১১:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
গভীর রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন জুলাই চার্টার স্বাক্ষর ঘিরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চট্টগ্রামে ছুরিকাঘাতে নিহত দুই ছাত্রদল নেতা পোশাক রপ্তানিকারক কারখানার সঙ্গে মিরপুর ট্র্যাজেডির কোনো সম্পর্ক নেই—বিজিএমইএর স্পষ্ট বার্তা মিরপুরের কেমিক্যাল গুদামের ধ্বংসস্তূপে তল্লাশি চলবে আরও তিন দিন নববিবাহিত জয়-রাজিয়া গত সপ্তাহে কাজ নিয়েছিলেন গার্মেন্টসে, আগুনে প্রাণ হারালেন দু’জনই ব্রিটিশ অভিজাত শ্রেণি: পরিবর্তিত সময়ে ঐতিহ্য রক্ষা ও সামঞ্জস্যের প্রচেষ্টা আইনস্টাইন: একজন মহান বিজ্ঞানী, কিন্তু তার জীবন ছিল জটিল গ্রিনউইচের নেতৃত্বে ভেনাসের গতিপথ পর্যবেক্ষণ: একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত আমেরিকার নাগরিকত্বধারী ও তথাকথিত গণতান্ত্রিক, পরিবেশবাদীদের দিন দ্রুতই শেষ হবে

আমেরিকার নাগরিকত্বধারী ও তথাকথিত গণতান্ত্রিক, পরিবেশবাদীদের দিন দ্রুতই শেষ হবে

  • স্বদেশ রায়
  • ০৮:০০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • 126

মালালা ইউসুফজাই লেখাপড়া শিখতে চেয়েছিল। যে কারণে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। মালালাকে পরিবারের বাইরের মানুষ তার শিক্ষার আগ্রহকে বাধা দেওয়ার জন্য শারীরিকভাবে হামলা করেছিল। তৃতীয় বিশ্বে মালালা একজন নন, কোটি কোটি। পরিবারের গঞ্জনাও যেমন সইতে হয়, তেমনি চোখের জল মুছে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। তার পরে “রাধার পরে খাওয়া আর খাওয়ার পরে রাধা—এক চাকাতেই বাইশ বছর বাধা।” আবার তারা শক্ত হাতে কাজ করে সংসারকেও বদলে দেয়। সন্তানকে নতুন জগতে নিয়ে যায়।

তবে মেয়েদের জন্য এই ছবি কি কেবল তৃতীয় বিশ্বে? কোভিড-পরবর্তী মানসিক সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যায় আমেরিকাতে বেশি ভুগছে নারীরা। তাদের পরিবার থেকে সে ভাবে যত্ন নেওয়া হয় না। এমনকি কোভিডে ওয়ার্ক ফ্রম হোম থেকে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে না পেরে যারা চাকরি হারিয়েছে, তাদের সংখ্যা বা শতকরা হিসেবে নারী বেশি।

এই মেয়েদের অনেকেই শিক্ষিতা। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব তাদেরকে সামনে এনে তৃতীয় বিশ্বকে তাদের মুখ দিয়ে জ্ঞান দেয় না। অন্যদিকে মালালা যে লেখাপড়া শিখে পারেনি, তার আগেই তাকে দিয়ে শিক্ষা নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ায়—তাই শুনে সকলকে হাততালি দিতে হয়। এমনকি শেষ অবধি তাকে শান্তিতে একখানা নোবেলও দিয়ে দেওয়া হয়।

স্কুলে পড়তো গ্রেটা থুনবার্গ। পরিবেশ কী, কেন শিল্পায়ন, আর শিল্পায়নে তার কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে—আবার পৃথিবীর সাতশ কোটি মানুষকে বাঁচার জন্য শিল্পায়ন কতটা দরকার—এসব বোঝার আগেই তাকে পরিবেশবাদী বানিয়ে ফেলা হলো। শিশুসুলভ বক্তব্যগুলো তৃতীয় বিশ্বের জ্ঞানচর্চার মাধ্যম হয়ে গেল।

