০৮:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা শাহজালাল বিমানবন্দরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত ৩৫ নিরাপত্তাকর্মী কিংবদন্তি রক গুরু আইয়ুব বাচ্চুর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার স্রোত জুলাই সনদ নিয়ে বিভাজন—রক্ত দিল যারা, ক্ষমতার মঞ্চে তাদের দেখা নেই দোহায় পাক-আফগান বৈঠক—সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের অবসানে তাৎক্ষণিক সমাধান খোঁজার উদ্যোগ শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে মিরপুর ও চট্টগ্রাম—পরপর অগ্নিকাণ্ডে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা শাহজালাল বিমানবন্দরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর চট্টগ্রাম ও কলকাতায় ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে একাধিক ফ্লাইট  বুদাপেস্টে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক—ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের অভিযোগ—চীনের প্রধান বাণিজ্য আলোচক ‘অশ্রদ্ধাশীল ও ভারসাম্যহীন’ আফগান সীমান্তের কাছে মির আলিতে আত্মঘাতী বোমা ও বন্দুকধারীর হামলা”

জুলাই সনদ সই হলো, সংশয় কি কাটলো?

জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করলেন বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এই সনদকে ঐতিহাসিক অর্জন বলে মন্তব্য করেছেন তারা। যদিও জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং বাম ঘরানার চারটি রাজনৈতিক দল এই আয়োজনে অংশ না নেওয়ায় বিষয়টি নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিভিন্ন দলের নেতাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতার এই দলিলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতীয়ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও স্বাক্ষর করেছেন।

সনদ সাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে চান তারা।

তবে, দাবি আদায় না হলে “জনগণকে সাথে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি” পালনের কথাও জানান তিনি।

সনদ সাক্ষরে নানা আয়োজন

বেলা তিনটার পর থেকেই অনুষ্ঠান স্থলে আসতে শুরু করেন অতিথিরা। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও দেশি-বিদেশী আমন্ত্রিতরা বসেন মূল মঞ্চের সামনে অতিথির আসনে।

বিকেল চারটায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরে সংসদ ভবন এলাকায় বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্জ, অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটে, সেই প্রেক্ষাপটে এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠান শুরু হয় কিছুটা দেরিতে।

বিকেল সোয়া চারটা দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠানস্থলের মূলমঞ্চে বসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেই বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা।

বিকেল পাঁচটা পাঁচ মিনিটের দিকে শুরু হয় জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর পর্ব। শুরুতেই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দুইজন করে প্রতিনিধি সনদে সই করেন। পরে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।

জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের পর বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “এই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।”

এসময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেমন তেমন করে করলে আবারো দেশ আগের জায়গায় ফিরে যাবে। নির্বাচন উৎসবমুখর করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

বলেন, “পুলিশ এসে কেন ধাক্কাধাক্কি করবে, নিজেদের নির্বাচন নিজেরা করবো আমরা।”

অনুষ্ঠানের আগে উত্তেজনা, সংঘর্ষ

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে শুক্রবার সকাল থেকেই জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়।

সকাল সাড়ে দশটার দিকে ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’ ব্যানারে কয়েকশ মানুষ সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।

এসময় জুলাই সনদ সংশোধন, সনদকে স্থায়ীভাবে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত এবং জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি- এই তিন দফা দাবিতে মূল মঞ্চের সামনেই অবস্থান নেন তারা।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফায় পরিবর্তন আনার কথা জানানো হলেও সিদ্ধান্তে অনড় থাকে আন্দোলনকারীরা।

বেলা ১২টার পর অতিথিদের জন্য বরাদ্দ আসন ছেড়ে তাদেরকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করা হলেও সরেননি তারা।

পরে তাদেরকে তুলে দিতে গেলে জুলাই যোদ্ধা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এসময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অনুষ্ঠানস্থলের বাইরের শুভেচ্ছা তোরণ, তাবু ও ব্যানারে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।

পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে আহত হন বেশ কয়েকজন।

বেলা আড়াইটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকেও অবস্থান নিতে দেখা যায়।

অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফায় পরিবর্তন

বিক্ষোভের মুখে শুক্রবার দুপুরে জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধনের ঘোষণা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

