বিশ শতকের শেষভাগে যখন ইউরোপ জুড়ে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়ছিল, তখন হাঙ্গেরির এক গ্রামীণ প্রান্তে লাস্লো ক্রাসনহরকাই লিখেছিলেন এমন এক উপন্যাস, যা কেবল একটি গ্রামের গল্প নয়, বরং সভ্যতার ভাঙনের মহাকাব্য। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত Satantango (স্যাটানট্যাঙ্গো) আধুনিক ইউরোপীয় সাহিত্যের এক যুগান্তকারী সৃষ্টি। এটি একই সঙ্গে বাস্তবতার গভীর চিত্রণ, এবং একই সঙ্গে একটি রূপক—যেখানে মানুষ, সমাজ, নৈতিকতা ও বিশ্বাস এক অদৃশ্য “নৃত্য”-এ লীন হয়ে যায়।
ক্রাসনহরকাই নিজেই বলেছেন, তাঁর লেখার উদ্দেশ্য “শেষ সময়ের মধ্যে মানুষের চলাচল বোঝা।” Satantango সেই চলাচলের উপন্যাস—এক এমন সমাজের প্রতিচ্ছবি, যেখান থেকে ঈশ্বরও ক্লান্ত হয়ে সরে গেছেন।
লেখক পরিচিতি ও প্রেক্ষাপট
লাস্লো ক্রাসনহরকাই ১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির গিউলা (Gyula) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। সমাজতান্ত্রিক হাঙ্গেরির এক নিস্তরঙ্গ বাস্তবতায় তাঁর বেড়ে ওঠা। তিনি আইন ও সাহিত্য—দুইই অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৮০-এর দশকের গোড়ায় লেখালেখি শুরু করেন।
Satantango তাঁর প্রথম উপন্যাস। এটি লিখতে তাঁর লেগেছিল প্রায় সাত বছর। প্রকাশের পরপরই এটি হাঙ্গেরি ও ইউরোপের সাহিত্যসমাজে আলোড়ন তোলে। ক্রাসনহরকাইয়ের পরবর্তী রচনাগুলির (The Melancholy of Resistance, War & War, Baron Wenckheim’s Homecoming) ভেতরেও এই উপন্যাসের বীজ ছড়িয়ে আছে—বিশেষত সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত সমাজব্যবস্থার প্রতীক, যেখানে মানুষ শূন্যতার সঙ্গে নৃত্য করে।
১৯৮৫ সালের হাঙ্গেরিতে এটি কেবল একটি বই নয়; এটি ছিল এক রাজনৈতিক সাহসিকতা। সমাজতান্ত্রিক সরকারের পতন আসন্ন, মানুষ দিশাহীন, শিল্প ও বিশ্বাসের জগতে হতাশা। Satantango সেই সামগ্রিক ক্লান্তির প্রতিধ্বনি—যেন শেষ সময়ের আগের নীরব গর্জন।
কাহিনির সংক্ষিপ্ত সারাংশ
উপন্যাসের ঘটনা আবর্তিত হয় এক প্রত্যন্ত, ধ্বংসপ্রাপ্ত হাঙ্গেরিয়ান গ্রামের মধ্যে, যা একসময় ছিল সমবায় খামার (collective farm)। এই গ্রামে এখন কেবল কয়েকজন মানুষ বেঁচে আছে—মদ্যপ কৃষক, হতাশ নারী, অসহায় শিশু, এবং কিছু পরিত্যক্ত প্রাণ। বৃষ্টি থামে না, কাদা জমে থাকে, বাতাসে পচন আর মৃত্যুর গন্ধ।