ঠিক তেমনি এখন বলা হচ্ছে মরক্কো থেকে মাদাগাস্কার অবধি এক শ্রেণির ক্ষুব্ধ তরুণ গণতন্ত্র দিচ্ছে পৃথিবীতে। এই তরুণদের গণতন্ত্রবোধ ও শিক্ষাগত অবস্থান মানের দিক থেকে কোথায়? যে সব দেশে এই তথাকথিত গণতন্ত্রের জন্য বিপ্লব হয়েছে, তাদের অনেক দেশের শিক্ষাগত মান সে দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশনকে সিঙ্গাপুর ফাউন্ডেশান কোর্স হিসেবে দেখছে, অর্থাৎ ‘ও’ লেভেলের নিচে।

বাস্তবে ভালো ছাত্রছাত্রীরা বা যারা পড়াশোনা করে, তারা মোটামুটি শিক্ষাজীবন শুরু করে আট থেকে নয় বছর পড়াশোনার পরে ‘ও’ লেভেল পাস করে। তাহলে যদি তার নিচে হয়, এটা পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি লেভেল ধরা যেতে পারে। এদের অধিকাংশই মাতৃভাষা শুদ্ধভাবে লিখতে বা বলতে পারে না, তেমনি অন্য একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভাষা বা শিক্ষার অপর মূল বাহন গণিতও জানে না।

Madagascar: the country that's poor but not poor enough for aid | Madagascar | The Guardian

এইসব দেশের এই ধরনের ছেলে মেয়েরা গণতন্ত্র দিচ্ছে তাদের দেশের মানুষকে। কিন্তু মরক্কো থেকে মাদাগাস্কার পর্যন্ত যদি হিসাব করা হয়—তাহলে দেখা যাচ্ছে মাদাগাস্কারে এখনও কী হবে তা জানা যাচ্ছে না। সবে মাত্র সামরিক শাসন জারি হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে জানা যাবে কোন দিকে যাচ্ছে। তবে মরক্কো থেকে নেপাল অবধি আবার সেই স্বৈরাচার ও দুর্নীতি শেকড় গেড়ে বসেছে আরও কঠিনভাবে।

জাপান টাইমসে ব্রহ্ম চেলানি লিখেছেন, নেপালে যে বিচারপতিকে গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা হলো—তার স্বামীর বিমান ছিনতাইয়ের বিষয়টি কেউ সামনে আনলো না। ব্রহ্ম চেলানির এই প্রশ্নের পরে আরও বলা যায়, যদি সত্যি অর্থে প্রকৃত বিচারক হন, তাহলে যে কোনো অপরাধ স্বপ্রণোদিত হয়ে যে কোনো সময়ে তিনি বিচার করার ক্ষমতা রাখেন। তিনি কি সে বিচার করেছিলেন প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন? করেননি। তাছাড়া নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড প্রশ্ন রেখেছেন—সেনাবাহিনী কেন পার্লামেন্ট ভবন রক্ষা করলো না?

জাপান টাইমসে ব্রহ্ম চেলানি প্রশ্ন তুলেছেন, এই সব দেশগুলোতে যা হয়েছে ক্যাপিটল হিলেও তো প্রায় তেমনটি ঘটেছিল। সেটা সন্ত্রাসী কার্যক্রম হলে এগুলো বিপ্লব কেন?

এগুলো তৃতীয় বিশ্বের সামনে কেন বিপ্লব হিসেবে হাজির করা হয়—তার অন্যতম একটি কারণ, তৃতীয় বিশ্বকে দুইভাবে এই চমক দেওয়া হয়। প্রথমে মালালা, গ্রেটা থুনবার্গের মতো শিশুদেরকে হিরো বানিয়ে। ভাবখানা এমন যে, এত ছোট শিশুরা বুঝতে পারছে, আর তোমরা বুঝতে পারছ না। তার পরে তাদের কারো কারো গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। তৃতীয় বিশ্বের মানুষ মনে করে শান্তিতে নোবেল পেয়েছে—অর্থাৎ মানুষটি তাহলে দেবতার কাছাকাছি হবে।

মালালার দেশটি তো এক সময়ে শিক্ষিত ছিল। কারা সেখানে এই অশিক্ষার অন্ধকার প্রবেশ করিয়েছে—সে ইতিহাস কি লেখা হয়? আসলে তো পৃথিবীতে ইতিহাসের চেয়ে ন্যারেটিভই দাঁড় করানো হয় বেশি। বাস্তব সত্য সামনে আসে কম। রুশ বিপ্লবের পরে সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় সে দেশে জারের প্রাসাদগুলোতে যেমন কমরেডরা উঠে পড়েছিলেন—বাস্তবে এই সব বিপ্লবের পরেও কি তাই ঘটে না?