এসময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই যোদ্ধাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি জানান, জাতীয় সনদের পঞ্চম দফার অঙ্গীকারনামার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে জরুরী সংশোধন করা হয়েছে।

মি. রীয়াজ বলেন, এই অঙ্গীকারনামা বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারকে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করবে ঐকমত্য কমিশন। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনের কোনো মতপার্থক্য নেই বলেও জানান তিনি।

সংশোধনীর মাধ্যমে আনা পরিবর্তনের বিষয়টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও তুলে ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

দফাটিতে আগে ছিল, ‘গণঅভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।’

সংশোধিত দফায় বলা হয়েছে, ‘গণঅভ্যুত্থানপূর্ব বাংলাদেশে ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান কালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারকে এবং জুলাই আহতদের রাষ্ট্রীয় বীর, আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান যেমন, মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।’

আলোচনা চালিয়ে যাবে এনসিপি

জুলাই জাতীয় সনদ সাক্ষর অনুষ্ঠানে শেষ পর্যন্ত অংশ নেয়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি।

তিন দফা দাবি না মানলে অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি আগেই অবশ্য জানিয়েছিল দলটি। যদিও তাদেরকে এই অনুষ্ঠানে আনতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছিল সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পরও শেষ পর্যন্ত সনদ সাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে তারা।

বরং শুক্রবার নিজের বক্তব্যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানকে ‘জাতীয় ঐক্য’ নয় বলে মন্তব্য করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ হোসেন।

অবশ্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা সহ তিন দফা দাবিতে কমিশনের সাথে শেষ পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশন যেহেতু সময় বৃদ্ধি করেছে। আমরা ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে আমাদের অবস্থান তুলে ধরবো। দাবি পূরণ হলে পরবর্তীতে স্বাক্ষর করবে এনসিপি।”

তবে সনদের বিষয়ে অমীমাংসিত দিকগুলোর সমাধান না হলে ‘জনগণকে সাথে নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ’ করা হবে বলেও মন্তব্য করেছেন মি. হোসেন।

তিনি বলেন, “আমরা যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছি, সনদে যতটুকু অর্জিত হয়েছে সেটাকে টেকসইভাবে বাস্তবায়ন, এটার যে ড্রাফট আদেশের প্রাপ্তি, গণভোটের বিষয়ে ফয়সালা, নোট অফ ডিসেন্ট (আপত্তি) এর জায়গাগুলো পরিষ্কার করা- এই বিষয়গুলোতেই আমরা কমিশনের সাথে আলাপ জারি রাখবো।

“প্রয়োজনে আমাদের যে রাজনৈতিক কর্মসূচী রয়েছে, সেগুলো জনগণকে সাথে নিয়ে পালন করবো,” বলেন তিনি।

BBC News বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা

জুলাই সনদ সই হলো, সংশয় কি কাটলো?

১০:৫৮:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করলেন বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এই সনদকে ঐতিহাসিক অর্জন বলে মন্তব্য করেছেন তারা। যদিও জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং বাম ঘরানার চারটি রাজনৈতিক দল এই আয়োজনে অংশ না নেওয়ায় বিষয়টি নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিভিন্ন দলের নেতাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতার এই দলিলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতীয়ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও স্বাক্ষর করেছেন।

সনদ সাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে চান তারা।

তবে, দাবি আদায় না হলে “জনগণকে সাথে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি” পালনের কথাও জানান তিনি।

সনদ সাক্ষরে নানা আয়োজন

বেলা তিনটার পর থেকেই অনুষ্ঠান স্থলে আসতে শুরু করেন অতিথিরা। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও দেশি-বিদেশী আমন্ত্রিতরা বসেন মূল মঞ্চের সামনে অতিথির আসনে।

বিকেল চারটায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরে সংসদ ভবন এলাকায় বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্জ, অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটে, সেই প্রেক্ষাপটে এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠান শুরু হয় কিছুটা দেরিতে।

বিকেল সোয়া চারটা দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠানস্থলের মূলমঞ্চে বসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেই বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা।

বিকেল পাঁচটা পাঁচ মিনিটের দিকে শুরু হয় জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর পর্ব। শুরুতেই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দুইজন করে প্রতিনিধি সনদে সই করেন। পরে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।

জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের পর বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “এই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।”

এসময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেমন তেমন করে করলে আবারো দেশ আগের জায়গায় ফিরে যাবে। নির্বাচন উৎসবমুখর করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

