নতুন মৌসুম, নতুন চুক্তি, পুরোনো সমস্যা
আমেরিকার জাতীয় বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন (এনবিএ)-এর নতুন মৌসুম শুরু হয়েছে ২১ অক্টোবর। এবার তারা এনবিসি, ইএসপিএন ও অ্যামাজনের সঙ্গে ১১ বছরের জন্য ৭৬ বিলিয়ন ডলারের সম্প্রচার চুক্তি করেছে—যা আগের প্রতি মৌসুমের হারকে অনেকটাই ছাড়িয়ে গেছে। এই বিশাল অঙ্কের অর্থ, শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকবে গ্রাহকদের পকেটে, যা অবৈধ সম্প্রচারের (পাইরেটেড স্ট্রিমিং) চাহিদা আরও বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ক্রীড়া লিগগুলো যদি অবৈধ সাইটগুলো পুরোপুরি বন্ধ করতে পারত, তাহলে তারা বছরে অতিরিক্ত ২৮ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারত।
ধরা-ছোঁয়ার বাইরে পাইরেটরা
পাইরেসির বিরুদ্ধে লড়াই যেন ‘হুই্যাক-অ্যা-মোল’ খেলার মতো: একটিকে বন্ধ করলে আরেকটি মাথা তোলে। আগস্টে মিশরের পুলিশ স্ট্রিমইস্ট নামে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া-পাইরেসি নেটওয়ার্কের দুই পরিচালনাকারীকে গ্রেপ্তার করে। এই সাইটটি গত বছর প্রায় ১.৬ বিলিয়ন বার ভিজিট করা হয়েছিল। গত মাসে মলদোভায় গ্রেপ্তার হয় ইতালির জনপ্রিয় পাইরেট সাইট ক্যালসিও-র প্রশাসকরা।

তবুও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অবৈধ সম্প্রচার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এমনকি দর্শকরাও এই বিষয়ে তেমন মাথা ঘামান না। যখন এনবিএ তারকা লেব্রন জেমসকে স্ট্রিমইস্টে খেলা দেখতে দেখা যায়, তখন ভক্তরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন—অবৈধভাবে দেখার জন্য নয়, বরং সাইটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করায়।
অ্যাম্পেয়ার অ্যানালাইসিসের এক জরিপে দেখা যায়, ১৬টি দেশের ৬৪% দর্শক গত এক মাসে অন্তত একবার অবৈধভাবে খেলা দেখেছেন। গবেষণা সংস্থাটির বিশ্লেষক ড্যানিয়েল মনাহ্যান বলেন, এখন লিগগুলো বিভিন্ন সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্প্রচারাধিকারের ভাগ করে দিচ্ছে। ফলে দর্শক যদি প্রিয় দলের সব খেলা দেখতে চান, তবে তাকে একাধিক সাবস্ক্রিপশন কিনতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, স্পোর্টিকো ওয়েবসাইটের হিসেবে, এনবিএর একটি দলের ৮২টি ম্যাচ দেখতে পুরো মৌসুমে খরচ হবে প্রায় ৬৫০ ডলার।
পাইরেসির সঙ্গে লড়াই নয়, তথ্যের সদ্ব্যবহার
এখন লিগগুলো শুধু অবৈধ স্ট্রিম বন্ধ করায় মনোযোগ দিচ্ছে না, বরং কত মানুষ এই সম্প্রচার দেখছে, সেই তথ্য সংগ্রহ করছে। এসব তথ্যের মাধ্যমে তারা তাদের প্রকৃত দর্শকভিত্তি বিশ্লেষণ করতে পারছে, যা স্পনসর ও বিজ্ঞাপনদাতাদের সঙ্গে আলোচনায় তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করছে।

ফলে পাইরেসির কারণে যে অংশের আয় হারাচ্ছিল, তার কিছুটা তারা স্পনসরদের কাছ থেকে বাড়তি ফি আদায় করে পূরণ করছে।
নতুন দৃষ্টিভঙ্গি: পাইরেসি মানেই শত্রু নয়
আগে পর্যন্ত লিগগুলো যেকোনো ধরনের পুনঃসম্প্রচার বন্ধ করার পক্ষে ছিল। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট নির্মাতাদের জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এনেছে।
এনবিএ এখন এসব কনটেন্ট নির্মাতাদের একটি দলকে “লিগ অ্যাম্বাসেডর” হিসেবে যুক্ত করেছে। এদের মধ্যে নির্বাচিত কিছুজনকে প্রতি বছর হাজার হাজার ঘণ্টার অফিসিয়াল ফুটেজ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা লিগের কনটেন্টকে নিজেদের সৃজনশীল উপায়ে নতুন দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে।
ক্রীড়াজগতে পাইরেসিকে আর শুধু ক্ষতির উৎস হিসেবে দেখা হচ্ছে না। বরং এটি হয়ে উঠছে তথ্য আহরণ, দর্শক বিশ্লেষণ ও প্রচারণার নতুন হাতিয়ার। অবৈধ সম্প্রচারের যুগে টিকে থাকতে লিগগুলো এখন শিখছে—সবাইকে দমন নয়, বরং বোঝা, এবং অন্তর্ভুক্ত করাই হতে পারে সফল কৌশল।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