সবকিছু যেন স্থির, মৃতপ্রায়। কিন্তু হঠাৎ খবর ছড়ায়—ইরিমিয়াস এবং তাঁর সঙ্গী পেত্রিনা ফিরে আসছে।
দুজন মানুষ, যাদের সবাই মনে করেছিল মৃত। এখন তারা ফিরে এসে ঘোষণা করে যে তারা নতুন করে গ্রামের ভাগ্য পরিবর্তন করবে। সবাই মনে করে—তারা যেন কোনো দেবদূত বা মুক্তিদাতা। কিন্তু ধীরে ধীরে বোঝা যায়, তারা এক শয়তানি প্রতারণার নকশা নিয়ে এসেছে।
ইরিমিয়াস গ্রামের মানুষদের প্রলোভন দেখায়—সে তাদের শহরে নিয়ে যাবে, নতুন খামার গড়ে তুলবে, সমৃদ্ধি ফেরাবে। কিন্তু বাস্তবে সে তাদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়, ভেঙে দেয় শেষ আশাটুকুও।
উপন্যাসের কাঠামোটি ১২টি অধ্যায়ে বিভক্ত—যা “ট্যাঙ্গো” নৃত্যের মতো সাজানো। প্রথম ছয়টি অধ্যায় “আগানো”, পরের ছয়টি “পেছানো”—অর্থাৎ ৬ ধাপ সামনে, ৬ ধাপ পিছনে। ফলে উপন্যাসটি নিজেই এক নৃত্য—একবার অগ্রসর, একবার প্রত্যাবর্তন, এক চিরন্তন পুনরাবৃত্তি।
শেষে সবাই যেখানে শুরু করেছিল, সেখানেই ফিরে আসে—কিন্তু আরও হতাশ, আরও পচে যাওয়া।
গঠন ও শৈলী: নৃত্যের মতো বর্ণনা
Satantango-এর ভাষা একেবারেই আলাদা। এটি কোনো প্রচলিত বর্ণনা নয়। এখানে ক্রাসনহরকাই লম্বা, প্রবাহমান, প্রায় শেষহীন বাক্য ব্যবহার করেছেন। অনেক সময় একটি বাক্য দুই থেকে তিন পৃষ্ঠা জুড়ে চলে। এতে পাঠক যেন থামতে না পারে—যেন সেও ট্যাঙ্গোর ছন্দে নাচছে, থেমে গেলে পড়ে যাবে।
এই “অবিরাম বাক্য” ক্রাসনহরকাইয়ের স্বাক্ষর। এতে তিনি বাস্তবতা ও চিন্তার সীমানা ভেঙে দেন। চরিত্রের মনের ভেতর ও বাইরের পৃথিবী এক হয়ে যায়।
প্রচলিত উপন্যাসে যেমন “ঘটনা” প্রধান, এখানে “চেতনা”ই ঘটনা।
লেখক তৃতীয় পুরুষ বর্ণনাকারী ব্যবহার করলেও, তাঁর ভাষা প্রায় “মনোলগ”-এর মতো। যেন চরিত্র, লেখক, পাঠক—সবাই একই প্রবাহে ডুবে গেছে।
এই গঠন পাঠককে বাধ্য করে বইটি ধীরে, মনোযোগ দিয়ে পড়তে। Satantango কোনো গল্প নয়, এক অভিজ্ঞতা।
প্রধান চরিত্রসমূহ ও প্রতীকী অর্থ
ইরিমিয়াস (Irimiás)
ইরিমিয়াস উপন্যাসের সবচেয়ে জটিল চরিত্র। তিনি একই সঙ্গে এক “উদ্ধারকর্তা” ও এক “প্রতারক”। গ্রামবাসীরা তাঁকে ঈশ্বরের দূত ভাবে, কিন্তু পাঠক জানে—তিনি এক ধূর্ত, শয়তানি চরিত্র।
তাঁর মুখে আশার কথা, কিন্তু প্রতিটি কাজে প্রতারণা। তিনি যেন শয়তানেরই এক আধুনিক রূপ—যে সুন্দর ভাষায় মানুষকে অন্ধকারে টেনে নিয়ে যায়।
ইরিমিয়াস আসলে মানুষের বিশ্বাসের দুর্বলতার প্রতীক। মানুষ যখন আশা হারায়, তখন সে যে-কাউকে ঈশ্বর বানিয়ে ফেলে।
