সবুজ স্যান্ড বোয়া (Green Sand Boa) একটি অদ্ভুত অথচ চমৎকার সরীসৃপ, যা পৃথিবীর শুষ্ক ও বালুময় অঞ্চলে বসবাস করে। নামের মধ্যেই আছে এর বাসস্থানের ইঙ্গিত — “স্যান্ড” অর্থাৎ বালু। সাধারণত এরা নিজেদের দেহ বালুর নিচে লুকিয়ে রাখে এবং হঠাৎ করে শিকার ধরতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকাসহ ভারতের রাজস্থান, গুজরাট, পাকিস্তান, ও ইরানের মরুপ্রান্তে এই প্রজাতি দেখা যায়।
দেহের গঠন ও বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য
সবুজ স্যান্ড বোয়ার দেহ ছোট, মোটা এবং অপেক্ষাকৃত গোলাকৃতি। সাধারণত এদের দৈর্ঘ্য ৫০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। দেহের রঙ হালকা সবুজ, জলপাই বা ধূসরাভ সবুজ, যা বালু ও আশপাশের পরিবেশের সঙ্গে মিশে গিয়ে ছদ্মবেশ তৈরি করে।
চোখ দুটি ছোট এবং মাথা অপেক্ষাকৃত চ্যাপ্টা। এদের দেহের আঁশ বা স্কেল অত্যন্ত মসৃণ, ফলে বালুর নিচে সাঁতার কাটার মতো দ্রুত চলাচল করতে পারে।
স্বভাব ও আচরণ
স্যান্ড বোয়া অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির সাপ। এটি বিষধর নয়, বরং একে ‘কনস্ট্রিক্টর’ শ্রেণির সরীসৃপ হিসেবে ধরা হয়, কারণ এটি শিকারকে জড়িয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। দিনের বেলায় এরা অধিকাংশ সময় বালুর নিচে বা কোনো গর্তে লুকিয়ে থাকে, আর রাতে বের হয় শিকার ধরতে।
তাদের খাদ্যতালিকায় থাকে ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, টিকটিকি, ব্যাঙ ও কখনো ছোট পাখির ছানা।
প্রজনন প্রক্রিয়া
সবুজ স্যান্ড বোয়া ডিম পাড়ে না, বরং জীবন্ত সন্তান জন্ম দেয়। এটি একে ‘ভিভিপ্যারাস’ সাপ হিসেবে চিহ্নিত করে। একবারে সাধারণত ৪ থেকে ১৫টি ছানা জন্ম দিতে পারে। এদের প্রজনন মৌসুম সাধারণত বর্ষার পরবর্তী সময় থেকে শরৎকাল পর্যন্ত।
পরিবেশে ভূমিকা ও গুরুত্ব
সবুজ স্যান্ড বোয়া পরিবেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ইঁদুর ও অন্যান্য ছোট প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা কৃষিজমি ও মানববসতির জন্য উপকারী। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এদের উপস্থিতি অপরিহার্য।
স্থানীয় বিশ্বাস ও ভুল ধারণা
বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অঞ্চলে স্যান্ড বোয়া নিয়ে নানা কুসংস্কার প্রচলিত আছে। অনেকেই মনে করেন, এই সাপের চামড়া বা মাংস ঔষধি গুণসম্পন্ন, আবার কেউ কেউ একে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরে নেয়। ফলে পাচারকারীরা প্রায়ই এই সাপ শিকার করে অবৈধভাবে বিক্রি করে। অথচ প্রকৃতপক্ষে এই সাপ মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রজাতি।
সংরক্ষণ ও হুমকি
স্যান্ড বোয়া বর্তমানে সংরক্ষণ-উদ্বেগজনক প্রজাতির তালিকায় রয়েছে। কৃষিজমি সম্প্রসারণ, অবৈধ বালু উত্তোলন, বন উজাড় ও পাচারের কারণে এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অনেক দেশে এখন এই সাপকে সংরক্ষিত প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং বন্যপ্রাণী আইনে এর বেচাকেনা নিষিদ্ধ।
সবুজ স্যান্ড বোয়া প্রকৃতির এক নিঃশব্দ কিন্তু অপরিহার্য উপাদান। এরা ভয়ঙ্কর নয়, বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী এক শান্ত সহচর। মানুষের ভুল ধারণা ও কুসংস্কার যদি দূর করা যায়, তবে এই রহস্যময় সরীসৃপ আবারও নিরাপদে বালুর নিচে তার আশ্রয়ে ফিরতে পারবে।
#সবুজস্যান্ডবোয়া #বন্যপ্রাণীসংরক্ষণ #বাংলাদেশেরসরীসৃপ #প্রকৃতিররহস্য #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 
![Encounter: Common Sand Boa [The Green Ogre]](https://b3453562.smushcdn.com/3453562/wp-content/uploads/2012/04/IMG_7922editName1.jpg?lossy=2&strip=1&webp=1)




















