জাপানে এখন বর্জ্যকে ফেলে না দিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য সম্পদে রূপান্তর করার সংস্কৃতি দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। স্থানীয় সরকার ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘রিইউজ মার্কেট’ বা পুনর্ব্যবহার বাজার এক নতুন অর্থনৈতিক খাত হিসেবে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে।
পুনর্ব্যবহারের বাজারের উত্থান
জাপানের পুনর্ব্যবহার বাজার ২০১৭ সালে ১.৯৯ ট্রিলিয়ন ইয়েন থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ৩.১২ ট্রিলিয়ন ইয়েনে। বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে এই বাজার প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন ইয়েনে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে অনলাইন ফ্লি-মার্কেট অ্যাপের উত্থান, কোভিড-১৯ মহামারির সময় ঘর গোছানোর প্রবণতা এবং মূল্যবৃদ্ধির ফলে ভোক্তাদের আচরণে পরিবর্তন।
সরকারের লক্ষ্য ও রোডম্যাপ
পরিবেশ মন্ত্রণালয় ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রকাশের পরিকল্পনা করছে, যাতে মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে।
সরকারের লক্ষ্য— পুনর্ব্যবহার ও বৃত্তাকার অর্থনীতিভিত্তিক বাজারের পরিধি ৫০ ট্রিলিয়ন ইয়েন থেকে বাড়িয়ে ৮০ ট্রিলিয়ন ইয়েনে নেওয়া। এজন্য বেসরকারি খাত ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
নাগরিক অংশগ্রহণ ও পরিসংখ্যান
২০২৪ অর্থবছরের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪৪.১ শতাংশ মানুষ গত এক বছরে কোনো না কোনোভাবে পুরনো পণ্য কিনেছেন।
বয়সভিত্তিক তথ্য বলছে, ৪০ বছরের নিচে মানুষের অর্ধেকেরও বেশি পুনর্ব্যবহারে আগ্রহী, তবে ৫০-এর কোঠায় তা ৪৬.২ শতাংশ এবং ৬০-এর উপরে মাত্র ৩৩.৭ শতাংশ।
ফলে সরকার মনে করছে, মধ্যবয়সী ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কাছে পুনর্ব্যবহার বাজারকে আরও সহজলভ্য করতে হবে।
স্থানীয় সরকারের উদ্যোগ: জামা শহরের উদাহরণ
কানাগাওয়া প্রিফেকচারের জামা শহরে মাথাপিছু বর্জ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল।
এই সমস্যা মোকাবিলায় ২০২৩ সালের মার্চে শহর কর্তৃপক্ষ ‘অল রিসোর্স’ নীতি গ্রহণ করে— যেখানে ‘বর্জ্য’ শব্দটি বাদ দিয়ে সব ফেলে দেওয়া জিনিসকে সম্পদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই নীতির আওতায় শহরে প্রথমবারের মতো ‘রিইউজ প্রোমোশন সেকশন’ নামে একটি নতুন বিভাগ গঠন করা হয়।
এই উদ্যোগের ফলে জামা শহরের বর্জ্য দহন কেন্দ্রের আয়ুষ্কালও বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় পুনর্ব্যবহার দোকানগুলোর সঙ্গে শহর প্রশাসন একটি চুক্তি করে, যাতে তারা সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে
পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস উদ্ধার করতে পারে এবং অননুমোদিত অপসারণ রোধে নজরদারি চালানো হয়।
২০২৪ অর্থবছরে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের বিক্রয় থেকে আয় হয়েছে ১৬ কোটি ইয়েনেরও বেশি।
জাতীয় পর্যায়ের অগ্রগতি
সারা দেশে প্রায় ৩০০টি স্থানীয় সরকার ইতিমধ্যে বেসরকারি খাতের সঙ্গে পুনর্ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তি করেছে।
কেন্দ্রীয় সরকার এই সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করে ৬০০-এ উন্নীত করতে চায়।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আসন্ন রোডম্যাপের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী স্থানীয় সরকারের জন্য নির্দিষ্ট সূচক, স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা এবং পুনর্ব্যবহারের মূল সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হবে।
নতুন ব্যবসায়িক মডেল ও আন্তর্জাতিক বাজার
জুন মাসে মন্ত্রণালয় রোডম্যাপের কাঠামো প্রকাশ করে, যেখানে কিছু বাস্তব পদক্ষেপও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে—
- • বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি মূল্যায়নের আওতায় আনা,
- • ‘এস্টেট ক্লিয়ারিং’ ও ‘লাইফ-এন্ড ডিক্লাটারিং’ খাতকে পুনর্ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত করা,
- • এবং নতুন ব্যবসায়িক মডেল তৈরিতে সহায়তা করা।
জাপানের পুরনো পণ্য— যেমন কিমোনো ও কারুশিল্প— আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমানের কারণে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
মন্ত্রণালয় এখন রপ্তানিকৃত পুনর্ব্যবহৃত পণ্যের পরবর্তী ব্যবহারের ওপর সমীক্ষা চালাবে এবং বিদেশি উদাহরণ অনুসরণ করে সম্ভাব্য কর-প্রণোদনা পর্যালোচনা করবে।
জাপানের পুনর্ব্যবহার বাজার এখন আর কেবল পরিবেশ সচেতনতার প্রতিফলন নয়; এটি অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হয়ে উঠছে।
‘বর্জ্য নয়, সম্পদ’— এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গিই জাপানকে একটি আরও টেকসই সমাজের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।
#জাপান, #পুনর্ব্যবহার, #পরিবেশ,# অর্থনীতি,# টেকসই উন্নয়ন,# সারাক্ষণ রিপোর্ট