১০:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
সাঙ্গু নদী: পাহাড়ের কোলে জন্ম, জীবনের ধারায় প্রবাহ রণক্ষেত্রে (পর্ব-১১৬) পাকিস্তানে প্রথম চীনা নির্মিত সাবমেরিন- ২০২৬ সালে উদ্বোধন সরকার বলছে, নেত্র নিউজের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিবেদন বিভ্রান্তিকর প্রার্থী বাছাইয়ে নারীদের প্রতি অবহেলা: বিএনপির রাজনীতিতে অদৃশ্য অর্ধেক বাংলাদেশে এ শীতে ১০ দফা শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা: আবহাওয়া অধিদপ্তর ভ্যাটিকান মন্ত্রীর কক্সবাজার সফর: রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সংহতির বার্তা শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন, দুই বোরসের সূচক নিম্নমুখী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হলেন মাহমুদুল হাসান রাজধানীতে মঙ্গলবার সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সমাবেশ

কে-পপ শিল্পে চুক্তির ক্ষমতার প্রমাণ — নিউজিনস ও এক্সও সদস্যদের মামলায় রায় ব্যবস্থাপনার পক্ষে

কে-পপে আইনি দ্বন্দ্বে নতুন আলোচনার জন্ম

কে-পপ শিল্পের বিশ্বব্যাপী প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পীদের ও ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে একচেটিয়া চুক্তি নিয়ে বিরোধও ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি এক্সও ব্যান্ডের তিন সদস্য চেন, বেকহিউন ও জিউমিন (যারা একসঙ্গে “সিবিএক্স” নামে পরিচিত) এবং জনপ্রিয় গার্ল গ্রুপ নিউজিনস-এর মামলায় আদালতের রায় শিল্পে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই রায়গুলো আবারও প্রশ্ন তুলেছে — কোরিয়ার তারকা তৈরির পদ্ধতিতে আসলে শিল্পীরা কতটা স্বাধীনতা পান?

এক্সও-সিবিএক্স বনাম এসএম এন্টারটেইনমেন্ট

এক্সও-র তিন সদস্য এবং এসএম এন্টারটেইনমেন্টের মধ্যে উত্তেজনা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসএম সম্প্রতি ডিসেম্বর মাসে এক্সও’র পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দেয়, কিন্তু তাতে সিবিএক্স সদস্যরা ছিলেন না। এর কারণ, ওই তিনজন নিজেদের নতুন এজেন্সি INB100 এর অধীনে পৃথকভাবে কাজ শুরু করেছিলেন।

বিরোধের সূত্রপাত ২০২৩ সালের জুনে, যখন তারা এসএম-এর সঙ্গে নবায়ন করা চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন, অভিযোগ করে যে আয়ের হিসাব, স্বচ্ছ নয়। এসএম এই অভিযোগ অস্বীকার করে। পরে আলোচনার মাধ্যমে তারা একটি সমঝোতায় পৌঁছায় — এক্সও নামের অধীনে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন, তবে ব্যক্তিগত আয়ের ১০ শতাংশ এসএম-কে দিতে হবে।

K-pop girl group NewJeans / Newsis

কিন্তু পরে এই সমঝোতা ভেঙে যায়। সিবিএক্স দাবি করে, এসএম মৌখিকভাবে করা ৫.৫ শতাংশ ডিস্ট্রিবিউশন ফি চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং তাদের অর্থ আটকে রেখেছে। ফলে তারা একাধিক মামলা ও অভিযোগ দায়ের করে, যা শেষ পর্যন্ত আদালতে এসএম-এর পক্ষেই গেছে।

অবশেষে সিবিএক্স জানায় তারা পূর্ববর্তী চুক্তি মেনে নেবে। তবে এসএম ‘বিশ্বাসের অভাব’ উল্লেখ করে তাদের এক্সও’র ভবিষ্যৎ কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়, যা জনমতের বড় অংশকে সিবিএক্সের বিপক্ষে দাঁড় করিয়েছে।

নিউজিনস বনাম অ্যাডর (HYBE লেবেলস)

