্থবির হয়ে থাকে। ইউরোপে জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত ফসলের ক্ষেত্রেও একই চিত্র: শক্তিশালী বিজ্ঞান, দুর্বল সম্মতি, আর দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ।

The Ethics of Innovation: Can AI Scale Without Losing Public Trust?

বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের ট্র্যাজেডিও একটি নজির। স্বচ্ছতার অভাবে চালু করা সফটওয়্যার দুটি দুর্ঘটনায় ৩৪৬ জনের প্রাণহানির কারণ হয়। বিমানগুলো পরে সেবায় ফিরে এসেছে; কিন্তু তাদের সুনামের ক্ষতি টিকে আছে। একবার বিশ্বাস হারালে, সেটি ফিরিয়ে আনতে শুরুতে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেয়ে অনেক বেশি খরচ পড়ে।

এআই–তেও একই সতর্কবার্তা দেখা যাচ্ছে। ২০১৮ সালে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিতে প্রকাশ পায় কীভাবে ফেসবুকের তথ্য সংগ্রহ করে নির্বাচন প্রভাবিত করতে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এটি কেবল প্রযুক্তিগত লঙ্ঘন ছিল না; এটি সম্মতির মৌলিক প্রত্যাশাকেই ভঙ্গ করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতগুলোতে COMPAS নামের একটি টুল সাজা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়েছিল; পরবর্তী অনুসন্ধানে দেখা যায়, এর ফলাফলে জাতিগত বৈষম্যের ইঙ্গিত রয়েছে।

২০২০ সালে ব্রিটেনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোভিড-১৯–এর অস্থিরতার মধ্যে এ-লেভেল ফল নির্ধারণে একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। মডেলটি ব্যক্তিগত সম্ভাবনার চেয়ে প্রতিটি স্কুলের পূর্বেকার পারফরম্যান্সকে বেশি গুরুত্ব দেয়। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে যায়, এবং নীতিটি শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হয়। এখানে প্রযুক্তিগত যুক্তি যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল সম্মতির অনুপস্থিতি ও ফল চ্যালেঞ্জ করার ন্যায্য সুযোগ না থাকা।

এই ঘটনাগুলো দেখায়, শুধু সুরক্ষা–বেষ্টনী (guard rails) থাকলেই বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। পক্ষপাত নিরীক্ষা আর রেড–টিমিংসহ সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়, কিন্তু মোটেও যথেষ্ট নয়। মানুষ যদি মনে করে কোনো ব্যবস্থা অস্বচ্ছ ও জবাবদিহিহীন, তারা তাকে প্রতিরোধ করবে—এবং নিয়ন্ত্রকেরা অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ করবে। প্রশ্নটি কেবল এআই–কে আরও নির্ভুল করা যাবে কি না—এখানেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি এমনভাবে শাসিত করা যাবে কি না, যা নাগরিকেরা ন্যায্য, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিসম্পন্ন বলে চিনতে পারে।

এই স্বীকৃতির জন্য দরকার কিছু স্পষ্ট অঙ্গীকার। প্রথমত, যখন কোনো ব্যবস্থা অধিকার বা গুরুত্বপূর্ণ সুযোগকে প্রভাবিত করে—যেমন নিয়োগ, ঋণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জননিরাপত্তা—তখন মানুষকে সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয় তা বুঝতে দেওয়া জরুরি। এর মানে এই নয় যে সোর্স কোড প্রকাশ করতে হবে; বরং দরকার পরিষ্কার ব্যাখ্যা, কোন কোন বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তার দলিল, এবং স্বতন্ত্র পরীক্ষা—যার ফল সহজ ভাষায় প্রকাশ করা হবে।

দ্বিতীয়ত, দায়িত্ব যেন স্পষ্ট ও বাস্তব হয়। এআই–এর কারণে ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ এবং উন্নয়নমূলক সংশোধন–ব্যবস্থার জন্য আইনগতভাবে নির্দিষ্ট এক পক্ষকে জবাবদিহি করতে হবে। আজকের দিনে বিক্রেতার চুক্তি ও দায়–অস্বীকারের আড়ালে এই দায়ের সীমা প্রায়ই ঝাপসা হয়ে যায়।

AI in the Justice System Raises Fears of Errors, Bias, and Loss of Public  Trust

তৃতীয়ত, প্রাপ্য প্রক্রিয়া (due process) থাকতে হবে। কোনো মডেল যদি কোনো সুবিধা অস্বীকার করে বা ঝুঁকির স্কোর বাড়ায়, তাহলে প্রভাবিত ব্যক্তির পর্যালোচনা, সংশোধন এবং মানবিক বিবেচনার সুযোগ থাকতে হবে। ফল চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ কোনো দয়া নয়; গণতন্ত্রে কর্তৃত্বকে সহনীয় করে তোলার এটিই মূল ভিত্তি।

চতুর্থত, স্বচ্ছতা যেন শুধু পণ্য উন্মোচনের সময়ে সীমাবদ্ধ না থাকে। ব্যবস্থার ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ, ঘটনাপঞ্জি (incident) রিপোর্টিং, এবং বিমান নিরাপত্তা বোর্ডের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান থাকা দরকার—যেখানে স্বতন্ত্র তদন্তকারীরা প্রবেশাধিকার পাবে এবং তাদের সুপারিশ বাস্তবে কার্যকর হবে।

সর্বশেষ, সরকারি ক্রয়–বিক্রয় মানদণ্ড স্থির করতে পারে। সরকার যখন এআই কেনে বা তৈরি করে, তখন ব্যাখ্যাযোগ্যতা, অডিট–ট্রেইল এবং চুক্তিভিত্তিক প্রতিকার (redress) বাধ্যতামূলক করা যায়।

এ মুহূর্তটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এআই শৌখিন প্রযুক্তি থেকে অবকাঠামোতে রূপ নিচ্ছে। সার্চ, চিকিৎসা, লজিস্টিকস, আর্থিক খাত, শিক্ষা এবং বিদ্যুৎ গ্রিড পরিচালনা—সবখানেই এটি বোনা হচ্ছে। এগুলো কোনো পার্শ্ব–প্রকল্প নয়; সংকট ও শান্ত—দুই সময়েই যেগুলোর ওপর জনতা নির্ভর করবে, সেসবই। বৈধতা অবহেলা করলে গ্রহণযোগ্যতা থেমে যাবে। ফল হবে অপচয় হওয়া উদ্ভাবন এবং আরও গভীর অবিশ্বাস, যা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে।

আমাদের উদ্ভাবন থামাতে হবে না—কিন্তু সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। উচ্চ–প্রভাবসম্পন্ন ব্যবস্থা তৈরি করা কোম্পানিগুলোকে মডেল কার্ড (ভোক্তা নিরাপত্তা লেবেলের মতো তথ্যপত্র) ও ঝুঁকি–রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে—যেগুলো স্বাধীনভাবে পরীক্ষা করা যায়।

নিয়ন্ত্রকদের উচিত স্পষ্ট সীমা নির্ধারণ করা—কখন কঠোর বাধ্যবাধকতা প্রযোজ্য হবে—এবং অহেতুক নাটক না করে তা প্রয়োগ করা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রকৌশলীদের শেখাতে হবে—কেবল কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে নয়, মানুষের অধিকারের ভিত্তিতেও নকশা করতে। রাষ্ট্রগুলোকে এমন নিয়মের দিকে এগোতে হবে যা একে–অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ—যাতে সীমানা বদলালেই বৈধতা ভেঙে না যায়।

এআই কেবল প্রযুক্তিগত কুশলতার ওপর দাঁড়িয়ে উঠবে বা পড়ে যাবে—এমন নয়। মানুষ যদি এটিকে বৈধ বলে বিশ্বাস করে, তবেই এটি সফল হবে। তার মানে—দৃশ্যমান জবাবদিহি, বোধগম্য ব্যাখ্যা, এবং ভুল হলে প্রতিকার। আমরা যদি বৈধতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখি, এআই একসঙ্গে উদ্ভাবনী ও বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। যদি এটিকে পরবর্তীকথা মনে করি, তবে আবারও পুরোনো দৃশ্যপট ফিরবে: চমকপ্রদ প্রযুক্তি—কিন্তু জনসাধারণের প্রত্যাখ্যানে থেমে যাওয়া।

শাসনব্যবস্থায় বৈধতা কোনো বিলাসিতা নয়; এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা।

জনপ্রিয় সংবাদ

জনআস্থা না থাকলে এআই ব্যর্থই হবে

১১:১৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ইতিমধ্যেই ঠিক করে দিচ্ছে—কে চাকরির সাক্ষাৎকার পাবে, কে ঋণ পাবে, কিংবা কার জামিন হবে। এই ব্যবস্থাগুলোর পক্ষে কেউ ভোট দেয়নি, তবু এদের সিদ্ধান্ত প্রতিদিনের জীবনকে প্রভাবিত করছে।

সরকারগুলো দ্রুত এগোচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এআই আইন পাস করেছে। যুক্তরাষ্ট্র নির্বাহী আদেশ ও ফেডারেল দিকনির্দেশনা জারি করেছে। ব্রিটেন এআই সেফটি সামিট ডেকেছিল। কিন্তু এসব উদ্যোগের কোনোটাই মূল প্রশ্নটির উত্তর দেয় না: মানুষ কি এই ব্যবস্থাগুলোর কর্তৃত্ব মেনে নিচ্ছে? কোনো টুল যতই নির্ভুল হোক, জনতা যদি তাকে বৈধতা না দেয়, তবে সেটি ব্যর্থ হতে পারে।

বৈধতা হলো টেকসই প্রতিষ্ঠানের নিঃশব্দ ভিত্তি। আদালত, আইনসভা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ চালিয়ে যেতে পারে, কারণ বহু নাগরিক তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের ধরনকে মেনে নেন—যদিও ফলাফল নিয়ে আপত্তি থাকে। এআই কোম্পানিগুলোর প্রভাবও তুলনীয়। তারা বিলিয়ন মানুষের ব্যবহার করা প্ল্যাটফর্মে বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করে। চিকিৎসা, জ্বালানি, পরিবহন ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারকারী ব্যবস্থা তারা তৈরি করছে। অথচ এই কর্তৃত্ব অর্পণ বা তার সীমানা কোথায় হবে—সে বিষয়ে জনসাধারণের মতামত খুব কমই নেওয়া হয়েছে।

ইতিহাস বলে দেয়—বৈধতার প্রশ্ন উপেক্ষা করলে কী ঘটে। ১৯৫০–এর দশকে পারমাণবিক শক্তিকে সস্তা ও প্রাচুর্যময় হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল। এর উন্নয়ন অনেক সময় গোপনে হয়েছে। থ্রি মাইল আইল্যান্ড ও চের্নোবিলের মতো দুর্ঘটনার পর জনআস্থা ভেঙে পড়ে। প্রকল্পগুলো দশকের পর দশক স্থবির হয়ে থাকে। ইউরোপে জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত ফসলের ক্ষেত্রেও একই চিত্র: শক্তিশালী বিজ্ঞান, দুর্বল সম্মতি, আর দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ।

The Ethics of Innovation: Can AI Scale Without Losing Public Trust?

বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের ট্র্যাজেডিও একটি নজির। স্বচ্ছতার অভাবে চালু করা সফটওয়্যার দুটি দুর্ঘটনায় ৩৪৬ জনের প্রাণহানির কারণ হয়। বিমানগুলো পরে সেবায় ফিরে এসেছে; কিন্তু তাদের সুনামের ক্ষতি টিকে আছে। একবার বিশ্বাস হারালে, সেটি ফিরিয়ে আনতে শুরুতে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেয়ে অনেক বেশি খরচ পড়ে।

এআই–তেও একই সতর্কবার্তা দেখা যাচ্ছে। ২০১৮ সালে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিতে প্রকাশ পায় কীভাবে ফেসবুকের তথ্য সংগ্রহ করে নির্বাচন প্রভাবিত করতে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এটি কেবল প্রযুক্তিগত লঙ্ঘন ছিল না; এটি সম্মতির মৌলিক প্রত্যাশাকেই ভঙ্গ করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতগুলোতে COMPAS নামের একটি টুল সাজা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়েছিল; পরবর্তী অনুসন্ধানে দেখা যায়, এর ফলাফলে জাতিগত বৈষম্যের ইঙ্গিত রয়েছে।

২০২০ সালে ব্রিটেনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোভিড-১৯–এর অস্থিরতার মধ্যে এ-লেভেল ফল নির্ধারণে একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। মডেলটি ব্যক্তিগত সম্ভাবনার চেয়ে প্রতিটি স্কুলের পূর্বেকার পারফরম্যান্সকে বেশি গুরুত্ব দেয়। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে যায়, এবং নীতিটি শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হয়। এখানে প্রযুক্তিগত যুক্তি যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল সম্মতির অনুপস্থিতি ও ফল চ্যালেঞ্জ করার ন্যায্য সুযোগ না থাকা।

এই ঘটনাগুলো দেখায়, শুধু সুরক্ষা–বেষ্টনী (guard rails) থাকলেই বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। পক্ষপাত নিরীক্ষা আর রেড–টিমিংসহ সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়, কিন্তু মোটেও যথেষ্ট নয়। মানুষ যদি মনে করে কোনো ব্যবস্থা অস্বচ্ছ ও জবাবদিহিহীন, তারা তাকে প্রতিরোধ করবে—এবং নিয়ন্ত্রকেরা অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ করবে। প্রশ্নটি কেবল এআই–কে আরও নির্ভুল করা যাবে কি না—এখানেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি এমনভাবে শাসিত করা যাবে কি না, যা নাগরিকেরা ন্যায্য, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিসম্পন্ন বলে চিনতে পারে।

এই স্বীকৃতির জন্য দরকার কিছু স্পষ্ট অঙ্গীকার। প্রথমত, যখন কোনো ব্যবস্থা অধিকার বা গুরুত্বপূর্ণ সুযোগকে প্রভাবিত করে—যেমন নিয়োগ, ঋণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জননিরাপত্তা—তখন মানুষকে সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয় তা বুঝতে দেওয়া জরুরি। এর মানে এই নয় যে সোর্স কোড প্রকাশ করতে হবে; বরং দরকার পরিষ্কার ব্যাখ্যা, কোন কোন বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তার দলিল, এবং স্বতন্ত্র পরীক্ষা—যার ফল সহজ ভাষায় প্রকাশ করা হবে।

দ্বিতীয়ত, দায়িত্ব যেন স্পষ্ট ও বাস্তব হয়। এআই–এর কারণে ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ এবং উন্নয়নমূলক সংশোধন–ব্যবস্থার জন্য আইনগতভাবে নির্দিষ্ট এক পক্ষকে জবাবদিহি করতে হবে। আজকের দিনে বিক্রেতার চুক্তি ও দায়–অস্বীকারের আড়ালে এই দায়ের সীমা প্রায়ই ঝাপসা হয়ে যায়।

AI in the Justice System Raises Fears of Errors, Bias, and Loss of Public  Trust

তৃতীয়ত, প্রাপ্য প্রক্রিয়া (due process) থাকতে হবে। কোনো মডেল যদি কোনো সুবিধা অস্বীকার করে বা ঝুঁকির স্কোর বাড়ায়, তাহলে প্রভাবিত ব্যক্তির পর্যালোচনা, সংশোধন এবং মানবিক বিবেচনার সুযোগ থাকতে হবে। ফল চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ কোনো দয়া নয়; গণতন্ত্রে কর্তৃত্বকে সহনীয় করে তোলার এটিই মূল ভিত্তি।

