রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায় আরও ৯ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং স্বাস্থ্য বিভাগে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
নতুন আক্রান্তদের পরিচয়
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা জানান, আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন—
- চেরাগপুর গ্রামের আশুরা বেগম (৬৫), রবিউল ইসলাম (৫৫), শহিন মিয়া (২৩), শরীফ মিয়া (২২), খাসা মিয়া (৫২) ও রওহাবুল মিয়া (৩২)
- দ্বারিয়াপুর গ্রামের শিল্পী (২৮), মামুন (১৬) ও খোরশেদ ইসলাম (২৫)
সংক্রমণের উৎস
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৪ অক্টোবর চেরাগপুর গ্রামের শামসের আলীর ছেলে সাদেক আলী অসুস্থ একটি গরু জবাই করে এর মাংস ১৮টি পরিবারে ভাগ করে দেন।
পরে ১১ অক্টোবর দ্বারিয়াপুরের টুটুল মিয়া আরেকটি অসুস্থ গরু জবাই করে প্রতিবেশীদের মধ্যে মাংস বিতরণ করেন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মনে করছেন, আক্রান্তরা হয় ওই মাংস খাওয়ার মাধ্যমে, নয়তো জবাই বা কাটাকাটির সময় সংস্পর্শে এসে অ্যানথ্রাক্সে সংক্রমিত হয়েছেন।
প্রাথমিক উপসর্গ ও চিকিৎসা
শিল্পী, মামুন ও খোরশেদ নামে তিনজনের ত্বকে জবাইয়ের অল্প কিছুদিন পরই ঘা দেখা দেয়। তারা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না গিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন এবং পরে বাড়ি ফিরে যান।
জেলায় মোট আক্রান্তের পরিসংখ্যান
রংপুর সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যানুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত জেলায় ৭৮ জন সন্দেহভাজন অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
এর মধ্যে—
- পীরগাছা উপজেলায় ৩৮ জন
- কাউনিয়া উপজেলায় ১৮ জন
- মিঠাপুকুরে ১২ জন
- গঙ্গাচড়ায় ৭ জন
- পীরগঞ্জে ১ জন
২৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তবে সদ্য শনাক্ত ৯টি নতুন সন্দেহভাজন কেস এখনো সেই তালিকায় যোগ হয়নি।
নিশ্চিত শনাক্ত ও বিশেষজ্ঞ মত
রংপুর সিভিল সার্জন ডা. শাহিন সুলতানা জানান, এ পর্যন্ত জেলায় ১১টি অ্যানথ্রাক্স নিশ্চিত কেস শনাক্ত হয়েছে, তবে সন্দেহভাজনের সংখ্যা অনেক বেশি।
তিনি বলেন, “যদি শরীরে খোলা ঘা না থাকে, তবে নমুনা সংগ্রহ করা কঠিন হয়, ফলে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করাও জটিল হয়ে পড়ে।”
পূর্ববর্তী ঘটনা ও সতর্কতা
এর আগে জুলাই ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স-সদৃশ উপসর্গে দুইজনের মৃত্যু হয়।
এছাড়া পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার কয়েকজন রোগীকেও শনাক্ত করা হয়।
৪ অক্টোবর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের রোজিনা বেগম (৪৫) অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও সুপারিশ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউ) বিশেষজ্ঞ দল আক্রান্ত এলাকায় পশু কোয়ারেন্টাইন, নিরাপদে মৃত পশুর দাফন ও জবাইয়ের আগে পশুচিকিৎসকের অনুমোদন নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে।
স্থানীয় সমাজকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা সংক্রমণ রোধে দ্রুত নজরদারি ও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন।
#: অ্যানথ্রাক্স, রংপুর, পীরগাছা, স্বাস্থ্য বিভাগ, গরু জবাই, সংক্রমণ, জনস্বাস্থ্য, সারাক্ষণ_রিপোর্ট