আফগানিস্তান আবারও প্রমাণ করল যে তারা এখন আর ছোট দল নয়। বিলাল সামির আগুনঝরা বোলিংয়ে বাংলাদেশকে মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে দিয়ে তারা জিতেছে ২০০ রানের বিশাল ব্যবধানে। এর মাধ্যমে ৩–০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়েছে আফগানরা।
আফগানিস্তানের দাপুটে সিরিজ জয়
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশকে ২০০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ৩–০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে আফগানিস্তান। এই জয় শুধু তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়নি, বরং দেখিয়েছে ৫০ ওভারের খেলায় তাদের ক্রমবর্ধমান পরিপক্বতা ও আধিপত্য।
সামির দুর্ধর্ষ বোলিং—বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যস্ত
২২ বছর বয়সী তরুণ পেসার বিলাল সামি বল হাতে অসাধারণ এক স্পেল উপহার দেন। ৫ উইকেট নেন মাত্র ৩৩ রানে। এটাই তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট। তার নিখুঁত গতি ও ধারালো দৈর্ঘ্যের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটাররা একে একে ধসে পড়ে।
২৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ দল ২৭.১ ওভারে মাত্র ৯৩ রানেই গুটিয়ে যায়। এটি ছিল আফগানিস্তানের ইতিহাসে এই মাঠে সবচেয়ে বড় জয়।
ইব্রাহিম ও নাবির ব্যাটে শক্ত ভিত
এর আগে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান ৯ উইকেটে ২৯৩ রান সংগ্রহ করে। ইনিংসের ভিত্তি গড়েন ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান। তিনি খেলেন ৯৫ রানের ধীরস্থির ইনিংস। শেষ দিকে তাণ্ডব চালান অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নাবি, যিনি মাত্র ৩৭ বলে করেন ৬২ রান।
নাবির ইনিংসে ছিল ৫টি ছক্কা ও ৪টি চার। ইনিংসের শেষ দুই ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজ ও হাসান মাহমুদের বোলিংয়ে ৪৪ রান তোলেন তিনি। এতে আফগানিস্তানের স্কোর পৌঁছায় ম্যাচ জেতার উপযুক্ত অবস্থানে।
রশিদের জাদুকরী স্পিনে বাংলাদেশের পতন
বাংলাদেশের ইনিংস শুরু হতেই বিপর্যয়। রশিদ খান তার প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন ওপেনার সাইফ হাসানকে, যিনি একমাত্র ব্যাটার হিসেবে কিছুটা লড়াই করে ৪৩ রান করেন। এরপর বাকি ব্যাটাররা কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
রশিদ খান ৬ ওভারে ১২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন, দেখান তার স্বাক্ষর লেগ স্পিনের নিপুণতা। আজমাতউল্লাহ ওমরজাই নেন ১ উইকেট, আর অভিষিক্ত এ.এম. গাজনফার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
বাংলাদেশ তাদের শেষ ৯টি উইকেট হারায় মাত্র ৫৮ রানের ব্যবধানে।
হতাশায় ডুবে বাংলাদেশ দল
বাংলাদেশের ব্যাটাররা শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায়। আফগান বোলারদের গতিময় পেস ও স্পিন সামলাতে পারেননি কেউই। দলের ক্যাপ্টেন মেহেদি হাসান মিরাজ বল হাতে ৬৭ রান দেওয়ার পর ব্যাট হাতে দ্রুত আউট হন।
২০তম ওভারেই অর্ধেক ব্যাটার প্যাভিলিয়নে ফেরে মাত্র ৭০ রানে। শেষ দিকে হাসান মাহমুদের ২৩ বলে ৯ রান ছিল ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ—যা পুরো ব্যাটিং ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
এই ম্যাচে আফগানিস্তান শুধু জয়ই পায়নি, বরং বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের শক্ত অবস্থানের বার্তাও দিয়েছে। বিলাল সামির এই পাঁচ উইকেটের ঝলক আফগান দলের নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনা ও দলের গভীরতা স্পষ্ট করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য এটি ছিল এক লজ্জাজনক রাত—যেখানে ব্যাটে-বলে কোনো প্রতিরোধই গড়ে উঠেনি।
বাংলাদেশ_আফগানিস্তান #ওয়ানডে_সিরিজ #বিলাল_সামি #রশিদ_খান #মোহাম্মদ_নাবি #বাংলাদেশ_ক্রিকেট #সারাক্ষণ_রিপোর্ট