শেখ হাসিনার শাসনামলের শেষের দিকে দেখতাম ছাত্রলীগের কিছু প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হেলিকপ্টারে যাতায়াত করতেন। আর একদল কয়েক কোটি টাকার দামের গাড়ি চড়তেন। বাংলাদেশে বিপ্লব শেষে এক বিপ্লবী মাত্র কয়েক কিলোমিটার এলাকায় কয়েক শ কম্বল বিলাতে ২৮ বার, না কতবার হেলিকপ্টার চড়লেন। তরুণ সাংবাদিক নাজমুস সাকিবের একটা ভিডিওতে তার পূর্ণ হিসাব আছে। আর ঠিক কোটি টাকা দামের গাড়িবহর তো যাদের মানিব্যাগ ছিল না, তাদের দেখা যাচ্ছে।

তাদের কিন্তু কোনো দোষ নেই। বরং ছাত্রলীগের থেকে তারা এক্ষেত্রে স্বচ্ছ। কারণ, ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। কিন্তু এরা ১৯৪৭-এর বন্দোবস্তের কথা বলছে। ১৯৪৭-এর বন্দোবস্ত মানেই তো পাকিস্তান হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মহেন্দ্র ঘোষ তার বিশাল বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন আর সবুর খান ওই বাড়ির মালিক হয়ে গেলেন। উঠে পড়লেন তিনি সেখানে কোনো বৈধ দলিলপত্র ছাড়া।

দোষের কিছু নেই। ১৯৪৭-এর আগে ১৯১৭-তে তো রুশ বিপ্লব শেষে জারের বাড়িতে এভাবেই কমরেডরা উঠে পড়েছিল। সেখানেও শ্রমিক শ্রেণি ছিল—এখানেও রিকশাওয়ালার ছেলে গিয়ে পঞ্চাশ লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছে। পিয়নের ছেলে চব্বিশ বছর বয়সে বিশাল অফিস খুলে বসছে। সাফাই হিসেবে বলা হচ্ছে আলাদিনের দৈত্য এসেছে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে।

অবশ্য এসব পশ্চিমাদের চোখে বিপ্লব। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে জাতিসংঘের মহাসচিবও বিপ্লব দেখেন এর ভেতর। কিন্তু ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তৃতীয় বিশ্বের কেউ প্রশ্ন করবে না—তোমার দেশের পার্লামেন্টের মধ্যে ঢুকে কেউ যদি স্পিকারের আসনে বসে সিগারেট খায়, সেটা কি বিপ্লব? জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের কক্ষে যদি দল বেঁধে ঢুকে গিয়ে বন্ধুরা নাচানাচি করে—সেটা কি বিপ্লব জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে? না, এগুলো পশ্চিমা আইনশাসনের দেশে আইন অনুযায়ী অপরাধমূলক কাজ হবে। আর তা যদি হয়—তাহলে মাদাগাস্কার, সিরিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপালে এগুলো কেন বিপ্লব হচ্ছে পশ্চিমাদের কাছে? কেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই দেশগুলোকে এই পরিবর্তন মেনে নিতে হবে?

ভাইরাল ছবি: মহিলারা মিনি স্কার্ট পরে কাবুলের রাস্তায় হাঁটছেন, 1972 - আফগানিস্তান মহিলা

আর এদের তৃতীয় বিশ্বের মুখগুলো কেমন হয় তার একটি ছোট্ট অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। কার্যফেরে ভারতের রাজ্য মনিপুরে একটি পরিবেশ সেমিনার চলাকালে সেখানে গিয়েছিলাম এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে, বছর পচিশ আগে। সেখানে কয়েকজন মনিপুরী উচ্চশিক্ষিত ছেলে মেয়ের সঙ্গে দেখা হলো। তারা দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে পরে আমেরিকাতে কিছু কোর্স করেছে। এই সব কোর্সগুলো যে মূলত মগজ ধোলাই—তা সবাই জানে।