বলেন, “পুলিশ এসে কেন ধাক্কাধাক্কি করবে, নিজেদের নির্বাচন নিজেরা করবো আমরা।”

অনুষ্ঠানের আগে উত্তেজনা, সংঘর্ষ

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে শুক্রবার সকাল থেকেই জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়।

সকাল সাড়ে দশটার দিকে ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’ ব্যানারে কয়েকশ মানুষ সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।

এসময় জুলাই সনদ সংশোধন, সনদকে স্থায়ীভাবে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত এবং জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি- এই তিন দফা দাবিতে মূল মঞ্চের সামনেই অবস্থান নেন তারা।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফায় পরিবর্তন আনার কথা জানানো হলেও সিদ্ধান্তে অনড় থাকে আন্দোলনকারীরা।

বেলা ১২টার পর অতিথিদের জন্য বরাদ্দ আসন ছেড়ে তাদেরকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করা হলেও সরেননি তারা।

পরে তাদেরকে তুলে দিতে গেলে জুলাই যোদ্ধা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এসময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অনুষ্ঠানস্থলের বাইরের শুভেচ্ছা তোরণ, তাবু ও ব্যানারে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।

পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে আহত হন বেশ কয়েকজন।

বেলা আড়াইটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকেও অবস্থান নিতে দেখা যায়।

অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফায় পরিবর্তন

বিক্ষোভের মুখে শুক্রবার দুপুরে জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধনের ঘোষণা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

এসময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই যোদ্ধাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি জানান, জাতীয় সনদের পঞ্চম দফার অঙ্গীকারনামার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে জরুরী সংশোধন করা হয়েছে।

মি. রীয়াজ বলেন, এই অঙ্গীকারনামা বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারকে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করবে ঐকমত্য কমিশন। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনের কোনো মতপার্থক্য নেই বলেও জানান তিনি।

সংশোধনীর মাধ্যমে আনা পরিবর্তনের বিষয়টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও তুলে ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

দফাটিতে আগে ছিল, ‘গণঅভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।’

সংশোধিত দফায় বলা হয়েছে, ‘গণঅভ্যুত্থানপূর্ব বাংলাদেশে ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান কালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারকে এবং জুলাই আহতদের রাষ্ট্রীয় বীর, আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান যেমন, মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।’

আলোচনা চালিয়ে যাবে এনসিপি

জুলাই জাতীয় সনদ সাক্ষর অনুষ্ঠানে শেষ পর্যন্ত অংশ নেয়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি।

তিন দফা দাবি না মানলে অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি আগেই অবশ্য জানিয়েছিল দলটি। যদিও তাদেরকে এই অনুষ্ঠানে আনতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছিল সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পরও শেষ পর্যন্ত সনদ সাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে তারা।

বরং শুক্রবার নিজের বক্তব্যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানকে ‘জাতীয় ঐক্য’ নয় বলে মন্তব্য করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ হোসেন।

অবশ্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা সহ তিন দফা দাবিতে কমিশনের সাথে শেষ পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশন যেহেতু সময় বৃদ্ধি করেছে। আমরা ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে আমাদের অবস্থান তুলে ধরবো। দাবি পূরণ হলে পরবর্তীতে স্বাক্ষর করবে এনসিপি।”

তবে সনদের বিষয়ে অমীমাংসিত দিকগুলোর সমাধান না হলে ‘জনগণকে সাথে নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ’ করা হবে বলেও মন্তব্য করেছেন মি. হোসেন।

তিনি বলেন, “আমরা যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছি, সনদে যতটুকু অর্জিত হয়েছে সেটাকে টেকসইভাবে বাস্তবায়ন, এটার যে ড্রাফট আদেশের প্রাপ্তি, গণভোটের বিষয়ে ফয়সালা, নোট অফ ডিসেন্ট (আপত্তি) এর জায়গাগুলো পরিষ্কার করা- এই বিষয়গুলোতেই আমরা কমিশনের সাথে আলাপ জারি রাখবো।

“প্রয়োজনে আমাদের যে রাজনৈতিক কর্মসূচী রয়েছে, সেগুলো জনগণকে সাথে নিয়ে পালন করবো,” বলেন তিনি।

BBC News বাংলা