শৈশব থেকেই অনুশীলনের প্রতি অদম্য শৃঙ্খলা
ডেট্রয়েট লায়ন্সের তারকা ওয়াইড রিসিভার অ্যামন-রা সেন্ট ব্রাউন প্রতিদিনের অনুশীলন শেষে শুরু করেন নিজের ব্যক্তিগত রুটিন—জাগস মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে ২০২টি বল ধরা। এই নিয়ম শুরু করেছিলেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকেই, যখন তাঁর বাবা জন ব্রাউন—দুইবারের মি. ইউনিভার্স ও তিনবারের মি. ওয়ার্ল্ড—তাঁকে বলেছিলেন প্রতিদিন ২০০ নয়, ২০২টি বল ধরতে। সেই নির্দেশই আজ তাঁর আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি।
২৫ বছর বয়সী স্ট. ব্রাউন বলেন, “বল ধরার সময় আমি আর ভাবি না। এটা আমার কাছে স্বাভাবিক কাজের মতো।” হাজার হাজার ঘণ্টার সেই পুনরাবৃত্তি তাঁকে এনএফএলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য রিসিভারদের একজন করে তুলেছে।
নতুন যুগের রিসিভার: শক্তি, গতি ও মানসিক দৃঢ়তার সংমিশ্রণ
এনএফএলে এখন ওয়াইড রিসিভাররাই আসল গেম চেঞ্জার। কোয়ার্টারব্যাক হয়তো এমভিপি হন, কিন্তু দর্শকদের চোখে মূল আকর্ষণ এই রিসিভাররা। ‘রিসিভার’ নামে নেটফ্লিক্সের সিরিজেও দেখা গেছে, কীভাবে এই খেলোয়াড়রা খেলার গতিপথ বদলে দেন।

শক্তি শুধু শারীরিক নয়—মানসিক দৃঢ়তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তীব্র ধাক্কা খেয়েও বল ধরা, চাপের মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া—এসবই এই পজিশনের বৈশিষ্ট্য। স্ট. ব্রাউন বলেন, “তুমি জানো আঘাত আসবে, তবু বল ধরতেই হবে।”
এ কারণেই এনএফএলের প্রথম রাউন্ডে এখন সবচেয়ে বেশি নির্বাচিত হচ্ছেন রিসিভাররা—২০২১ থেকে এ পর্যন্ত ২৫ জন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বছরে ৩০ মিলিয়ন ডলার বেতন পান। সেই অভিজাত তালিকায় এখন স্ট. ব্রাউনও আছেন।
গতি নয়, শৃঙ্খলাই সাফল্যের মূল
৬ ফুট উচ্চতা ও ২০২ পাউন্ড ওজনের স্ট. ব্রাউন হয়তো সবচেয়ে দ্রুত নন (৪.৫১ সেকেন্ডে ৪০-ইয়ার্ড দৌড়), কিন্তু চার মৌসুমে ৪৩০টি রিসেপশন তাঁকে টায়রীক হিলের সঙ্গে শীর্ষে রেখেছে। মাঠে তিনি শুধু রিসিভার নন—রানারও। ২,০৩০ ইয়ার্ড ‘ইয়ার্ড আফটার ক্যাচ’ এবং ১৮৬ ক্যারিয়ার রাশিং ইয়ার্ড তাঁর বহুমুখী দক্ষতার প্রমাণ।
“বল ধরা মানেই শেষ নয়,” তিনি বলেন। “৫ ইয়ার্ডের পাসকেও আমি ৫০ ইয়ার্ডের টাচডাউনে রূপ দিতে চাই।”

পিতার প্রশিক্ষণ দর্শন: ‘চয়েস নয়, শৃঙ্খলা’
জন ব্রাউন তাঁর তিন ছেলেকে (ইকুয়ানিমিয়াস, ওসিরিস, অ্যামন-রা) ছোটবেলা থেকেই শক্তি ও শৃঙ্খলার পাঠ দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, “তুমি সন্তানকে আইসক্রিমের ফ্লেভার বেছে নিতে দাও, কিন্তু অনুশীলন এড়ানোর সুযোগ দিও না।”
মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই ওজন অনুশীলন শুরু করেছিল তাঁরা। প্রতিদিনের ব্যায়ামে ছিল বেঞ্চ প্রেস, স্কোয়াট, বাইসেপ কার্ল—এবং উচ্চ পুনরাবৃত্তি বা ১০০ রিপ সেট। জন ব্রাউনের মতে, “ওভারট্রেইনিং বলে কিছু নেই, আছে শুধু কম ঘুম আর কম খাওয়া।”
‘ডেডলিফট’ অপছন্দ, কিন্তু স্কোয়াটই তাঁর অস্ত্র
স্ট. ব্রাউন নিজেই স্বীকার করেন—তিনি ডেডলিফট পছন্দ করেন না। তাঁর মতে, এটি পিঠে অতিরিক্ত চাপ ফেলে। তবে স্কোয়াটে তিনি অনন্য। তাঁর বাবা তাঁকে স্কোয়াট শেখাতেন নিরাপত্তা র্যাক সরিয়ে দিয়ে, যাতে ব্যর্থতার সুযোগ না থাকে। এখনো তিনি উচ্চ রিপের স্কোয়াট করেন—যা তাঁর নিম্নাঙ্গকে করেছে অতিমজবুত।

এই শক্তিই তাঁকে প্রতিপক্ষের ধাক্কা সহজে সহ্য করতে সাহায্য করে। তাঁর পায়ের পেশি ও গতি মিলে তৈরি করেছে এক নতুন প্রজন্মের ‘হাইব্রিড’ রিসিভার—যিনি যেমন বল ধরেন, তেমনি দৌড়ে মাঠ কাঁপান।
সাফল্যের গোপন শক্তি
অ্যামন-রা সেন্ট ব্রাউন তিন মৌসুমেই ১০০-এর বেশি রিসেপশন সম্পন্ন করেছেন। তিনি জানেন, সাফল্য কোনো একদিনের নয়—এটি প্রতিদিনের শৃঙ্খলার ফল। তাঁর কথায়, “যতটা সম্ভব বিস্ফোরক খেলা তৈরি করো। সেটা-ই জেতার চাবিকাঠি।”
বাবার কড়া শাসন, অনুশীলনের অদম্য রুটিন, এবং শৈশব থেকে গড়ে ওঠা মানসিক শক্তি আজ তাঁকে এনএফএলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।
“আমি খুশি,” বলেন স্ট. ব্রাউন। “আজ সবাই রিসিভার হতে চায়। আমি শুধু তাদের বলব—শুরু করো ২০২ বল থেকে।”

#NFL #DetroitLions #AmonRaStBrown #SportsMotivation #MensHealth #AmericanFootball
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















