নোভা পরিবারের চার নতুন মডেল
অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস বা এডব্লিউএস তাদের নোভা এআই মডেল পরিবারের পরিসর বাড়িয়ে একসঙ্গে চারটি নতুন মডেল ঘোষণা করেছে, যা মূলত করপোরেট গ্রাহকদের জন্য বানানো। বৃহৎ আকারের মডেলগুলো জটিল বিশ্লেষণ, বহুমাত্রিক ডেটা ও কথোপকথন সামলানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে, আর ছোট সংস্করণগুলো অপেক্ষাকৃত কম খরচে নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনে সক্ষম। এর ফলে ব্যাংক, বীমা, স্বাস্থ্যসেবা কিংবা খুচরা ব্যবসা—বিভিন্ন খাতে প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা আলাদা ডেটা পাইপলাইন বানানোর ঝামেলায় না গিয়ে সরাসরি চ্যাটবট, ডকুমেন্ট সারাংশ তৈরি বা গ্রাহক সহায়তা টুল গড়ে তুলতে পারবে।
এই ঘোষণার সঙ্গে এসেছে এক নতুন সেবা, যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ডেটা ব্যবহার করে নোভার কাস্টম সংস্করণ বানাতে পারবে, কিন্তু মূল ডেটা থাকবে তাদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে। লক্ষ্য হলো—বিশেষায়িত ডোমেইন জ্ঞান, টোন কিংবা ভাষার ধরন ঠিক রেখে শুধু নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুযায়ী মডেল সাজানো, যাতে গোপনীয় তথ্য কোনওভাবেই অন্য গ্রাহকের মডেল প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত না হয়। এডব্লিউএস জানিয়েছে, গ্রাহকেরা চাইলে সম্পূর্ণ ম্যানেজড ক্লাউড, আবার চাইলে নিয়ন্ত্রিত বা স্থানীয় পরিবেশ—দুই ক্ষেত্রেই এসব মডেল চালাতে পারবেন, যা কঠোর নিয়ন্ত্রক কাঠামো মানতে হয় এমন খাতে বাড়তি স্বস্তি দেবে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে থাকার চাপ
জেনারেটিভ এআই দৌড়ে এখন বহুজাতিক প্রায় সব বড় প্রযুক্তি কোম্পানিই নিজস্ব মডেল ও পরিষেবা নিয়ে বাজারে নেমেছে। মাইক্রোসফট ও গুগল দীর্ঘদিন ধরে তাদের এআই সহায়ক টুল বিভিন্ন অফিস সফটওয়্যার, কোডিং প্ল্যাটফর্ম ও সার্চ সেবায় গেঁথে দিয়েছে। ক্লাউড অবকাঠামো ব্যবসায় দীর্ঘসময় শীর্ষে থাকা এডব্লিউএসকে অনেকে এআই দিক থেকে তুলনামূলক ধীরগতির বলে সমালোচনা করছিলেন, কারণ তারা অনেক ক্ষেত্রেই পার্টনারশিপের ওপর ভর করছিল। নতুন নোভা প্যাকেজ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দেখাতে চাইছে যে, এক ছাদের নিচে বৃহৎ সাধারণ মডেল থেকে শুরু করে ছোট ও সাশ্রয়ী সব বিকল্পই তারা দিতে পারবে।
তবে করপোরেট গ্রাহকদের শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত হবে, তা নির্ভর করবে বাস্তব পারফরম্যান্স, খরচ আর ইন্টিগ্রেশনের ঝামেলা কতটা কমানো যায়—তার ওপর। অনেক প্রতিষ্ঠানই ইতিমধ্যে একাধিক ভেন্ডরের এআই সমাধান ব্যবহার করছেন; নতুন করে আরেক প্ল্যাটফর্মে ঝুঁকলেই যদি প্রকল্প স্থানান্তর জটিল হয়, তবে লক-ইনের আশঙ্কা বাড়ে। এডব্লিউএস দাবি করছে, তাদের প্ল্যাটফর্মে নিজস্ব নোভার পাশাপাশি ওপেন সোর্স ও থার্ড-পার্টি মডেলের উপস্থিতি গ্রাহকদের বেশি বিকল্প দেবে, যদিও সত্যিকারের আন্তঃসংযোগ কতটা সহজ হবে, তা এখনো দেখা বাকি।

ডেটা নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণের দিকেও জোর দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। কন্টেন্ট ফিল্টার, ঝুঁকিপূর্ণ আউটপুট থামানোর গার্ডরেল আর মডেল কীভাবে আচরণ করছে—এ নিয়ে বিস্তারিত মনিটরিং টুলের কথা বলা হচ্ছে। করপোরেট কমপ্লায়েন্স টিম যেন সহজে বুঝতে পারে কোন বিভাগে কোন এআই টুল ব্যবহার হচ্ছে, কী ধরনের নিয়ম প্রযোজ্য এবং অভ্যন্তরীণ অনুমোদন প্রক্রিয়া কী—এ সবকিছু পরিষ্কারভাবে লগ ও রিপোর্ট আকারে রাখার লক্ষ্যও সামনে আনা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পরিচালনা পর্ষদের চাপ বাড়তে থাকায় এসব প্রতিবেদন এখন অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুমোদন পাওয়ার পূর্বশর্ত হয়ে উঠছে।
শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটি ঘুরে ফিরে আসবে প্রভাব আর লাভের সমীকরণে। নানা পরীক্ষামূলক প্রকল্পের পর অনেক কোম্পানি এখন খরচ কমাচ্ছে, এবং কেবল সেই উদ্যোগগুলো টিকিয়ে রাখতে চাইছে যেগুলো স্পষ্টভাবে উৎপাদনশীলতা বাড়ায় বা নতুন আয় এনে দেয়। এডব্লিউএসের বাজি—একটি প্ল্যাটফর্মে শক্তিশালী সাধারণ মডেল, নিয়ন্ত্রিত কাস্টমাইজেশন আর নমনীয় ডিপ্লয়মেন্ট একত্র করতে পারলে বড় গ্রাহকেরা আরও দীর্ঘমেয়াদে তাদের সঙ্গেই থাকতে চাইবে। আগামী কয়েক ত্রৈমাসিকের ফলেই বোঝা যাবে, এই নোভা কৌশল সত্যিই ক্লাউড এআই বাজারে তাদের অবস্থান মজবুত করল কিনা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

















