গবেষণায় দেখা গেছে, ইমিউনোথেরাপি নেওয়া ক্যান্সার রোগীদের আয়ুষ্কাল দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে যদি তারা চিকিৎসার শুরুতেই কোভিডের mRNA ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। বিশেষ করে ফাইজার/বায়োএনটেক ও মডার্নার ভ্যাকসিন ক্যান্সার চিকিৎসায় ইমিউনোথেরাপির কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।
ফুসফুস ক্যান্সারে আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি
১৮০ জন উন্নত পর্যায়ের নন-স্মল সেল ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, যারা mRNA ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাদের গড় আয়ুষ্কাল ছিল ৩৭.৩৩ মাস। বিপরীতে, ৭০৪ জন রোগী যারা ভ্যাকসিন নেননি, তাদের গড় আয়ুষ্কাল ছিল মাত্র ২০.৬ মাস— অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক কম।
ত্বকের ক্যান্সার রোগীদের ইতিবাচক ফলাফল
মেটাস্ট্যাটিক মেলানোমা, যা সবচেয়ে মারাত্মক ত্বক ক্যান্সার, সেখানে ফলাফল আরও আশাব্যঞ্জক। ১৬৭ জন আক্রান্ত রোগীর মধ্যে যারা ভ্যাকসিন নেননি, তাদের অর্ধেক ২৬.৬৭ মাসের মধ্যে মারা যান। কিন্তু ৪৩ জন রোগী যারা ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন, তাদের অর্ধেকেরও বেশি এখনো জীবিত— ফলে গড় আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
গবেষকদের পর্যবেক্ষণ
হিউস্টনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এমডি অ্যান্ডারসন ক্যান্সার সেন্টারের ড. অ্যাডাম গ্রিপিন বলেন, “আমাদের গবেষণার সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ দিক হলো— সহজলভ্য ও কম খরচের ভ্যাকসিনগুলো কিছু ইমিউনোথেরাপির কার্যকারিতা নাটকীয়ভাবে বাড়াতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি এমন এক দৃষ্টান্ত যেখানে ভ্যাকসিন শুধু ভাইরাস প্রতিরোধ নয়, বরং ক্যান্সার চিকিৎসার অংশ হিসেবেও ভূমিকা রাখতে পারে।”
রাজনৈতিক বিতর্ক ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ
মার্কিন স্বাস্থ্যসচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র, যদিও mRNA প্রযুক্তিনির্ভর ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ তার উল্টো বার্তা দিয়েছে। এই গবেষণার ফলাফল প্রমাণ করেছে যে, mRNA প্রযুক্তি ক্যান্সার চিকিৎসার সম্ভাবনাকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করছে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: কেন কাজ করছে mRNA ভ্যাকসিন
ল্যাবরেটরি পর্যায়ে দেখা গেছে, mRNA ভ্যাকসিন ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধ, যেমন মার্কের তৈরি ‘কিট্রুডা’-র কার্যকারিতা বাড়ায়। এই ভ্যাকসিন ক্যান্সার কোষকে PD-L1 প্রোটিন উৎপাদনে উৎসাহিত করে—যা ইমিউনোথেরাপির লক্ষ্যবস্তু।
বর্তমান গবেষণায় দেখা যায়, যেসব রোগীর টিউমারে PD-L1 উৎপাদন কম— অর্থাৎ যাদের ইমিউনোথেরাপি কম কার্যকর— তাদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়া রোগীদের তিন বছরের সার্বিক বেঁচে থাকার হার প্রায় পাঁচগুণ বেড়েছে।
ফলাফলের স্থায়িত্ব ও তাৎপর্য
গবেষণার ফলাফল ভ্যাকসিনের ব্র্যান্ড, ডোজের সংখ্যা কিংবা চিকিৎসাকেন্দ্র— কোনো ভেরিয়েবলেই পরিবর্তিত হয়নি।
ড. গ্রিপিন বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে mRNA ভ্যাকসিন শুধু ইমিউনোথেরাপি নিচ্ছেন এমন রোগীদের জন্য নয়, বরং চিকিৎসা-প্রতিরোধী ক্যান্সার রোগীদের জন্যও নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।”
ইউরোপীয় মেডিকেল অনকোলজি সোসাইটির ২০২৫ সালের বার্লিন কংগ্রেসে উপস্থাপিত এই গবেষণা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করেছে। এটি প্রমাণ করেছে, একবিংশ শতাব্দীর চিকিৎসাবিজ্ঞানে ভ্যাকসিন শুধু সংক্রমণ রোধেই নয়, বরং জীবনরক্ষায়ও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।
#ক্যান্সারচিকিৎসা #mRNAভ্যাকসিন #ইমিউনোথেরাপি #চিকিৎসাগবেষণা #সারাক্ষণরিপোর্ট