ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এখন থেকে মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই একটি কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুর রহমান জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং তালিকাভুক্তির জটিলতা কমবে।
আইপিও প্রক্রিয়ায় সময় কমছে
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এখন থেকে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে একটি কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বুধবার ডিএসই টাওয়ারে বাংলাদেশ সিরামিক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিসিএমইএ)-র সঙ্গে বৈঠকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “আগে একটি আইপিও প্রক্রিয়া শেষ হতে দুই থেকে চার বছর সময় লাগত। এখন আমরা সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছয় মাসের মধ্যেই এটি শেষ করতে পারব।”
ডিজিটাল রূপান্তরে নতুন দিগন্ত
আসাদুর রহমান জানান, নতুন আইপিও বিধিমালা শিগগিরই অনুমোদিত হবে, যা স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কর্তৃত্ব ও দক্ষতা আরও বাড়াবে। ডিএসই বর্তমানে একটি বড় ধরনের ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বলেন তিনি।
“আমরা গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিতে চাই। পুরো আইপিও প্রক্রিয়াটিকে অনলাইনে আনার মাধ্যমে সময়, ব্যয় ও জটিলতা কমিয়ে আনা হবে,” বলেন তিনি।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ডিএসই চালু করছে সেন্ট্রাল ডিজিটাল সাবমিশন সিস্টেম, যেখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের সব তথ্য—মূল্য সংবেদনশীল ঘোষণা, শেয়ারহোল্ডিং পরিবর্তন এবং ব্যবস্থাপনা হালনাগাদ—এক জায়গায় জমা দিতে পারবে।
নতুন তালিকায় জোর দিচ্ছে ডিএসই
ডিএসইর এমডি বলেন, নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির ঘাটতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাজারের সরবরাহপক্ষ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এখন এক্সচেঞ্জটি মৌলিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
তিনি জানান, ডিএসইর তিনটি প্ল্যাটফর্ম—মেইন বোর্ড, এসএমই বোর্ড এবং অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি)-এর মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে, যা দেশের ব্যাংকনির্ভর অর্থনীতির ওপর চাপ কমাবে।
“আমরা এখন কোম্পানিগুলোর জন্য এক-টু-ওয়ান সেবা দিতে প্রস্তুত। যারা মেইন বোর্ড বা এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী, তারা আমাদের টিমের কাছ থেকে নিবিড় সহায়তা পাবেন,” বলেন আসাদুর।
টেকসই অর্থনীতিতে মূল ভূমিকা রাখবে পুঁজিবাজার
আসাদুর রহমান আরও বলেন, “একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম স্তম্ভ। ডিএসইর এই রূপান্তর, শিল্প খাতকে পুঁজিবাজারের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করবে।”
ব্যবসায়ীদের প্রশংসা ও প্রস্তাবনা
বিসিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মো. মামুনুর রশিদ ডিএসইর এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ব্যবসায়ী সমাজের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়া, সময়সীমা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। এটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে।”
তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও ইকুইটি ফাইন্যান্সিং বা শেয়ারভিত্তিক অর্থায়ন এখনও সীমিত পর্যায়ে আছে।
“বর্তমানে প্রায় ৯৮ শতাংশ শিল্প বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আসে, যা একটি টেকসই পুঁজিবাজার গঠনের পথে বড় বাধা,” বলেন মামুনুর।
করনীতি ও কাগজপত্র সহজ করার আহ্বান
তিনি আইপিও প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার পরামর্শ দেন—তালিকাভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা সংক্ষিপ্ত করা এবং কর ও লভ্যাংশ নীতিকে বিনিয়োগবান্ধব করা জরুরি বলেও মত দেন।
মামুনুর আরও উল্লেখ করেন, ইস্যু ম্যানেজার, নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ফি-সহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক খরচ কোম্পানিগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
“এজিএম আয়োজন, নিয়ন্ত্রক নথি দাখিল ও বিভিন্ন ফি প্রদানের প্রক্রিয়ায় আর্থিক ও প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দেয়,” বলেন তিনি।
ডিজিটাল উদ্যোগে স্বস্তি
তবে তিনি ডিএসই ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক ডিজিটাল উদ্যোগ—যেমন অনলাইন এজিএম, হাইব্রিড সভা ও ইলেকট্রনিক নথি দাখিল—কে প্রশংসা করেন, যা এসব জটিলতা কমাতে সহায়তা করেছে।
বৈঠকে উপস্থিত বক্তারা আরও সুপারিশ করেন—
- করপোরেট গভর্ন্যান্স শক্তিশালী করা,
- কমপ্লায়েন্স ব্যয় কমানো,
- ইস্যু ম্যানেজারদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা,
- এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আন্তর্জাতিক রোডশো আয়োজন করা।
#ডিএসই #আইপিও #পুঁজিবাজার #বাংলাদেশঅর্থনীতি #ডিজিটালরূপান্তর
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















