হলিউড অভিনেতা ও পরিচালক বেন স্টিলার তাঁর নতুন তথ্যচিত্র ‘স্টিলার অ্যান্ড মিরা: নাথিং ইজ লস্ট’-এর মাধ্যমে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছেন নিজের পারিবারিক ইতিহাস, শৈশবের স্মৃতি ও শিল্পীজীবনের জটিলতা। পিতামাতা জেরি স্টিলার ও অ্যান মিরার জীবন ও কাজের উপর নির্মিত এই চলচ্চিত্রে তিনি ফিরে গেছেন নিজের বেড়ে ওঠার সেই সময়ে, যখন তাদের উপস্থিতি ছিল একদিকে অনুপ্রেরণার, অন্যদিকে অনুপস্থিতির বেদনার।
শৈশবের ঘর থেকে চলচ্চিত্রের সূচনা
২০২০ সালে পিতা জেরি স্টিলারের মৃত্যুর পর বেন নিউইয়র্কের পারিবারিক অ্যাপার্টমেন্টে ক্যামেরা হাতে ধারণ শুরু করেন। এটি ছিল তাঁর শৈশবের ঘর, যা বিক্রির আগে তিনি ভিডিওতে সংরক্ষণ করতে চেয়েছিলেন। সেই পাঁচ-বেডরুমের ঘরেই তিনি ও বড় বোন অ্যামি স্টিলার বড় হয়েছেন— পিতা-মাতার হাস্যরস, রিহার্সাল, কলহ ও উদযাপনের মধ্যে।
চলচ্চিত্র নির্মাণের মূল প্রেরণা ছিল স্মৃতি সংরক্ষণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন। স্টিলার ও মিরা, ১৯৬০–৭০-এর দশকের আমেরিকার বিখ্যাত দম্পতি কমেডি জুটি, যাদের সংলাপ ও পারস্পরিক রসবোধ তখনকার টেলিভিশন সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করে।
পারিবারিক বন্ধন ও শিল্পের টানাপোড়েন
তথ্যচিত্রে বেন দেখিয়েছেন শিল্পীজীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও পারিবারিক দায়বদ্ধতার টানাপোড়েন। নিজ সন্তানদের সঙ্গে নির্মাণের সময় এই বিষয়টি নতুন করে ধরা দেয়— বিশেষ করে যখন তাঁর কিশোর পুত্র এক পর্যায়ে বলে ওঠে, ‘তুমি বাবা হওয়ার চেয়ে কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছ।’ এই মুহূর্তটি চলচ্চিত্রে যেমন শক্তিশালী, বাস্তবে তেমনই বেদনাদায়ক।
বেন পরে বলেন, ‘একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে বুঝেছিলাম এটা সিনেমার জন্য অসাধারণ মুহূর্ত; কিন্তু একজন বাবা হিসেবে ভীষণ কষ্টকর।’
ব্যক্তিগত যাত্রা ও পুনর্মিলন
চলচ্চিত্রটির নির্মাণে বেনকে পেরোতে হয়েছে এক দীর্ঘ ব্যক্তিগত পথ। পিতার মৃত্যুর পর মায়ের মদ্যপানের অতীত এবং দাম্পত্যের নানা টানাপোড়েন—সবই তিনি সৎভাবে প্রকাশ করেছেন। পিতামাতার সম্পর্ক ৬১ বছরের দীর্ঘ সংসার টিকিয়ে রেখেছিল, যা বেনের কাছে এক গভীর শিক্ষা।
২০১৭ সালে স্ত্রী অভিনেত্রী ক্রিস্টিন টেলর থেকে বিচ্ছেদের পর মহামারির সময় তাদের পুনর্মিলন ঘটে। পরিবারের সঙ্গে এই নতুন বন্ধন বেনকে আরও মানবিক করে তুলেছে। ‘এখন বুঝি, সত্যিকারের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পরিশ্রম লাগে,’ তিনি বলেন।
হাস্যরস ও গভীরতার শিল্প
‘সেভারেন্স’, ‘দ্য সিক্রেট লাইফ অব ওয়াল্টার মিটি’ বা ‘জুল্যান্ডার’-এর মতো কাজের মাধ্যমে স্টিলার প্রমাণ করেছেন, হাস্যরসের ভেতর দিয়েও গভীর জীবনবোধ প্রকাশ সম্ভব। সহকর্মী অ্যাডাম স্কট বলেন, ‘স্টিলার ভুল করাকেও শিল্পে পরিণত করেন—তাঁর মানবিকতা দর্শককে কাছে টানে।’
৯০-এর দশকের ‘দ্য বেন স্টিলার শো’ তাঁর কমেডি ধারার ভিত্তি স্থাপন করে, যা পরে জাড আপাটো ও বব ওডেনকার্কদের মতো নির্মাতাদেরও প্রভাবিত করে।
পিতা-মাতার উত্তরাধিকার
জেরি স্টিলার ছিলেন নিখুঁত সংলাপকার, যিনি প্রতিটি সংলাপে নোট রাখতেন। অন্যদিকে অ্যান মিরা ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত নাট্যশিল্পী, যিনি পরে নাট্যরচনায় মনোনিবেশ করেন। এই দুই মেধার সংমিশ্রণেই বেন গড়ে উঠেছেন এক অনন্য শিল্পী হিসেবে।
শৈশবে তিনি পরিবারের জন্য ছোট ছোট নাটক, মিউজিক্যাল ও ইমপ্রোভাইজেশনাল পারফরম্যান্স সাজাতেন। ১৩ বছর বয়সে পাওয়া প্রথম ক্যামেরাই তাঁকে চলচ্চিত্রের পথে নিয়ে যায়।
কঠোর পরিচালক থেকে সংবেদনশীল শিল্পী
অতীতে স্টিলার ছিলেন কঠোর ও পারফেকশনিস্ট পরিচালক। তবে বয়স, অভিজ্ঞতা ও ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে তিনি এখন আরও সচেতন। ‘আগে বুঝতাম না আমার দাবি অন্যদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে,’ তিনি বলেন। ‘এখন বুঝেছি—মানবিকতা ছাড়া সৃষ্টিশীলতা পূর্ণতা পায় না।’
আত্মানুসন্ধানের পথে
‘স্টিলার অ্যান্ড মিরা: নাথিং ইজ লস্ট’ শুধুমাত্র একটি পারিবারিক তথ্যচিত্র নয়; এটি এক শিল্পীর আত্মসমীক্ষা, যেখানে হাস্যরস, স্মৃতি ও মানবিক সম্পর্ক মিলেমিশে গেছে। বেন স্টিলার বলেন, ‘এই চলচ্চিত্র আমাকে নিজের ভেতরে আরও গভীরে যেতে শিখিয়েছে—যে স্মৃতিগুলো সত্যিকারের মূল্যবান, সেগুলোই খুঁজে ফিরছি আমি।’
# বেন_স্টিলার, হলিউড, তথ্যচিত্র, পারিবারিক_সম্পর্ক, সেভারেন্স, স্টিলার_অ্যান্ড_মিরা, সারাক্ষণ_রিপোর্ট