যাহোক, তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, তারা আদি ও অকৃত্রিম মনিপুর চায়। অর্থাৎ এখানে কোনো গাছ কাটা যাবে না, কোনো রাস্তা তৈরি করা যাবে না, এমনকি গ্রামে বিদ্যুৎ নেওয়াও যাবে না। এমনি হাজারটি ফিরিস্তি তাদের।

তরুণ ছেলে, মাথায় কোঁকড়া চুল। আস্তে তার হাত ধরে বলি—তুমি তো নিশ্চয়ই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছো স্কুলে। সে আমার মুখের দিকে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। তারপর তার কাছ জানতে চাই—তুমি যখন জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিতে পড়তে, রুম থেকে কি এসি, লাইট খুলে রেখেছিলে? তাছাড়া এই যে সেমিনার করছ যে হলে, এই ক্যান্টিনে আমরা বসে আছি—দেখ, এখানে এসি চলছে, তারপরেও মাথার ওপর ফ্যানও ঘুরছে। তুমি কি চাও না তোমার স্বজাতি মনিপুরী ওই গ্রামের ছেলে মেয়েরা তোমার মতো পরিবেশে আসুক? না, শুধু তুমি নিজেই এই পরিবেশটি ভোগ করতে চাও?

How dare you': Greta Thunberg rips world leaders at UN for 'failing' on climate change | StateImpact Pennsylvania

গ্রেটা থুনবার্গ শিশু আর মনিপুরী এই ছেলেটির মগজ ধোলাই করে তাকেও শিশু বানানো হয়েছে। আর এই সব বাস্তব ও অবাস্তব শিশুরা—তৃতীয় বিশ্বকে পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থ অনুযায়ী গণতন্ত্র, পরিবেশ ও শিক্ষার আন্দোলন উপহার দিচ্ছে। আর তাতে তৃতীয় বিশ্বের একটি শ্রেণি আমরা সব সময়ই লাফাতে থাকি ও পশ্চিমা কথা ধার করে বলি।

যেমন এই যে গাজা মুক্ত নিয়ে আমরা মহাখুশি। কোনো ভূখণ্ড মুক্ত হয় কখন? যখন তার ওই ভূখণ্ডের সকল নীতিনির্ধারক ওই ভূখণ্ডের জনগণ হবে। কিন্তু গাজায় কী হয়েছে? সেখানে একটি বিশেষ ফোরাম বা কমিটির মাধ্যমে গাজা পরিচালিত হবে। যাদের চেয়ারম্যান থাকবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, কমিটিতে থাকবেন ইরাক আক্রমণকারী টনি ব্লেয়ার ও আরও অনেকে। টনি ব্লেয়ার যদি ইরাকের হতেন, আর তিনি যেভাবে ইরাক ধ্বংসের ও সাদ্দাম হত্যার অংশীদার—এমনটি যদি তিনি ইরাকের হয়ে ব্রিটেনে করতেন—তাহলে নিশ্চয়ই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তার বিচার হতো। তার বদলে তিনি এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গাজার রক্ষাকর্তা। আর হাবভাবে যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে আমেরিকা প্রবাসী বা আমেরিকার নাগরিকত্ব আছে এমন একজন ফিলিস্তিনি এসেই শেষ পর্যন্ত হামাসের নেতা হবেন। তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আর টনি ব্লেয়ারের মতানুযায়ী সব কাজ করবেন। হয়তো, গাজাবাসীকেও গ্রেটা থুনবার্গ পড়িয়ে শিশুসুলভ পরিবেশ রক্ষা শেখাবে, মালালার শান্তির নোবেল থেকে শিক্ষা শেখাবে—আর মাদাগাস্কারের বা অন্য কোনো দেশের সেই সব তরুণরা—যারা বাড়ি বা গাড়ি, হোটের রুম দখল করেছে তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র শেখাবে।

তবে এর পাশাপাশি আরেকটি সত্য উঁকি দিচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিজয়ীরা এই যাত্রা শুরু করলেও অর্থনীতি তাদের ক্ষয়ে গেছে। প্রযুক্তিতেও তারা পিছিয়ে পড়েছে। ইউরোপ যে প্রযুক্তিতেও পিছিয়ে পড়েছে, তা সে মহাদেশের অনেকেই ইতোমধ্যে স্বীকার করেছে। অন্যদিকে গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশ প্রযুক্তি, শিক্ষা ও অর্থনীতির ওপর পা রেখেছে। তাই এই রঙিন কুর্তি আর সঙীন মূর্তি নীতি—খুব বেশি দিন কি আর পারবে গ্লোবাল সাউথের জেগে ওঠাকে ঠেকাতে? তাছাড়া যার যার ভূমি, সেই দেশের প্রতি শতভাগ আস্থাবান মানুষই পরিচালনা করবে। আমেরিকার নাগরিক গণতন্ত্রী আর পরিবেশবাদী এনজিওদের দিন দ্রুতই শেষ হবে।

লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিকসম্পাদকসারাক্ষণ, The Present World.

জনপ্রিয় সংবাদ

গভীর রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন

আমেরিকার নাগরিকত্বধারী ও তথাকথিত গণতান্ত্রিক, পরিবেশবাদীদের দিন দ্রুতই শেষ হবে

০৮:০০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

মালালা ইউসুফজাই লেখাপড়া শিখতে চেয়েছিল। যে কারণে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। মালালাকে পরিবারের বাইরের মানুষ তার শিক্ষার আগ্রহকে বাধা দেওয়ার জন্য শারীরিকভাবে হামলা করেছিল। তৃতীয় বিশ্বে মালালা একজন নন, কোটি কোটি। পরিবারের গঞ্জনাও যেমন সইতে হয়, তেমনি চোখের জল মুছে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। তার পরে “রাধার পরে খাওয়া আর খাওয়ার পরে রাধা—এক চাকাতেই বাইশ বছর বাধা।” আবার তারা শক্ত হাতে কাজ করে সংসারকেও বদলে দেয়। সন্তানকে নতুন জগতে নিয়ে যায়।

তবে মেয়েদের জন্য এই ছবি কি কেবল তৃতীয় বিশ্বে? কোভিড-পরবর্তী মানসিক সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যায় আমেরিকাতে বেশি ভুগছে নারীরা। তাদের পরিবার থেকে সে ভাবে যত্ন নেওয়া হয় না। এমনকি কোভিডে ওয়ার্ক ফ্রম হোম থেকে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে না পেরে যারা চাকরি হারিয়েছে, তাদের সংখ্যা বা শতকরা হিসেবে নারী বেশি।

এই মেয়েদের অনেকেই শিক্ষিতা। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব তাদেরকে সামনে এনে তৃতীয় বিশ্বকে তাদের মুখ দিয়ে জ্ঞান দেয় না। অন্যদিকে মালালা যে লেখাপড়া শিখে পারেনি, তার আগেই তাকে দিয়ে শিক্ষা নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ায়—তাই শুনে সকলকে হাততালি দিতে হয়। এমনকি শেষ অবধি তাকে শান্তিতে একখানা নোবেলও দিয়ে দেওয়া হয়।

স্কুলে পড়তো গ্রেটা থুনবার্গ। পরিবেশ কী, কেন শিল্পায়ন, আর শিল্পায়নে তার কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে—আবার পৃথিবীর সাতশ কোটি মানুষকে বাঁচার জন্য শিল্পায়ন কতটা দরকার—এসব বোঝার আগেই তাকে পরিবেশবাদী বানিয়ে ফেলা হলো। শিশুসুলভ বক্তব্যগুলো তৃতীয় বিশ্বের জ্ঞানচর্চার মাধ্যম হয়ে গেল।

ঠিক তেমনি এখন বলা হচ্ছে মরক্কো থেকে মাদাগাস্কার অবধি এক শ্রেণির ক্ষুব্ধ তরুণ গণতন্ত্র দিচ্ছে পৃথিবীতে। এই তরুণদের গণতন্ত্রবোধ ও শিক্ষাগত অবস্থান মানের দিক থেকে কোথায়? যে সব দেশে এই তথাকথিত গণতন্ত্রের জন্য বিপ্লব হয়েছে, তাদের অনেক দেশের শিক্ষাগত মান সে দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশনকে সিঙ্গাপুর ফাউন্ডেশান কোর্স হিসেবে দেখছে, অর্থাৎ ‘ও’ লেভেলের নিচে।

