সাত মাসের দীর্ঘ বিরতির পর ফের মাঠে ফিরছেন ভারতের দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়ে এখন তারা কেবল ওয়ানডে ফরম্যাটে মনোযোগ দিচ্ছেন। এই একমাত্র ফরম্যাটে তাদের বাজি কতটা সফল হয়, সেটাই এখন কোটি ক্রিকেটভক্তের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।
সাত মাসের বিরতি, নতুন সূচনার অপেক্ষা
গত কয়েক মাসে রোহিত ও বিরাটকে একসঙ্গে দেখা গেছে খুবই সীমিতভাবে—পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে, বিজ্ঞাপনের শুটে বা পুরস্কার বিতরণীতে। যদিও সর্বব্যাপী মোবাইল ক্যামেরা জানিয়ে দেয়, তারা দু’জনই এখনো পরবর্তী চ্যালেঞ্জের জন্য অনুশীলনে ব্যস্ত।
রোহিত (৩৮) ও বিরাট (৩৬) সর্বশেষ ভারতের হয়ে খেলেছিলেন সাত মাস আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। এরপর আইপিএল খেললেও প্রায় চার ও অর্ধ মাস তারা কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে নামেননি। দীর্ঘ এই বিরতি এখন তাদের জীবনের অংশ, কারণ দু’জনই টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়ে এখন কেবল ওয়ানডেতে মনোযোগী। এমন সিদ্ধান্ত বিরল, তাই অলসতা ও প্রস্তুতির অভাবের ঝুঁকিও থেকেই যায়।
রবিবার পার্থ স্টেডিয়ামে দেখা যাবে, রোহিতের হারানো ১১ কেজি ওজন এবং কোহলির বিদেশে অনুশীলনের ফল কতটা সফল হয়েছে। তবে অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে তাদের পক্ষে—রোহিতের ওয়ানডে ২৭৩টি, কোহলির ৩০২টি। প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর শুধু বলেছেন, “আমরা তখনই জানব।”
নির্বাচকের মূল্যায়ন
আগরকর বলেন, “তাদের গুণমান নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কম ম্যাচ খেলার প্রভাব পড়বে কি না, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। এখনকার খেলোয়াড়রা প্রায়ই টেস্ট বা টি-টোয়েন্টি খেলে, যেখানে ম্যাচের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই এটি তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।”
বোর্ড (বিসিসিআই) নাকি তাদের দুজনকেই জিজ্ঞেস করেছিল—শুধু ৫০ ওভারের ক্রিকেটে নিজেদের টিকিয়ে রাখা কতটা বাস্তবসম্মত, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন ওয়ানডে ফরম্যাট হারাচ্ছে জনপ্রিয়তা। রোহিত ও কোহলি জানিয়েছেন, তারা খেলতে চান এবং জানেন যে পারফরম্যান্সই তাদের একমাত্র মাপকাঠি হবে।
নতুন প্রজন্মের সঙ্গে ফের দলে
এখন প্রশ্ন উঠেছে—দীর্ঘ বিরতির পর তারা কি দলে ফিরে অস্বস্তি বোধ করছেন? বুধবার সকালে তরুণ ভারতীয় দলের সঙ্গে বিমানে করে পার্থে উড়ে গেছেন তারা।
কোহলি এরকম পরিবর্তন আগেও দেখেছেন। ২০১২ সালে এমএস ধোনি বলেছিলেন, ভারতীয় ক্রিকেট তখন “কিশোর কুমার থেকে শন পল”-এ রূপান্তরের পথে। এখন সেই পরিবর্তনের অংশ রোহিত ও বিরাট নিজেরাই।
এক নতুন মিশনের পথে
দেখে মনে হয়, কোহলি এখনো থামতে রাজি নন। সম্ভবত টেস্ট থেকে বিদায় নেওয়াটা তার জন্য ছিল ওয়ানডেতে নতুন করে নিজেকে গড়ার এক উপায়। তার লক্ষ্য পরিষ্কার—একটি বিশ্বকাপ ছাড়া ক্যারিয়ার সম্পূর্ণ নয়।
রোহিতের ক্ষেত্রেও একই প্রেরণা কাজ করছে। তিনি এখনো কোনো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। তবে তাদের ব্যক্তিগত স্বপ্ন দলের প্রয়োজনের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে, কারণ ইয়াশাসভি জয়সওয়াল, অভিষেক শর্মা ও তিলক বর্মার মতো তরুণরা সুযোগের অপেক্ষায় প্রস্তুত।
ভারতের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর মঙ্গলবার বলেন, “৫০ ওভারের বিশ্বকাপ এখনো দুই–আড়াই বছর দূরে, তাই বর্তমানেই মনোযোগ ধরে রাখা জরুরি।”
ফরম্যাট বেছে নেওয়ার যুগে
বর্তমান ক্রিকেটে ফরম্যাট বেছে নেওয়া এখন নতুন কিছু নয়, বরং এটি এক নতুন প্রবণতা। অনেকেই প্রথমেই ওয়ানডে ত্যাগ করছেন। যেমন—মার্কাস স্টয়নিস ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল টি-টোয়েন্টির জন্য নিজেদের মুক্ত করেছেন, স্টিভ স্মিথ মনোযোগ দিচ্ছেন টেস্টে। নিকোলাস পুরান ও হেনরিখ ক্লাসেন তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই ছেড়েছেন।
ফলে শুধু ওয়ানডে পারফরম্যান্সে খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন নির্বাচকদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। কোয়েন্টিন ডি কক এর মতো কেউ কেউ “আনকুকড” মনে করে আবার ফিরেছেন ওয়ানডেতে, যদিও তিনি এখনো তরুণ—মাত্র ৩২ বছর বয়স।
চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ
অস্ট্রেলিয়া সফরের পর (৩ ওডিআই, ৫ টি-টোয়েন্টি) ভারত পরবর্তী তিন মাসে আরও ছয়টি ওয়ানডে খেলবে, তারপর আবার ছয় মাস বিরতি। এমন ছন্দহীন সময়ে ফর্ম, ফিটনেস ও অনুপ্রেরণা ধরে রাখা রোহিত ও বিরাটের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তারা চাইলে রাজ্য দলের হয়ে বিজয় হাজারে ট্রফিতে বা ইংলিশ কাউন্টিতে ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেলতে পারেন।
তবে যদি অস্ট্রেলিয়া সফর আশানুরূপ না হয়, এসব ভাবনার সুযোগও নাও থাকতে পারে। আগরকর শেষমেশ বলেন, “তারা যা বছরের পর বছর ধরে করে এসেছে—রান করা, সেটাই প্রত্যাশা। দল অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য বাছাই হয়েছে, এখন তাদের আবার আগের মতোই রান করতে হবে।”
#রোহিতশর্মা #বিরাটকোহলি #ভারতক্রিকেট #ওয়ানডে #চ্যাম্পিয়নস_ট্রফি #গৌতমগম্ভীর #অজিতআগরকর