০৮:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ট্রাম্প প্রশাসনের নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ায় চীনের প্রভাব ঠেকাতে কঠোর অবস্থান  মৈত্রী দিবসে প্রণয় ভার্মা ‘সাবসিডিতে হবে না’—চিনি শিল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ চাই: উপদেষ্টা আদিলুর  মানিকগঞ্জে কালিগঙ্গা নদীতে দুই শিশুর মৃত্যু যাত্রাবাড়ীতে বিদেশি পিস্তলসহ দুই যুবক গ্রেপ্তার পরস্পরনির্ভরতা ও পারস্পরিক সুফলই এগিয়ে নেবে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক: প্রণয় ভার্মা নিউ সাউথ ওয়েলসে ভয়াবহ বুশফায়ার, হাজারো মানুষকে সরে যেতে নির্দেশ মেলবোর্ন স্টেডিয়ামে লেডি গাগার তুমুল প্রত্যাবর্তন জাপানে রেকর্ডসংখ্যক ভাল্লুক হামলা, মানব–বন্যপ্রাণী সহাবস্থানের বড় সতর্কবার্তা ইইউর টেকসই আইন নিয়ে চাপ বাড়াচ্ছে কাতার, গ্যাস সরবরাহ ঝুঁকির ইঙ্গিত

গাজা যুদ্ধবিরতি ‘সঙ্কটজনক পর্যায়ে’ পৌঁছেছে, সতর্ক করলেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী

গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ

গাজা উপত্যকার চলমান যুদ্ধবিরতি এখন এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, যাকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে “সঙ্কটজনক মুহূর্ত” বলে বর্ণনা করেছেন। দোহার এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি জানান, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে মূলত সীমিত সময়ের যুদ্ধবিরতি, সহায়তা প্রবেশ এবং কিছু বিনিময় হলেও এর মাধ্যমে মাঠের বাস্তবতা খুব বেশি বদলায়নি। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার নেতৃত্বাধীন মধ্যস্থতাকারীরা এখন এমন একটি কাঠামো দাঁড় করাতে চাইছেন, যা যুদ্ধবিরতিকে দীর্ঘস্থায়ী করবে, আরও জিম্মি ও আটক বিনিময়ের পথ খুলবে এবং গাজায় ত্রাণ প্রবেশের নতুন রুট তৈরি করবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাদের সামনে বড় প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক সদিচ্ছার ভাষা থেকে বেরিয়ে নির্দিষ্ট সময়সূচি, পর্যবেক্ষণযোগ্য ধাপ এবং দুই পক্ষের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আদায় করা।

Qatari leader says Gaza ceasefire is at critical moment - The Hindu

কাতারের ভূমিকাই তাকে এই জটিল কূটনীতির কেন্দ্রে এনে বসিয়েছে। দেশটি একদিকে হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আশ্রয় দেয়, অন্যদিকে ওয়াশিংটন ও ইউরোপের শক্তিধর রাজধানীগুলোর সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। ফলে খুব অল্প কয়েকটি রাষ্ট্রের মতোই তারা একই সঙ্গে সব পক্ষের সাথে কথা বলতে পারে। দোহা বারবার বলছে, টেকসই যুদ্ধবিরতির ভিত্তি হতে হবে দুই স্তরে—একদিকে সামরিক উত্তেজনা কমানো, অন্যদিকে গাজায় বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা ও পুনর্গঠনের জন্য বাস্তব নিশ্চয়তা। তবে তাদের ওপর সমালোচনাও বাড়ছে; কিছু পশ্চিমা নীতিনির্ধারক মনে করেন, কাতার আসলেই কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পারে তা স্পষ্ট হওয়া দরকার এবং আলোচনার সাফল্যের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা প্রকাশ করা উচিত। আলোচনায় অগ্রগতি দেরি হলে মধ্যস্থতাকারী তিন দেশকেই এখন দেখাতে হচ্ছে—কূটনীতি কেবল সহানুভূতিপূর্ণ বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

জিম্মি, বন্দি ও পরবর্তী নিরাপত্তা সমীকরণ

যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ মূলত অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মি ও ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের ভবিষ্যৎকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। বিভিন্ন প্রস্তাবে দেখা যাচ্ছে, ধাপে ধাপে বৃহত্তর বন্দি-বিনিময়ের পাশাপাশি আরও দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধবিরতির রূপরেখা নিয়ে ভাবা হচ্ছে, যাতে হঠাৎ উত্তেজনা বৃদ্ধি না পায়। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, আলোচনায় দৃশ্যমান ফল না মিললে দুই পক্ষের শক্তপন্থী গোষ্ঠীই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে এবং তারা যে কোনো সময় যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিতে পারে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এখনো জিম্মিদের পরিবারের চাপ ও রাজনৈতিক বিরোধ চাপা পড়েনি, অন্যদিকে হামাসকেও নিজেদের বিভিন্ন ফ্যাকশন ও যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য খুঁজতে হচ্ছে।

Qatari leader says Gaza ceasefire is at a critical moment | Peeblesshire  News

এদিকে অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে, কারণ আলোচনার ভাঙন সীমান্ত পার হয়ে নতুন অস্থিরতা তৈরি করতে পারে—বিশেষ করে মিসর ও জর্ডানের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রে, যারা ইতিমধ্যে শরণার্থী প্রবাহ, ব্যবসা-বাণিজ্য বিঘ্ন আর জনরোষের প্রভাব সামলাচ্ছে। কাতারের জন্য এই উদ্যোগ রাজনৈতিক সুনামেরও বড় পরীক্ষা; যদি এই কূটনীতি সফল হয়, তবে ‘অপরিহার্য মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে তাদের ভাবমূর্তি আরও শক্ত হবে, আর ব্যর্থ হলে পুরনো প্রশ্ন ফিরে আসবে—সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার কৌশল কতটা কার্যকর। বিশ্লেষকদের ধারণা, সামনে কয়েক দিনেই নির্ধারিত হবে এই যুদ্ধবিরতি কি কোনও বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতায় রূপ নেয়, নাকি দ্রুত ভেঙে গিয়ে আরও সহিংস পর্বের সূচনা করে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ট্রাম্প প্রশাসনের নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ায় চীনের প্রভাব ঠেকাতে কঠোর অবস্থান

গাজা যুদ্ধবিরতি ‘সঙ্কটজনক পর্যায়ে’ পৌঁছেছে, সতর্ক করলেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী

০৭:২২:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ

গাজা উপত্যকার চলমান যুদ্ধবিরতি এখন এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, যাকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে “সঙ্কটজনক মুহূর্ত” বলে বর্ণনা করেছেন। দোহার এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি জানান, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে মূলত সীমিত সময়ের যুদ্ধবিরতি, সহায়তা প্রবেশ এবং কিছু বিনিময় হলেও এর মাধ্যমে মাঠের বাস্তবতা খুব বেশি বদলায়নি। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার নেতৃত্বাধীন মধ্যস্থতাকারীরা এখন এমন একটি কাঠামো দাঁড় করাতে চাইছেন, যা যুদ্ধবিরতিকে দীর্ঘস্থায়ী করবে, আরও জিম্মি ও আটক বিনিময়ের পথ খুলবে এবং গাজায় ত্রাণ প্রবেশের নতুন রুট তৈরি করবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাদের সামনে বড় প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক সদিচ্ছার ভাষা থেকে বেরিয়ে নির্দিষ্ট সময়সূচি, পর্যবেক্ষণযোগ্য ধাপ এবং দুই পক্ষের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আদায় করা।

Qatari leader says Gaza ceasefire is at critical moment - The Hindu

কাতারের ভূমিকাই তাকে এই জটিল কূটনীতির কেন্দ্রে এনে বসিয়েছে। দেশটি একদিকে হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আশ্রয় দেয়, অন্যদিকে ওয়াশিংটন ও ইউরোপের শক্তিধর রাজধানীগুলোর সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। ফলে খুব অল্প কয়েকটি রাষ্ট্রের মতোই তারা একই সঙ্গে সব পক্ষের সাথে কথা বলতে পারে। দোহা বারবার বলছে, টেকসই যুদ্ধবিরতির ভিত্তি হতে হবে দুই স্তরে—একদিকে সামরিক উত্তেজনা কমানো, অন্যদিকে গাজায় বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা ও পুনর্গঠনের জন্য বাস্তব নিশ্চয়তা। তবে তাদের ওপর সমালোচনাও বাড়ছে; কিছু পশ্চিমা নীতিনির্ধারক মনে করেন, কাতার আসলেই কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পারে তা স্পষ্ট হওয়া দরকার এবং আলোচনার সাফল্যের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা প্রকাশ করা উচিত। আলোচনায় অগ্রগতি দেরি হলে মধ্যস্থতাকারী তিন দেশকেই এখন দেখাতে হচ্ছে—কূটনীতি কেবল সহানুভূতিপূর্ণ বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

জিম্মি, বন্দি ও পরবর্তী নিরাপত্তা সমীকরণ

যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ মূলত অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মি ও ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের ভবিষ্যৎকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। বিভিন্ন প্রস্তাবে দেখা যাচ্ছে, ধাপে ধাপে বৃহত্তর বন্দি-বিনিময়ের পাশাপাশি আরও দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধবিরতির রূপরেখা নিয়ে ভাবা হচ্ছে, যাতে হঠাৎ উত্তেজনা বৃদ্ধি না পায়। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, আলোচনায় দৃশ্যমান ফল না মিললে দুই পক্ষের শক্তপন্থী গোষ্ঠীই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে এবং তারা যে কোনো সময় যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিতে পারে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এখনো জিম্মিদের পরিবারের চাপ ও রাজনৈতিক বিরোধ চাপা পড়েনি, অন্যদিকে হামাসকেও নিজেদের বিভিন্ন ফ্যাকশন ও যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য খুঁজতে হচ্ছে।

Qatari leader says Gaza ceasefire is at a critical moment | Peeblesshire  News

এদিকে অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে, কারণ আলোচনার ভাঙন সীমান্ত পার হয়ে নতুন অস্থিরতা তৈরি করতে পারে—বিশেষ করে মিসর ও জর্ডানের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রে, যারা ইতিমধ্যে শরণার্থী প্রবাহ, ব্যবসা-বাণিজ্য বিঘ্ন আর জনরোষের প্রভাব সামলাচ্ছে। কাতারের জন্য এই উদ্যোগ রাজনৈতিক সুনামেরও বড় পরীক্ষা; যদি এই কূটনীতি সফল হয়, তবে ‘অপরিহার্য মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে তাদের ভাবমূর্তি আরও শক্ত হবে, আর ব্যর্থ হলে পুরনো প্রশ্ন ফিরে আসবে—সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার কৌশল কতটা কার্যকর। বিশ্লেষকদের ধারণা, সামনে কয়েক দিনেই নির্ধারিত হবে এই যুদ্ধবিরতি কি কোনও বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতায় রূপ নেয়, নাকি দ্রুত ভেঙে গিয়ে আরও সহিংস পর্বের সূচনা করে।