চতুর্থত, স্বচ্ছতা যেন শুধু পণ্য উন্মোচনের সময়ে সীমাবদ্ধ না থাকে। ব্যবস্থার ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ, ঘটনাপঞ্জি (incident) রিপোর্টিং, এবং বিমান নিরাপত্তা বোর্ডের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান থাকা দরকার—যেখানে স্বতন্ত্র তদন্তকারীরা প্রবেশাধিকার পাবে এবং তাদের সুপারিশ বাস্তবে কার্যকর হবে।

সর্বশেষ, সরকারি ক্রয়–বিক্রয় মানদণ্ড স্থির করতে পারে। সরকার যখন এআই কেনে বা তৈরি করে, তখন ব্যাখ্যাযোগ্যতা, অডিট–ট্রেইল এবং চুক্তিভিত্তিক প্রতিকার (redress) বাধ্যতামূলক করা যায়।

এ মুহূর্তটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এআই শৌখিন প্রযুক্তি থেকে অবকাঠামোতে রূপ নিচ্ছে। সার্চ, চিকিৎসা, লজিস্টিকস, আর্থিক খাত, শিক্ষা এবং বিদ্যুৎ গ্রিড পরিচালনা—সবখানেই এটি বোনা হচ্ছে। এগুলো কোনো পার্শ্ব–প্রকল্প নয়; সংকট ও শান্ত—দুই সময়েই যেগুলোর ওপর জনতা নির্ভর করবে, সেসবই। বৈধতা অবহেলা করলে গ্রহণযোগ্যতা থেমে যাবে। ফল হবে অপচয় হওয়া উদ্ভাবন এবং আরও গভীর অবিশ্বাস, যা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে।

আমাদের উদ্ভাবন থামাতে হবে না—কিন্তু সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। উচ্চ–প্রভাবসম্পন্ন ব্যবস্থা তৈরি করা কোম্পানিগুলোকে মডেল কার্ড (ভোক্তা নিরাপত্তা লেবেলের মতো তথ্যপত্র) ও ঝুঁকি–রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে—যেগুলো স্বাধীনভাবে পরীক্ষা করা যায়।

নিয়ন্ত্রকদের উচিত স্পষ্ট সীমা নির্ধারণ করা—কখন কঠোর বাধ্যবাধকতা প্রযোজ্য হবে—এবং অহেতুক নাটক না করে তা প্রয়োগ করা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রকৌশলীদের শেখাতে হবে—কেবল কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে নয়, মানুষের অধিকারের ভিত্তিতেও নকশা করতে। রাষ্ট্রগুলোকে এমন নিয়মের দিকে এগোতে হবে যা একে–অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ—যাতে সীমানা বদলালেই বৈধতা ভেঙে না যায়।

এআই কেবল প্রযুক্তিগত কুশলতার ওপর দাঁড়িয়ে উঠবে বা পড়ে যাবে—এমন নয়। মানুষ যদি এটিকে বৈধ বলে বিশ্বাস করে, তবেই এটি সফল হবে। তার মানে—দৃশ্যমান জবাবদিহি, বোধগম্য ব্যাখ্যা, এবং ভুল হলে প্রতিকার। আমরা যদি বৈধতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখি, এআই একসঙ্গে উদ্ভাবনী ও বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। যদি এটিকে পরবর্তীকথা মনে করি, তবে আবারও পুরোনো দৃশ্যপট ফিরবে: চমকপ্রদ প্রযুক্তি—কিন্তু জনসাধারণের প্রত্যাখ্যানে থেমে যাওয়া।

শাসনব্যবস্থায় বৈধতা কোনো বিলাসিতা নয়; এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা।