২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়াসহ তিন দফা দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলনে নতুন মোড় এসেছে। ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পর আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণ না হলে তারা জীবন বাজি রেখে অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
লং মার্চ বাতিল, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ মিনারে উপস্থিত শিক্ষক নেতারা এক ঘোষণায় জানান, সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে তারা জীবন বাজি রেখে অনশন চালিয়ে যাবেন। ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি স্থগিত করে তারা ২৪ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি শেষে অনশন শুরু করার ঘোষণা দেন।
সরকার দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে
এর আগে বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি পালনের কথা থাকলেও, সেটি স্থগিত করা হয়। শিক্ষক নেতারা ঘোষণা দেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়া না হলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।
শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে ব্যর্থ বৈঠক
দুপুরে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ১৬ সদস্যের শিক্ষক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষা উপদেষ্টা। তবে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, বৈঠকে উপদেষ্টা প্রহসনমূলক আচরণ করেছেন। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে ক্লাস বর্জনসহ আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
আন্দোলন নেতার কান্নাভেজা প্রতিক্রিয়া
বৈঠক শেষে শিক্ষক নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রয়োজনে আমাদের লাশ যাবে, তবুও আমরা আন্দোলন থামাব না। অনশন করব, কিন্তু বাড়ি ফিরব না।’ বক্তব্য দিতে দিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
‘বৈঠক ছিল চোখে ধুলা দেওয়ার আয়োজন’
আজিজী জানান, সরকারের পক্ষ থেকে কেবল ৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, অথচ তারা বর্তমান বাজেটে ১০ শতাংশ এবং আগামী বাজেটে আরও ১০ শতাংশ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন। প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করারও দাবি তোলা হয়েছিল।
কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টা এ বিষয়ে কোনো ইতিবাচক বক্তব্য দেননি বলে অভিযোগ আজিজীর। তার ভাষায়, ‘আমরা মনে করি, এই বৈঠক ছিল কেবল আই ওয়াশ—চোখে ধুলা দেওয়ার একটি নাটক।’
আন্দোলনের পটভূমি
‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর সদস্যসচিব আজিজীর নেতৃত্বে ১৬ জন শিক্ষক নেতা আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই বৈঠকে অংশ নেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয়করণ, ভাতা বৃদ্ধি এবং আবাসন সুবিধাসহ তিন দফা দাবি জানিয়ে আসছেন।
সরকারি প্রতিশ্রুতি না পেয়ে তারা আন্দোলন আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন।
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা শহীদ মিনারেই অবস্থান অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক নেতারা।
#শিক্ষকআন্দোলন #আমরণঅনশন #শহীদমিনার #শিক্ষামন্ত্রণালয় #বাংলাদেশ