এস্তিকে (Estike)
এক শিশু মেয়ে, যে একদিকে নিষ্পাপ, অন্যদিকে ভয়াবহ এক প্রতীকে পরিণত হয়। উপন্যাসে তার মৃত্যু (সে আত্মহত্যা করে) যেন পুরো গ্রামের আত্মার মৃত্যু।
এস্তিকে নির্দোষ, কিন্তু সমাজের নোংরা বাস্তবতায় সে টিকতে পারে না।
তার মৃত্যুর পর গ্রামের মানুষ প্রথমবার কিছু অনুভব করে—কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি।
ফুতাকি (Futaki)
একজন কৃষক, যে সন্দেহপ্রবণ এবং নৈতিকভাবে দ্বিধাগ্রস্ত। সে জানে ইরিমিয়াস প্রতারক হতে পারে, তবু কিছু করতে পারে না।
ফুতাকি হলো সাধারণ মানুষের প্রতীক—যে জানে সত্য, কিন্তু সাহস করে কিছু বলতে পারে না।
পেত্রিনা (Petrina)
ইরিমিয়াস-এর সহযোগী, এক রক্তশূন্য যান্ত্রিক চরিত্র। তাঁর উপস্থিতি ঠান্ডা, কিন্তু ভয়ানক।
ডক্টর (The Doctor)
একজন একাকী মানুষ, যিনি দূর থেকে সব পর্যবেক্ষণ করেন—গ্রামের নষ্ট জীবন, মানুষের পতন, প্রতারণা—সবই তিনি লেখেন।
তিনি যেন লেখক নিজেই—অন্ধকারের সাক্ষী। শেষ পর্যন্ত তিনিও পাগল হয়ে নিজের ঘরে বন্দি হয়ে যান।
থিম ও ভাবদর্শন
পতন ও পুনরাবৃত্তি
পুরো উপন্যাসটাই পতনের প্রতীক। সমাজতন্ত্রের পতন, নৈতিকতার পতন, মানুষের পতন—সব একত্রে ঘটছে।
কিন্তু এই পতনের মধ্যেও এক “ছন্দ” আছে—যেমন ট্যাঙ্গো নৃত্যে থাকে।
ক্রাসনহরকাই যেন বলছেন, মানবসভ্যতার ইতিহাসই এক অন্তহীন পতন—একই ভুল, একের পর এক পুনরাবৃত্তি।
বিশ্বাস ও প্রতারণা
ইরিমিয়াস-এর প্রতি গ্রামের মানুষের অন্ধ বিশ্বাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, মানুষ কীভাবে সবসময় “উদ্ধারকর্তা” খোঁজে।
রাজনৈতিক নেতা, ধর্মগুরু, বণিক—সবাই সেই শূন্যতা পূরণ করে।
কিন্তু শেষমেশ দেখা যায়, সেই বিশ্বাসই ধ্বংসের কারণ।
প্রাকৃতিক ও মানবিক পচন
বৃষ্টি, কাদা, ধুলা, পচা গন্ধ—পুরো পরিবেশ এক মৃতপ্রায় জীবনের প্রতীক।
প্রকৃতি এখানে আর পবিত্র নয়; সে-ও ক্লান্ত, যেমন মানুষ।
গ্রাম যেন পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি—যেখানে সবকিছু ধীরে ধীরে পচে যাচ্ছে।
নৈরাজ্য ও নিয়তির সীমাবদ্ধতা
উপন্যাসের কেউই নিজের ভাগ্য বদলাতে পারে না। তারা যেন এক যান্ত্রিক ছন্দে চলতে থাকে।
কোনো সিদ্ধান্তই মুক্ত নয়; সবকিছু যেন আগেই নির্ধারিত।
এই নৈরাজ্যের ভেতরে ক্রাসনহরকাই “অস্তিত্ববাদী” দর্শন প্রতিষ্ঠা করেন—মানুষ অর্থ খোঁজে, কিন্তু কিছুই পায় না।