বাস্তবে ভালো ছাত্রছাত্রীরা বা যারা পড়াশোনা করে, তারা মোটামুটি শিক্ষাজীবন শুরু করে আট থেকে নয় বছর পড়াশোনার পরে ‘ও’ লেভেল পাস করে। তাহলে যদি তার নিচে হয়, এটা পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি লেভেল ধরা যেতে পারে। এদের অধিকাংশই মাতৃভাষা শুদ্ধভাবে লিখতে বা বলতে পারে না, তেমনি অন্য একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভাষা বা শিক্ষার অপর মূল বাহন গণিতও জানে না।

Madagascar: the country that's poor but not poor enough for aid | Madagascar | The Guardian

এইসব দেশের এই ধরনের ছেলে মেয়েরা গণতন্ত্র দিচ্ছে তাদের দেশের মানুষকে। কিন্তু মরক্কো থেকে মাদাগাস্কার পর্যন্ত যদি হিসাব করা হয়—তাহলে দেখা যাচ্ছে মাদাগাস্কারে এখনও কী হবে তা জানা যাচ্ছে না। সবে মাত্র সামরিক শাসন জারি হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে জানা যাবে কোন দিকে যাচ্ছে। তবে মরক্কো থেকে নেপাল অবধি আবার সেই স্বৈরাচার ও দুর্নীতি শেকড় গেড়ে বসেছে আরও কঠিনভাবে।

জাপান টাইমসে ব্রহ্ম চেলানি লিখেছেন, নেপালে যে বিচারপতিকে গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা হলো—তার স্বামীর বিমান ছিনতাইয়ের বিষয়টি কেউ সামনে আনলো না। ব্রহ্ম চেলানির এই প্রশ্নের পরে আরও বলা যায়, যদি সত্যি অর্থে প্রকৃত বিচারক হন, তাহলে যে কোনো অপরাধ স্বপ্রণোদিত হয়ে যে কোনো সময়ে তিনি বিচার করার ক্ষমতা রাখেন। তিনি কি সে বিচার করেছিলেন প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন? করেননি। তাছাড়া নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড প্রশ্ন রেখেছেন—সেনাবাহিনী কেন পার্লামেন্ট ভবন রক্ষা করলো না?

জাপান টাইমসে ব্রহ্ম চেলানি প্রশ্ন তুলেছেন, এই সব দেশগুলোতে যা হয়েছে ক্যাপিটল হিলেও তো প্রায় তেমনটি ঘটেছিল। সেটা সন্ত্রাসী কার্যক্রম হলে এগুলো বিপ্লব কেন?

এগুলো তৃতীয় বিশ্বের সামনে কেন বিপ্লব হিসেবে হাজির করা হয়—তার অন্যতম একটি কারণ, তৃতীয় বিশ্বকে দুইভাবে এই চমক দেওয়া হয়। প্রথমে মালালা, গ্রেটা থুনবার্গের মতো শিশুদেরকে হিরো বানিয়ে। ভাবখানা এমন যে, এত ছোট শিশুরা বুঝতে পারছে, আর তোমরা বুঝতে পারছ না। তার পরে তাদের কারো কারো গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। তৃতীয় বিশ্বের মানুষ মনে করে শান্তিতে নোবেল পেয়েছে—অর্থাৎ মানুষটি তাহলে দেবতার কাছাকাছি হবে।

মালালার দেশটি তো এক সময়ে শিক্ষিত ছিল। কারা সেখানে এই অশিক্ষার অন্ধকার প্রবেশ করিয়েছে—সে ইতিহাস কি লেখা হয়? আসলে তো পৃথিবীতে ইতিহাসের চেয়ে ন্যারেটিভই দাঁড় করানো হয় বেশি। বাস্তব সত্য সামনে আসে কম। রুশ বিপ্লবের পরে সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় সে দেশে জারের প্রাসাদগুলোতে যেমন কমরেডরা উঠে পড়েছিলেন—বাস্তবে এই সব বিপ্লবের পরেও কি তাই ঘটে না?

