রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নতুন বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে। হাঙ্গেরি সরকার জানিয়েছে, পুতিনের দেশে প্রবেশ ও নিরাপদে ফিরে যাওয়ার সব ব্যবস্থা তারা করবে।
হাঙ্গেরির ঘোষণা ও প্রস্তুতি
হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজিয়ার্টো শুক্রবার বলেন, “আমরা নিশ্চিত করব যে প্রেসিডেন্ট পুতিন হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করবেন, এখানে আলোচনায় অংশ নেবেন এবং নিরাপদে ফিরে যাবেন।” তিনি আরও বলেন, হাঙ্গেরি একটি সার্বভৌম দেশ, তাই এ বিষয়ে অন্য কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্ভানও জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে এবং পুতিনের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রস্তুতি পুরো গতিতে চলছে, বৈঠক খুব শিগগিরই হবে।”
বৈঠকের উদ্দেশ্য ও সময়সূচি
এই বৈঠক মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান নিয়ে হবে। ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেন, দুই সপ্তাহের মধ্যেই বৈঠক হতে পারে। তবে তারিখ এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। অর্ভান বলেন, বৈঠক সফল হলে ইউরোপ ও হাঙ্গেরির জন্য নতুন অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হবে।
পুতিনের আগমন নিয়ে বিতর্ক
বুদাপেস্টে বৈঠকের সিদ্ধান্ত ইউরোপে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। যদিও হাঙ্গেরি এখন আইসিসি থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় আছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, যদি এই বৈঠক শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়, তবে তারা সেটি স্বাগত জানাবে। তবে পুতিনের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নেই, শুধু তাঁর সম্পদ জব্দ রয়েছে।
ইউরোপীয় আইনি বাধা ও ভ্রমণ জট
রাশিয়ার বিমানের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের উড্ডয়ন নিষেধাজ্ঞা থাকায় পুতিনের যাত্রাপথ জটিল হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পোল্যান্ড ও স্লোভাকিয়ার আকাশপথ ব্যবহার করলে এটি সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথ হবে। অন্যথায় ব্ল্যাক সি হয়ে রোমানিয়ার মাধ্যমে দীর্ঘপথে আসতে হতে পারে।
অর্ভানের বক্তব্য ও কূটনৈতিক অবস্থান
অর্ভান বলেছেন, “এই বৈঠক হবে শান্তি নিয়ে। আমরা চাই ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ হোক।” তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ‘যুদ্ধপন্থী মনোভাব’ গ্রহণের অভিযোগে সমালোচনা করেন এবং বলেন, ইউরোপের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে নতুন করে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করা।
ইউক্রেনের অবস্থান ও সম্পর্কের টানাপড়েন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে আছেন, যেখানে তিনি আরও সামরিক সহায়তা চাইছেন, বিশেষ করে টমাহক মিসাইলের মতো অস্ত্র।
অন্যদিকে, হাঙ্গেরি ও ইউক্রেনের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। গত মাসে জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, হাঙ্গেরির একটি ড্রোন ইউক্রেনের সীমান্ত অতিক্রম করেছে। এর জবাবে অর্ভান বলেন, “ইউক্রেন আসলে স্বাধীন রাষ্ট্র নয়।”
জ্বালানি নির্ভরতা ও ইউরোপীয় পরিকল্পনা
হাঙ্গেরি এখনো রাশিয়ার গ্যাস ও তেলের ওপর নির্ভরশীল। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৮ সালের মধ্যে রুশ জ্বালানি আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা নিয়েছে। ট্রাম্পও ইউরোপকে রুশ জ্বালানি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
সারসংক্ষেপ
- • হাঙ্গেরি পুতিনের নিরাপদ আগমন ও প্রস্থান নিশ্চিত করবে।
- • ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক দুই সপ্তাহের মধ্যে হতে পারে।
- • বৈঠকের লক্ষ্য ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান।
- • ইউরোপীয় আইন ও রাশিয়া-বিরোধী নিষেধাজ্ঞা বৈঠকের পথ জটিল করছে।
- • ইউক্রেন ও হাঙ্গেরির সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় আছে।
বুদাপেস্টের এই সম্ভাব্য বৈঠক বিশ্ব কূটনীতিতে বড় পদক্ষেপ হতে পারে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের মতো জটিল সংকটে এই আলোচনা কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপের পারস্পরিক সমঝোতার ওপর।
#ট্রাম্প_পুতিন_বৈঠক #বুদাপেস্ট #হাঙ্গেরি #ইউক্রেন_যুদ্ধ #শান্তি_আলোচনা #রাশিয়া #যুক্তরাষ্ট্র #ভ্লাদিমির_পুতিন #ডোনাল্ড_ট্রাম্প #সারাক্ষণ_রিপোর্ট