ধর্ম ও শয়তানী রূপক
“Satantango” নামটিই ইঙ্গিতপূর্ণ—Satan (শয়তান) + Tango (নৃত্য)।
মানুষের জীবন যেন শয়তানের সঙ্গে নাচা—এক চিরন্তন প্রলোভন ও পতনের ছন্দ।
ইরিমিয়াস এই শয়তান-নৃত্যের মুখ্য নৃত্যশিল্পী।
ভাষা, রূপ ও গতি
ক্রাসনহরকাইয়ের ভাষা কোনোভাবেই সহজ নয়। তিনি এক ধরনের “লিরিকাল গদ্য” ব্যবহার করেন—যেখানে কবিতার মতো ধ্বনি ও তাল আছে, কিন্তু অর্থের ভারও প্রবল।
উদাহরণস্বরূপ, একটি দৃশ্য—
“বৃষ্টি যেন থামতে জানে না। একটানা, মলিন, বিষণ্ণ সুরে তা মাটির ওপর ঝরছে। মানুষ ঘুমায়, জেগে ওঠে, আবার ঘুমায়, আর বৃষ্টি থামে না।”
এই একঘেয়েমিই তার সৌন্দর্য—এক নিরবচ্ছিন্ন মৃত্যু-সংগীত।
তিনি প্রায়ই বাক্যের ভেতরে চেতনা পরিবর্তন করেন—কখনো চরিত্রের ভাবনা, কখনো বর্ণনাকারীর, কখনো প্রাকৃতিক শব্দ। ফলে ভাষা একাধিক স্তরে কাজ করে।
এই ধরণ অনেকের কাছে “ক্লান্তিকর”, কিন্তু যারা এতে ঢুকে পড়তে পারে, তাদের কাছে এটি এক গভীর ধ্যান।
প্রতীক ও দর্শন
বৃষ্টি ও কাদা
প্রতীক হিসেবে বৃষ্টি উপন্যাসের সর্বত্র ছায়া ফেলে। এটি ধোয়া নয়, বরং পচনের প্রতীক। বৃষ্টি থামে না মানে—অন্ধকার থামে না।
ইরিমিয়াস
তিনি ধর্মীয় প্রতীক—যিনি নিজেকে ঈশ্বর বলে চালান, কিন্তু আসলে ধ্বংসের দূত। ক্রাসনহরকাইয়ের ঈশ্বর “নীরব”, আর মানুষের স্থানে শয়তান কথা বলে।
ট্যাঙ্গো
নৃত্য এখানে জীবনচক্রের প্রতীক—আগানো ও ফিরে আসা। প্রতিটি মানুষের জীবন যেন সেই ছন্দে বাঁধা।
এস্তিকের মৃত্যু
নির্দোষতার মৃত্যু, মানবতার শেষ চিহ্নের বিলোপ। তার আত্মহত্যা যেন বিশ্ববোধের এক বিপর্যয়।
ডাক্তারের ঘর
এটি “দর্শকের দৃষ্টিভঙ্গি”—যে দেখছে, লিখছে, কিন্তু কিছু বদলাতে পারছে না।
যেন সাহিত্য নিজেই—দেখতে পারে, কিন্তু বাস্তবকে রক্ষা করতে পারে না।
চলচ্চিত্র রূপ: বেলা তারের Sátántangó
১৯৯৪ সালে হাঙ্গেরিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা বেলা তার এই উপন্যাস অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
এই চলচ্চিত্রটি চলচ্চিত্র ইতিহাসের এক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। তার এবং ক্রাসনহরকাই একসঙ্গে কাজ করেন, এবং এই সিনেমা মূল বইয়ের ছন্দ পুরোপুরি ধরে রাখে।
চলচ্চিত্রের সাদাকালো ছায়া, ধীরগতির ক্যামেরা মুভমেন্ট, এবং অনন্ত বৃষ্টির দৃশ্য যেন উপন্যাসের “নৃত্য”-কে দৃশ্যমান করে তোলে।
