০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রামে কনসার্টে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ যুবক, ছাত্রদলের কর্মী বলে দাবি

কনসার্টে গোলাগুলিতে আহত তরুণ

চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত কনসার্টকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন নাজির শরিফ (২৩) নামে এক তরুণ, যিনি নগর ছাত্রদলের কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে। ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নাজির পুলিশের গুলিতেই আহত হন।

গুলিবিদ্ধ নাজির শরিফ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার বাঁ কাঁধের নিচে গুলি লেগেছে এবং শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

ছাত্রদল নেতার বক্তব্য

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সদস্যসচিব শরিফুল ইসলাম বলেন, “নাজির শরিফ ওমরগনি এমইএস কলেজ ছাত্রদলের কর্মী, যদিও দলে তার কোনও পদ নেই। কনসার্ট এলাকায় সংঘর্ষের খবর শুনে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, এবং গুলিতে আহত হন। ঘটনার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

চট্টগ্রামে কনসার্টে 'জয় বাংলা' স্লোগানের পর গোলাগুলি, আহত ২ | জয়নিউজবিডি

ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ায়

ঘটনার পর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায় ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, কনভেনশন সেন্টারের ফটকের বাইরে জনতার ভিড় জমে আছে। সেখানে কিছু লোক ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে। এ সময় সাদা পোশাকের এক পুলিশ সদস্য তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছেন। তার পেছনে আরও কয়েকজন পুলিশ শটগান হাতে দ্রুত ছুটে আসেন, এবং মুহূর্তেই জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

সংঘর্ষের কারণ

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, কনসার্ট শুরু হওয়ার পর সন্ধ্যায় জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘আর্টসেল’ মঞ্চে ওঠে। দুটি গান পরিবেশনের পর তারা কিছু সমস্যার কারণে গান বন্ধ করে দেয়। এ সময় এশার আজানের আগে কনসার্টের সামনের দিকে কয়েকজন যুবক ‘শেখ হাসিনা’ ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। এতে কনসার্টে উপস্থিত স্থানীয় বিএনপি-ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তির সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে।

সংঘর্ষের সময় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের পর কনসার্টটি বন্ধ হয়ে যায়।

পুলিশের বক্তব্য

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) শ্রীমা চাকমা বলেন, “জিইসি কনভেনশন হলে মোটরসাইকেল কোম্পানি ‘হোন্ডা’-এর একটি অনুষ্ঠান চলছিল, যার অংশ হিসেবে একটি কনসার্টও আয়োজন করা হয়। তবে কনসার্টের জন্য আয়োজকরা কোনো অনুমতি নেয়নি। একপর্যায়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল তরুণ ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ সেখানে গিয়ে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”

সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা

ঘটনার পরদিন রবিবার সকালে খুলশী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। মামলায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার ১০ জনকে এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম জানান, “শনিবার রাতের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকেই দশজনকে গ্রেফতার করা হয়, এবং তাদের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে।”

চট্টগ্রামের এই কনসার্টে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা আবারও জননিরাপত্তা, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও আহত যুবকের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, তবুও ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া এর পেছনের প্রকৃত কারণ ও দায় নির্ধারণ সম্ভব নয়।

চট্টগ্রাম, কনসার্ট, সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ, ছাত্রদল, পুলিশ, আর্টসেল, জয়বাংলা, মামলা, সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামে কনসার্টে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ যুবক, ছাত্রদলের কর্মী বলে দাবি

১২:৩৯:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

কনসার্টে গোলাগুলিতে আহত তরুণ

চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত কনসার্টকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন নাজির শরিফ (২৩) নামে এক তরুণ, যিনি নগর ছাত্রদলের কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে। ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নাজির পুলিশের গুলিতেই আহত হন।

গুলিবিদ্ধ নাজির শরিফ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার বাঁ কাঁধের নিচে গুলি লেগেছে এবং শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

ছাত্রদল নেতার বক্তব্য

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সদস্যসচিব শরিফুল ইসলাম বলেন, “নাজির শরিফ ওমরগনি এমইএস কলেজ ছাত্রদলের কর্মী, যদিও দলে তার কোনও পদ নেই। কনসার্ট এলাকায় সংঘর্ষের খবর শুনে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, এবং গুলিতে আহত হন। ঘটনার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

চট্টগ্রামে কনসার্টে 'জয় বাংলা' স্লোগানের পর গোলাগুলি, আহত ২ | জয়নিউজবিডি

ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ায়

ঘটনার পর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায় ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, কনভেনশন সেন্টারের ফটকের বাইরে জনতার ভিড় জমে আছে। সেখানে কিছু লোক ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে। এ সময় সাদা পোশাকের এক পুলিশ সদস্য তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছেন। তার পেছনে আরও কয়েকজন পুলিশ শটগান হাতে দ্রুত ছুটে আসেন, এবং মুহূর্তেই জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

সংঘর্ষের কারণ

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, কনসার্ট শুরু হওয়ার পর সন্ধ্যায় জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘আর্টসেল’ মঞ্চে ওঠে। দুটি গান পরিবেশনের পর তারা কিছু সমস্যার কারণে গান বন্ধ করে দেয়। এ সময় এশার আজানের আগে কনসার্টের সামনের দিকে কয়েকজন যুবক ‘শেখ হাসিনা’ ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। এতে কনসার্টে উপস্থিত স্থানীয় বিএনপি-ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তির সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে।

সংঘর্ষের সময় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের পর কনসার্টটি বন্ধ হয়ে যায়।

পুলিশের বক্তব্য

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) শ্রীমা চাকমা বলেন, “জিইসি কনভেনশন হলে মোটরসাইকেল কোম্পানি ‘হোন্ডা’-এর একটি অনুষ্ঠান চলছিল, যার অংশ হিসেবে একটি কনসার্টও আয়োজন করা হয়। তবে কনসার্টের জন্য আয়োজকরা কোনো অনুমতি নেয়নি। একপর্যায়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল তরুণ ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ সেখানে গিয়ে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”

সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা

ঘটনার পরদিন রবিবার সকালে খুলশী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। মামলায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার ১০ জনকে এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম জানান, “শনিবার রাতের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকেই দশজনকে গ্রেফতার করা হয়, এবং তাদের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে।”

চট্টগ্রামের এই কনসার্টে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা আবারও জননিরাপত্তা, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও আহত যুবকের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, তবুও ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া এর পেছনের প্রকৃত কারণ ও দায় নির্ধারণ সম্ভব নয়।

চট্টগ্রাম, কনসার্ট, সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ, ছাত্রদল, পুলিশ, আর্টসেল, জয়বাংলা, মামলা, সারাক্ষণ_রিপোর্ট