পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যেই আজ দোহায় আফগানিস্তানের সঙ্গে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো আফগান ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দুই দেশের সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
আফগান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুখপাত্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মাওলভি মুহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদও বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, “প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আজ পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।”
আলোচনার পটভূমি
যুদ্ধবিরতি ও সাম্প্রতিক সংঘর্ষ
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে সংঘর্ষ, বিমান হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে দোহা বৈঠকের আগে উভয় দেশই ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, যা পরে আলোচনার মেয়াদ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
তবে আফগান পক্ষের দাবি, পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে সীমান্তের ভেতরে বিমান হামলা চালিয়েছে, যাতে অন্তত ১০ জন নিহত হন।
বিমান হামলা ও কূটনৈতিক উত্তেজনা
পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা পূর্ব আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে ‘নির্দিষ্ট টার্গেটে’ অভিযান চালিয়েছে, যেখানে হাফিজ গুল বাহাদুর গোষ্ঠীর সদস্যরা অবস্থান করছিল। অন্যদিকে আফগান কর্মকর্তারা জানান, হামলায় নারী ও শিশু সহ সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন।
এই ঘটনার পর আফগানিস্তান কূটনৈতিক প্রতিবাদের পাশাপাশি ক্রীড়া অঙ্গনেও প্রতিক্রিয়া দেখায়—তারা পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। অভিযোগ করা হয়, পাকিস্তানের হামলায় এক আফগান ক্রিকেটার নিহত হয়েছেন।
উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আজ দোহায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
অন্যদিকে আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মাওলভি ইয়াকুব মুজাহিদ। ধারণা করা হচ্ছে, আফগান গোয়েন্দা প্রধান মোল্লা ওয়াসিকও বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন।
পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা কোনোভাবেই উত্তেজনা বাড়াতে চায় না; বরং আফগান সরকারকে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ জোরদার করতে আহ্বান জানাচ্ছে।
বিশ্লেষণ ও চ্যালেঞ্জ
পাকিস্তানের অভিযোগ, নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো আফগান ভূখণ্ডে নিরাপদ আশ্রয় নিচ্ছে এবং সেখান থেকে সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তানে হামলা চালানো হচ্ছে।
আফগান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তারা শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী, তবে পাকিস্তানের ‘উসকানিমূলক’ বিমান হামলাকে নিন্দা জানাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই আলোচনার সফলতা নির্ভর করবে—দুই দেশ কতটা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় কতটা স্বচ্ছতা বজায় রাখে তার ওপর। কাতার ও সৌদি আরবের ভূমিকা এই প্রক্রিয়ায় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
যদি দোহা বৈঠক সফল হয়, তা সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনের একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করতে পারে। তবে যেসব প্রাণহানি ও ক্ষতি ইতোমধ্যে ঘটেছে, তা কেবল আলোচনার মাধ্যমে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাস্তব পদক্ষেপ ও যৌথ নিরাপত্তা নীতিই পারে এই দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের অবসান ঘটাতে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই পরিষ্কার হবে এই আলোচনার ফল কতটা কার্যকর হয় এবং উভয় দেশ তাদের প্রতিশ্রুত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কতটা অটল থাকে।
: #আফগানিস্তান #পাকিস্তান #দোহা_আলোচনা #সীমান্তসংঘাত #সন্ত্রাসবাদ #শান্তিপ্রক্রিয়া #সারাক্ষণ_রিপোর্ট