অনেকে বলেন, উপন্যাস না পড়লেও সিনেমাটি Satantango-র আসল স্পিরিট বোঝাতে সক্ষম। তবে বইটি না পড়লে সেই শব্দের সঙ্গীত, মনের ঝড় ও নৈঃশব্দ্য বোঝা অসম্ভব।
সাহিত্যসমালোচনামূলক দৃষ্টিতে Satantango
আধুনিকতা ও পরাধুনিকতার সংযোগ
Satantango একদিকে আধুনিকতাবাদী, কারণ এটি বাস্তব, সমাজ ও অস্তিত্বকে বিশ্লেষণ করে। অন্যদিকে এটি পরাধুনিকও—কারণ এতে প্রচলিত কাহিনির গঠন ভেঙে গেছে, সত্যের পরিবর্তে প্রশ্নই বেশি।
কাফকার উত্তরসূরি
অনেকে ক্রাসনহরকাইকে “হাঙ্গেরির কাফকা” বলেন। তাঁর ভাষা ও নিঃসঙ্গতার চিত্রণ কাফকার মতোই অন্ধকারময় ও অনিবার্য।
সমাজতান্ত্রিক পতনের দলিল
এটি কোনো সরাসরি রাজনৈতিক উপন্যাস নয়, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্তঃসারশূন্যতা এখানে নগ্নভাবে প্রকাশিত।
গ্রামের সমবায় খামার—রাষ্ট্রের প্রতীক। একসময় যা আদর্শ ছিল, এখন সেটি কেবল ধ্বংসস্তূপ।
নৈতিক দর্শন
ক্রাসনহরকাই প্রশ্ন তোলেন—যদি ঈশ্বর না থাকেন, তবে নৈতিকতা কোথা থেকে আসে?
ইরিমিয়াস মানুষকে বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু ঈশ্বরের নীরবতার মধ্যে শয়তানের কণ্ঠই সবচেয়ে শ্রুতিমধুর।
পাঠকের অভিজ্ঞতা
Satantango পড়া মানে কোনো গল্প জানা নয়; এটি এক “ধীর বিপর্যয়” অভিজ্ঞতা। প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা মনে হবে ভারী, কিন্তু ধীরে ধীরে পাঠক ডুবে যায় এক আবেশে।
বইটি পড়তে গিয়ে আপনি অনুভব করবেন—
- একটানা বৃষ্টির শব্দ,
- কাদা মাড়ানোর ক্লান্তি,
- মানুষের পতনের গন্ধ,
- এবং এক গভীর, নিঃসঙ্গ প্রতিধ্বনি: “সব কিছু আবার ঘটবে।”
এই বই পাঠককে নাড়া দেয়, কারণ এটি কেবল অন্যদের পতনের গল্প নয়—এটি আমাদের সকলের পতনের কাহিনি।
Satantango আধুনিক সাহিত্যের এক গূঢ় ও মহান সৃষ্টি। এটি কোনো কাহিনি নয়, এটি এক প্রলয়ের সংগীত—যেখানে মানুষ ও শয়তান একসঙ্গে নাচে।
লাস্লো ক্রাসনহরকাই এই উপন্যাসের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে সাহিত্য কেবল সৌন্দর্যের নয়, ভয় ও বিভীষিকারও মাধ্যম হতে পারে।
তিনি দেখিয়েছেন, সভ্যতার পতন কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়; এটি এক নৃত্যের মতো ধীরে, ছন্দে, নিঃশব্দে ঘটে—যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপই আমাদের পরাজয়ের দিকে।
শেষ পর্যন্ত Satantango আমাদের শেখায়—
“মানুষ যতই চেষ্টা করুক, সে তার অন্ধকার থেকে মুক্ত নয়। কারণ অন্ধকারই তার একমাত্র নৃত্যসঙ্গী।”