জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন সানায়ে তাকাইচি। তবে তার সরকার শুরু থেকেই ব্যয়নীতি ও আর্থিক শৃঙ্খলার চাপে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) জাপান ইনোভেশন পার্টি (জিআইপি)-এর সঙ্গে জোট গঠন করায় তাকাইচিকে তুলনামূলক সংযমী অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণে বাধ্য হতে হচ্ছে।
জোট গঠন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিপি ও জিআইপি জোট গঠনের ঘোষণা দেয়। এটি কার্যত তাকাইচির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পথ নিশ্চিত করে। তবে সংসদের কোনো কক্ষেই পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত হয়নি। ফলে সরকারকে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় যেতে হতে পারে, যা ভবিষ্যতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির নতুন চাপ তৈরি করতে পারে।
জিআইপি বা নীপ্পন ইশিন নো কাই কেন্দ্র-ডানপন্থী একটি দল, যা প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও নীতিগত সংস্কারের পক্ষে। জুলাইয়ের উচ্চকক্ষ নির্বাচনে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল— “বাস্তবসম্মত সময়সীমার মধ্যে” প্রাথমিক বাজেট ভারসাম্য অর্জনের চেষ্টা করবে, যা গত তিন দশক ধরে ঘাটতিতে রয়েছে।
ব্যয়নীতি ও আর্থিক দৃষ্টিভঙ্গি
জিআইপি পার্লামেন্টারি নেতা ফুমিতাকে ফুজিতা ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সীমিত পরিসরে সরকারি ব্যয় প্রয়োজন, তবে বাজেট সম্প্রসারণের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
দলটির অন্যতম প্রস্তাব হলো, বছরে ৬০,০০০ ইয়েন (প্রায় ৪০০ ডলার) করে সামাজিক বিমা প্রিমিয়াম কমিয়ে কর্মজীবী পরিবারগুলোর হাতে খরচযোগ্য আয় বৃদ্ধি করা।
তাকাইচির অবস্থান ও সীমাবদ্ধতা
জিআইপি’র সঙ্গে আলোচনার আগেই তাকাইচি নিজেকে “দায়িত্বশীল আগ্রাসী ব্যয়ের” সমর্থক হিসেবে পরিচিত করেছিলেন। কিন্তু এলডিপির ভেতরে থাকা রক্ষণশীল অর্থনীতিবিদদের কারণে তার এই ইচ্ছা সীমাবদ্ধ হতে পারে।
দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট তারো আসো ও সাধারণ সম্পাদক শুনিচি সুজুকি— উভয়েই সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং বাজেট নিয়ন্ত্রণে কঠোর মনোভাবের জন্য পরিচিত।
মিজুহো রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজির প্রধান অর্থনীতিবিদ সাইসুকে সাকাই বলেন, “তাদের সমর্থন ছাড়া তাকাইচির পক্ষে নিজের নীতিমালা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।”
বাজার ও সুদের হারের প্রতিক্রিয়া
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নতুন সরকারের ঋণ ইস্যু বৃদ্ধির আশঙ্কায় সম্প্রতি জাপানের ১০ বছরের সরকারি বন্ডের মুনাফার হার বেড়ে ১.৭ শতাংশে পৌঁছেছে— যা ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ।
বিশ্লেষকদের মতে, তাকাইচির উদার ব্যয়নীতি নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, যদিও জোটের শর্তে সেই ঝুঁকি আপাতত কমে এসেছে।
মিতসুবিশি ইউএফজে রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটিংয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ শিনিচিরো কোবায়াশি বলেন, “বাজার এখন অপেক্ষা করছে— নতুন মন্ত্রিসভায় অর্থ ও রাজস্বনীতি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো কারা পায়।”
জিআইপি’র দাবি ও নীতিগত আপস
জিআইপি এলডিপির সঙ্গে আলোচনায় বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—
- • প্রতি লিটার জ্বালানিতে ২৫.১ ইয়েন অস্থায়ী সারচার্জ বাতিল
- • কর ছাড় ও নগদ সহায়তা মিলিয়ে নতুন ট্যাক্স ক্রেডিট ব্যবস্থা
- • মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের জন্য ভর্তুকি
- • খাদ্যে ৮ শতাংশ ভোক্তা কর দুই বছরের জন্য শূন্যে নামানো
তাকাইচি ব্যক্তিগতভাবে খাদ্যে কর কমানোর পক্ষে থাকলেও দলকে রাজি করানো তার জন্য সহজ হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাকাইচির নেতৃত্বে নতুন সরকার ব্যয়সংযম ও সংস্কারমুখী নীতির পথে হাঁটতে পারে। তবে জোটের ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে তাকাইচিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমঝোতা করতে হবে। এতে মুদ্রার দুর্বলতা ও দীর্ঘমেয়াদি সুদের হার বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়ে যাবে বলে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন।
# জাপান_#রাজনীতি, #তাকাইচি_#সরকার,# জোট_#নীতি,# জিআইপি,# সরকারি_ব্যয়, #বাজেট_#নীতি, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট