দুর্ঘটনা ও নিহত নেতার পরিচয়
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা সোহেল চৌধুরী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার নবীনসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তার মোটরসাইকেলে একটি বাস ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৯টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সোহেল চৌধুরীর বাড়ি মূলত সন্দ্বীপ উপজেলায় হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবারসহ রাউজানের মেডিকেল গেট এলাকায় বসবাস করছিলেন। তিনি স্থানীয় কচুখাইন আহমদিয়া আল-ইসলামিয়া আল-হিকমা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।
ক্ষোভ ও অভিযোগ: ‘পরিকল্পিত হত্যার’ দাবি
দুর্ঘটনার পরপরই হেফাজতের নেতাকর্মীরা দাবি করেন, এই ঘটনা কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা বুধবার সকাল থেকেই চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম–রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। সংগঠনের নেতারা দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের বিচার দাবি জানান।
যান চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ
অবরোধের কারণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা জানান, শত শত যানবাহন আটকে পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়। হাটহাজারী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ি ও রামগড়মুখী সড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পার্বত্য অঞ্চলের সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
পুলিশের অবস্থান ও আলোচনার প্রচেষ্টা
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অবরোধের কারণে বিভিন্ন মহাসড়কে যান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, “আমরা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যাতে তারা অবরোধ তুলে নেয় এবং সড়ক চলাচল স্বাভাবিক হয়।”
প্রেক্ষাপট
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের এই নেতার মৃত্যু সংগঠনটির স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যুর ঘটনায় বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ঘটনার প্রকৃতি নির্ধারণে তদন্ত চলছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
একজন ধর্মীয় নেতার মৃত্যুকে ঘিরে চট্টগ্রামজুড়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছে। তবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে অবরোধ দ্রুত প্রত্যাহার করা জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।