কিমচি, বিবিমবাপ বা বুলগোগির মতো ঐতিহ্যবাহী পদে সীমাবদ্ধ না থেকে এখন বিদেশি পর্যটকেরা মুগ্ধ হচ্ছেন কোরিয়ার দৈনন্দিন খাবারের সংস্কৃতিতে। ইনস্ট্যান্ট নুডলস, গিমবাপ, কনভিনিয়েন্স স্টোরের স্ন্যাকস—সব মিলিয়ে কোরিয়ান খাদ্যাভ্যাস এখন হয়ে উঠছে বৈশ্বিক কৌতূহলের কেন্দ্র। কোরিয়া ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের (কেটিও) সর্বশেষ তথ্য এই প্রবণতাকেই প্রতিফলিত করছে।
দৈনন্দিন খাবারের প্রতি বিদেশিদের বাড়তি আগ্রহ
কেটিও জানিয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত বিদেশি ক্রেডিট কার্ড লেনদেন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—কোরিয়ানদের দৈনন্দিন খাবার হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন পণ্যে বিদেশিদের ব্যয় নিয়মিত বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোরিয়ার সহজলভ্য অথচ বৈচিত্র্যময় খাদ্যজগৎ এই আগ্রহের মূল কারণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘মুকবাং’ লাইভস্ট্রিম, টেলিভিশন ড্রামায় রান্নার দৃশ্য এবং তারকাদের স্ন্যাকস প্রচারণা বিশ্বজুড়ে ‘কে-ফুড’-এর প্রভাব বিস্তার করছে।

জনপ্রিয় খাবার ও ব্যয়ের প্রবণতা
সর্বাধিক বার্ষিক ব্যয় বৃদ্ধি দেখা গেছে আইসক্রিমে—৩৫ শতাংশ। এরপর কনভিনিয়েন্স স্টোরের রেডিমেড খাবারে ৩৪ শতাংশ, আর ক্রফল ও ওয়াফল-এ ২৫.৫ শতাংশ।
২০২৫ সালের জুলাইয়ে চালের পিঠা ও ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন কেনাকাটা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৭৬.৯ শতাংশ; নুডলস ও ডাম্পলিং ৫৫.২ শতাংশ, আর পর্ক বোন স্যুপ ৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিদেশিদের পছন্দের রেস্তোরাঁ ও ব্র্যান্ড
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিদেশিদের সবচেয়ে বেশি কার্ড লেনদেন হয়েছে কফিশপে—৮.৯ মিলিয়ন বার। এরপর বেকারি ৩ মিলিয়ন এবং হ্যামবার্গার রেস্তোরাঁ ২.৩ মিলিয়ন লেনদেন পেয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, বিদেশিদের প্রিয় ১০টি বার্গার ব্র্যান্ডের মধ্যে ৬টিই স্থানীয় কোরিয়ান চেইন—যা কোরিয়ার নিজস্ব ফাস্টফুড সংস্কৃতিকে বৈশ্বিক বাজারে শক্ত অবস্থান এনে দিয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কনভিনিয়েন্স স্টোর সংস্কৃতি
সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোরিয়ান কনভিনিয়েন্স স্টোর সংক্রান্ত পোস্টের ৪০.১ শতাংশ ছিল খাবার নিয়ে। জনপ্রিয় কীওয়ার্ডগুলোর মধ্যে ‘রামইয়ন’ (১৪.১%), ‘কফি’ (১০.৫%) ও ‘স্ন্যাকস’ (৭%) শীর্ষে। যা থেকে বোঝা যায়—যাত্রাবিরতির সহজ খাবার এখন হয়ে উঠেছে কোরিয়ান সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির প্রতীক।
কেটিও-র পর্যটন ডেটা কৌশল বিভাগের প্রধান লি মি-সুক বলেন, “বিশ্বজুড়ে প্রবণতা এখন তাৎক্ষণিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে কোরিয়ার সাধারণ খাবারও হয়ে উঠছে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যম।”
পর্যটনের বড় অনুপ্রেরণা এখন খাবার
২০২৪ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ১৫.৭ শতাংশ সম্ভাব্য পর্যটক কোরিয়ায় ভ্রমণের মূল কারণ হিসেবে ‘ফুড ট্যুর’ বা খাদ্যভিত্তিক ভ্রমণকেই বেছে নিয়েছেন—যা শপিং বা বিনোদনের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়। শিল্প তথ্য বলছে, পর্যটকদের মোট ব্যয়ের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এখন খাদ্যসংক্রান্ত অভিজ্ঞতায় ব্যবহৃত হয়।
‘টেস্ট ইউর কোরিয়া’ প্রকল্প ও আঞ্চলিক খাবার প্রচারণা
২০২৪ সালে সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং কেটিও যৌথভাবে চালু করে ‘টেস্ট ইউর কোরিয়া’ প্রকল্প, যার আওতায় ৩৩টি আঞ্চলিক খাদ্যকেন্দ্রকে সাংস্কৃতিক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে জিওনজুর বিবিমবাপ, জেজুর সীফুড ও চুনচনের ডাকগালবি। এসব অঞ্চলে স্থানীয় খাবারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে মৌসুমি উপকরণ, ঐতিহ্যবাহী পানীয়, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও উৎসব।
ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে গ্যাস্ট্রোনমিক ভ্রমণ
‘১০০-ইয়ার স্টোর’ কর্মসূচির মাধ্যমে পর্যটকদের সেই সব দোকান চিহ্নিত করা হচ্ছে, যেগুলোর শতবর্ষী ঐতিহ্য রয়েছে খাবার, কারুশিল্প বা বিশেষ পণ্যে।
এই উদ্যোগ কোরিয়ার বৃহত্তর খাদ্য পর্যটন নীতির অংশ, যা টেকসইতা, গল্প বলার কৌশল ও ডিজিটাল উদ্ভাবনকে একত্র করেছে। এতে এআই-চালিত রেস্টুরেন্ট গাইড, অনুবাদ সুবিধা, কিউআর মেনু ও ভার্চুয়াল ফুড ট্যুর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—যা বিদেশি পর্যটকদের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশ্লেষকদের মতে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত কোরিয়ার খাদ্য পর্যটন খাত প্রতিবছর গড়ে ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। কারণ, বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীরা এখন খুঁজছেন এমন অভিজ্ঞতা যা স্থানীয় স্বাদ ও সংস্কৃতির সাথে সরাসরি যুক্ত এবং যা অনলাইনে ভাগ করা যায়।
#কোরিয়া,# কে-ফুড, পর্যটন,# কোরিয়ান সংস্কৃতি,# খাদ্যভ্রমণ,# কেটিও,# টেস্ট ইউর কোরিয়া, #ফুড কালচার
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