শেখ হাসিনার শাসনামলের শেষের দিকে দেখতাম ছাত্রলীগের কিছু প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হেলিকপ্টারে যাতায়াত করতেন। আর একদল কয়েক কোটি টাকার দামের গাড়ি চড়তেন। বাংলাদেশে বিপ্লব শেষে এক বিপ্লবী মাত্র কয়েক কিলোমিটার এলাকায় কয়েক শ কম্বল বিলাতে ২৮ বার, না কতবার হেলিকপ্টার চড়লেন। তরুণ সাংবাদিক নাজমুস সাকিবের একটা ভিডিওতে তার পূর্ণ হিসাব আছে। আর ঠিক কোটি টাকা দামের গাড়িবহর তো যাদের মানিব্যাগ ছিল না, তাদের দেখা যাচ্ছে।

তাদের কিন্তু কোনো দোষ নেই। বরং ছাত্রলীগের থেকে তারা এক্ষেত্রে স্বচ্ছ। কারণ, ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। কিন্তু এরা ১৯৪৭-এর বন্দোবস্তের কথা বলছে। ১৯৪৭-এর বন্দোবস্ত মানেই তো পাকিস্তান হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মহেন্দ্র ঘোষ তার বিশাল বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন আর সবুর খান ওই বাড়ির মালিক হয়ে গেলেন। উঠে পড়লেন তিনি সেখানে কোনো বৈধ দলিলপত্র ছাড়া।

দোষের কিছু নেই। ১৯৪৭-এর আগে ১৯১৭-তে তো রুশ বিপ্লব শেষে জারের বাড়িতে এভাবেই কমরেডরা উঠে পড়েছিল। সেখানেও শ্রমিক শ্রেণি ছিল—এখানেও রিকশাওয়ালার ছেলে গিয়ে পঞ্চাশ লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছে। পিয়নের ছেলে চব্বিশ বছর বয়সে বিশাল অফিস খুলে বসছে। সাফাই হিসেবে বলা হচ্ছে আলাদিনের দৈত্য এসেছে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে।

অবশ্য এসব পশ্চিমাদের চোখে বিপ্লব। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে জাতিসংঘের মহাসচিবও বিপ্লব দেখেন এর ভেতর। কিন্তু ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তৃতীয় বিশ্বের কেউ প্রশ্ন করবে না—তোমার দেশের পার্লামেন্টের মধ্যে ঢুকে কেউ যদি স্পিকারের আসনে বসে সিগারেট খায়, সেটা কি বিপ্লব? জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের কক্ষে যদি দল বেঁধে ঢুকে গিয়ে বন্ধুরা নাচানাচি করে—সেটা কি বিপ্লব জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে? না, এগুলো পশ্চিমা আইনশাসনের দেশে আইন অনুযায়ী অপরাধমূলক কাজ হবে। আর তা যদি হয়—তাহলে মাদাগাস্কার, সিরিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপালে এগুলো কেন বিপ্লব হচ্ছে পশ্চিমাদের কাছে? কেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই দেশগুলোকে এই পরিবর্তন মেনে নিতে হবে?

ভাইরাল ছবি: মহিলারা মিনি স্কার্ট পরে কাবুলের রাস্তায় হাঁটছেন, 1972 - আফগানিস্তান মহিলা

আর এদের তৃতীয় বিশ্বের মুখগুলো কেমন হয় তার একটি ছোট্ট অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। কার্যফেরে ভারতের রাজ্য মনিপুরে একটি পরিবেশ সেমিনার চলাকালে সেখানে গিয়েছিলাম এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে, বছর পচিশ আগে। সেখানে কয়েকজন মনিপুরী উচ্চশিক্ষিত ছেলে মেয়ের সঙ্গে দেখা হলো। তারা দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে পরে আমেরিকাতে কিছু কোর্স করেছে। এই সব কোর্সগুলো যে মূলত মগজ ধোলাই—তা সবাই জানে।

যাহোক, তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, তারা আদি ও অকৃত্রিম মনিপুর চায়। অর্থাৎ এখানে কোনো গাছ কাটা যাবে না, কোনো রাস্তা তৈরি করা যাবে না, এমনকি গ্রামে বিদ্যুৎ নেওয়াও যাবে না। এমনি হাজারটি ফিরিস্তি তাদের।

তরুণ ছেলে, মাথায় কোঁকড়া চুল। আস্তে তার হাত ধরে বলি—তুমি তো নিশ্চয়ই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছো স্কুলে। সে আমার মুখের দিকে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। তারপর তার কাছ জানতে চাই—তুমি যখন জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিতে পড়তে, রুম থেকে কি এসি, লাইট খুলে রেখেছিলে? তাছাড়া এই যে সেমিনার করছ যে হলে, এই ক্যান্টিনে আমরা বসে আছি—দেখ, এখানে এসি চলছে, তারপরেও মাথার ওপর ফ্যানও ঘুরছে। তুমি কি চাও না তোমার স্বজাতি মনিপুরী ওই গ্রামের ছেলে মেয়েরা তোমার মতো পরিবেশে আসুক? না, শুধু তুমি নিজেই এই পরিবেশটি ভোগ করতে চাও?

How dare you': Greta Thunberg rips world leaders at UN for 'failing' on climate change | StateImpact Pennsylvania

গ্রেটা থুনবার্গ শিশু আর মনিপুরী এই ছেলেটির মগজ ধোলাই করে তাকেও শিশু বানানো হয়েছে। আর এই সব বাস্তব ও অবাস্তব শিশুরা—তৃতীয় বিশ্বকে পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থ অনুযায়ী গণতন্ত্র, পরিবেশ ও শিক্ষার আন্দোলন উপহার দিচ্ছে। আর তাতে তৃতীয় বিশ্বের একটি শ্রেণি আমরা সব সময়ই লাফাতে থাকি ও পশ্চিমা কথা ধার করে বলি।

যেমন এই যে গাজা মুক্ত নিয়ে আমরা মহাখুশি। কোনো ভূখণ্ড মুক্ত হয় কখন? যখন তার ওই ভূখণ্ডের সকল নীতিনির্ধারক ওই ভূখণ্ডের জনগণ হবে। কিন্তু গাজায় কী হয়েছে? সেখানে একটি বিশেষ ফোরাম বা কমিটির মাধ্যমে গাজা পরিচালিত হবে। যাদের চেয়ারম্যান থাকবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, কমিটিতে থাকবেন ইরাক আক্রমণকারী টনি ব্লেয়ার ও আরও অনেকে। টনি ব্লেয়ার যদি ইরাকের হতেন, আর তিনি যেভাবে ইরাক ধ্বংসের ও সাদ্দাম হত্যার অংশীদার—এমনটি যদি তিনি ইরাকের হয়ে ব্রিটেনে করতেন—তাহলে নিশ্চয়ই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তার বিচার হতো। তার বদলে তিনি এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গাজার রক্ষাকর্তা। আর হাবভাবে যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে আমেরিকা প্রবাসী বা আমেরিকার নাগরিকত্ব আছে এমন একজন ফিলিস্তিনি এসেই শেষ পর্যন্ত হামাসের নেতা হবেন। তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আর টনি ব্লেয়ারের মতানুযায়ী সব কাজ করবেন। হয়তো, গাজাবাসীকেও গ্রেটা থুনবার্গ পড়িয়ে শিশুসুলভ পরিবেশ রক্ষা শেখাবে, মালালার শান্তির নোবেল থেকে শিক্ষা শেখাবে—আর মাদাগাস্কারের বা অন্য কোনো দেশের সেই সব তরুণরা—যারা বাড়ি বা গাড়ি, হোটের রুম দখল করেছে তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র শেখাবে।

তবে এর পাশাপাশি আরেকটি সত্য উঁকি দিচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিজয়ীরা এই যাত্রা শুরু করলেও অর্থনীতি তাদের ক্ষয়ে গেছে। প্রযুক্তিতেও তারা পিছিয়ে পড়েছে। ইউরোপ যে প্রযুক্তিতেও পিছিয়ে পড়েছে, তা সে মহাদেশের অনেকেই ইতোমধ্যে স্বীকার করেছে। অন্যদিকে গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশ প্রযুক্তি, শিক্ষা ও অর্থনীতির ওপর পা রেখেছে। তাই এই রঙিন কুর্তি আর সঙীন মূর্তি নীতি—খুব বেশি দিন কি আর পারবে গ্লোবাল সাউথের জেগে ওঠাকে ঠেকাতে? তাছাড়া যার যার ভূমি, সেই দেশের প্রতি শতভাগ আস্থাবান মানুষই পরিচালনা করবে। আমেরিকার নাগরিক গণতন্ত্রী আর পরিবেশবাদী এনজিওদের দিন দ্রুতই শেষ হবে।

লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিকসম্পাদকসারাক্ষণ, The Present World.