১৯৮৭ সালে এক তরুণের হাতে ছিল একটি বারগান্ডি রঙের ১৯৮২-এর টয়োটা করোলা। সেই গাড়িটিই পরবর্তীতে হয়ে ওঠে তিন প্রজন্মের ড্রাইভিং স্কুল, স্মৃতি আর ভালোবাসার প্রতীক। লেখক গ্রেম ম্যাক-রেনর নিজের ও তাঁর বাবার সম্পর্ক, শেখার ভুল, এবং এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে দায়িত্ব ও স্বপ্নের হস্তান্তরের গল্প বলেছেন এই ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণে।
প্রথম ড্রাইভিং ক্লাস: বাবাই ছিলেন শিক্ষক
লেখক স্মরণ করেছেন, ১৭ বছর বয়সে প্রথমবার গাড়ি চালানো শিখেছিলেন নিজের বাবার কাছেই—একজন আকারে বড় কখনো কখনো রাগী স্কটিশ ব্যক্তি, যিনি পেশায় সাংবাদিক।
বাবা তাঁকে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে এক বছর অপেক্ষা করিয়েছিলেন, কারণ তিনি মনে করতেন, ছেলে তখনও যথেষ্ট পরিণত হয়নি। এর পেছনে ছিল এক ‘মধ্যরাতের অভিযান’—যখন লেখক গোপনে করোলাটি ধাক্কা দিয়ে গ্যারেজ থেকে বের করে নিতে চেয়েছিলেন।
দুর্ঘটনা ও শাস্তি
পরিকল্পনা ছিল গাড়িটিকে নীরবে রাস্তায় নামানো, কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি এক প্রতিবেশীর দেয়ালে ধাক্কা খায়। নিজেই আঘাতপ্রাপ্ত লেখক ভয়ে গাড়িটি আবার গ্যারেজে ফিরিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন।
পরদিন সকালে দেয়াল ভেঙে পড়া ও গাড়ির পেছনে সাদা দাগ দেখে সবাই বুঝে ফেলে অপরাধী কে। শাস্তি ছিল স্পষ্ট—প্রতিবেশীর দেয়াল মেরামত করতে হবে এবং এক বছর গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ।
ড্রাইভিংয়ের গোপন অনুশীলন
যখন অবশেষে বাবা শেখাতে রাজি হন, তিনি অবাক হন ছেলের দক্ষতা দেখে। কিন্তু আসল কথা ছিল—সেই নিষেধাজ্ঞার সময়েই লেখক বন্ধুদের গাড়ি চালিয়ে অনুশীলন করেছিলেন।
তখনকার দিনে ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় নতুন ড্রাইভারদের জন্য যাত্রীসংক্রান্ত কোনো কঠোর নিয়ম ছিল না, ফলে একসঙ্গে অনেক কিশোর গাড়িতে চড়ত। লেখক রসিকতার সঙ্গে বলেন—“কীভাবে আমরা সবাই ১৯৬৮ সালের একটি বিটলের ভেতরে গুঁজে বসতাম এবং জীবিত ফিরতাম, আজও বুঝি না।”
বাবার দর্শন: গাড়ি কেবল চলার মাধ্যম
শিক্ষার সময় বাবার সঙ্গে নানা কথোপকথনও মনে আছে লেখকের। একবার তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আপনারা আরও ভালো গাড়ি কেন কিনছেন না?” বাবার উত্তর ছিল বাস্তববাদী—“গাড়ি হলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার মাধ্যম, এর বেশি কিছু নয়।”
তবুও লেখক জানতেন, মায়ের বাস্তববোধই তাঁকে এই উত্তর দিতে বাধ্য করেছে; বাবার মনে আসলে ছিল এক ‘মার্সিডিজ’-এর স্বপ্ন, যা তিনি কখনও পাননি।
কর্মজীবন, সিদ্ধান্ত ও অনুশোচনা
বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দ্রুত অবসর নিতে বাধ্য হন। অবসরকালীন সময় তিনি কোম্পানির সহযোগিতায় একটি টয়োটা ক্যামরি পান, যা তাঁর কাছে ছিল বিলাসবহুল গাড়ির সমান আনন্দের।
লেখক নিজেও সাংবাদিকতা পেশায় কাজ করে ২০-এর বছর বয়সের আগেই ১৫ হাজার ডলার সঞ্চয় করেন। কিন্তু বাড়ি কেনার পরামর্শ উপেক্ষা করে কিনেছিলেন একদম নতুন ১৯৯০-এর ফোর্ড মাসট্যাং—যা দুই বছর পর ক্ষতির মুখে বিক্রি করতে হয়।
প্রজন্মের হস্তান্তর: পিতার করোলা থেকে নাতির হাতে
সময় পেরিয়ে ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, প্রোস্টেট ক্যানসারের জটিলতায় বাবার মৃত্যু হয়।
এর তিন বছর পর, লেখকের ছেলে লন্ডন ১৭ বছর বয়সে ড্রাইভিং শেখে—এই প্রজন্মের বাবার কাছেই। প্রশিক্ষকও একই ধাঁচের—কখনো রাগী, তবে যত্নশীল।আর মজার ব্যাপার হলো, লেখকের মা সেই পুরনো করোলাটি লন্ডনকে উপহার দেন। কিছু মেরামতের পর গাড়িটি আবার রাস্তায় নামে—যেন জীবনের এক নতুন চক্র শুরু হয়।
এক যাত্রার ধারাবাহিকতা
করোলাটি এখনো নির্ভরযোগ্য, যেমন ছিলেন লেখকের বাবা। লেখক লিখেছেন—“আমি জানি, বাবা খুশি হতেন জেনে যে তাঁর নাতি এই গাড়িতে প্রাপ্তবয়সের প্রথম পথচলা শুরু করেছে। A থেকে B, যেমনটা তিনি সবসময় বলতেন।”
বাবার শেষ মুহূর্তে তাঁর হাসি ও শেষ কথা আজও লেখকের মনে গেঁথে আছে। হয়তো তিনি তাঁর প্রয়াত প্রিয়জনদের দেখেছিলেন—যাদের সঙ্গে তিনি এবার যাত্রা শুরু করেছিলেন এক ‘মার্সিডিজ’-এ, গন্তব্য অজানার পথে।
# পরিবার, #সম্পর্ক, #স্মৃতিচারণ,# জীবনগল্প,# প্রজন্ম,# গাড়ি,# কানাডা