নিউজিনস গ্রুপের পাঁচ সদস্য — মিনজি, হানি, ড্যানিয়েল, হেয়ারিন ও হেইন — এক বছরের বেশি সময় ধরে অ্যাডর (HYBE এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান)-এর সঙ্গে আইনি বিরোধে জড়িয়ে আছেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তারা আকস্মিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, তারা তাদের চুক্তি বাতিল করছে, কারণ প্রাক্তন সিইও মিন হি-জিনকে বরখাস্ত করার পর থেকে বিশ্বাসের সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে।

তারা আরও অভিযোগ করে যে, কোম্পানি তাদের ট্রেনি অবস্থার ছবি ও ভিডিও ফাঁস করেছে, HYBE এর পিআর কর্মীরা অবমাননাকর মন্তব্য করেছে এবং HYBE এর অন্য একটি সাব-লেবেল Belift Lab তাদের স্টাইল অনুকরণ করে নতুন গ্রুপ “ILLIT” তৈরি করেছে।

তবে আদালত জানায়, এসব অভিযোগ আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে চুক্তি বাতিলের যথেষ্ট কারণ নয়। রায়ে বলা হয়, “শিল্পীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য করা ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ হতে পারে, কিন্তু সৃজনশীল মতবিরোধ বা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত দ্বন্দ্ব তা নয়।” আদালত আরও সতর্ক করে দেয় যে, এমন মামলা ভবিষ্যতে পুরো শিল্পে ‘পূর্বনজির’ তৈরি করতে পারে, যা ‘ট্যালেন্ট পোঁচিং’ এর মতো নতুন সমস্যার জন্ম দেবে।

Former Ador CEO Min Hee-jin / Yonhap

শিল্পে চুক্তির ভারসাম্য বদলাচ্ছে

দীর্ঘদিন ধরে কোরিয়ান বিনোদনজগতে চুক্তিগুলো ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর পক্ষে ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। এক বড় বিনোদন সংস্থার এক অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি বলেন, “একসময় সংস্থাগুলো শিল্পীদের তৈরি করত এবং তারা ছিল দুর্বল পক্ষ। এখন কে-পপ বিশ্বজোড়া প্রভাব ফেলছে, ফলে শিল্পীরাও অনেক বেশি ক্ষমতাবান হয়েছেন। এখন চুক্তিগুলো পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হয় এবং যেহেতু এগুলো আইনত বাধ্যতামূলক, তাই একতরফা ভঙ্গ হলে মামলা অনিবার্য।”

তিনি আরও বলেন, “এখন বিষয়টি আর শুধুমাত্র কোম্পানি বনাম ব্যক্তি নয়; এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক কাঠামোর অংশ, যেখানে প্রতিটি পক্ষকেই আদালতের চূড়ান্ত রায়কে সম্মান করতে হবে।”

বিশ্লেষণ: কে-পপের ‘চুক্তি সংস্কৃতি’

এই দুই মামলার ফলাফল প্রমাণ করে যে কে-পপের সাফল্যের পেছনে শুধু গান বা পারফরম্যান্স নয়, বরং চুক্তির শক্ত কাঠামোও কাজ করে। এখন আর শিল্পীরা নিছক তারকা নয় — তারা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। ফলে, চুক্তি ও আইনি দায়বদ্ধতা নিয়ে তাদেরও সচেতন থাকতে হচ্ছে।

যে যুগে কে-পপ কেবল কোরিয়ার নয়, বৈশ্বিক বিনোদন অর্থনীতির অংশ, সেখানে শিল্পী ও প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ককে নতুন ভারসাম্যের মধ্যে আনা এখন সময়ের দাবি।

সাঙ্গু নদী: পাহাড়ের কোলে জন্ম, জীবনের ধারায় প্রবাহ

কে-পপ শিল্পে চুক্তির ক্ষমতার প্রমাণ — নিউজিনস ও এক্সও সদস্যদের মামলায় রায় ব্যবস্থাপনার পক্ষে

০১:১৯:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

কে-পপে আইনি দ্বন্দ্বে নতুন আলোচনার জন্ম

কে-পপ শিল্পের বিশ্বব্যাপী প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পীদের ও ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে একচেটিয়া চুক্তি নিয়ে বিরোধও ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি এক্সও ব্যান্ডের তিন সদস্য চেন, বেকহিউন ও জিউমিন (যারা একসঙ্গে “সিবিএক্স” নামে পরিচিত) এবং জনপ্রিয় গার্ল গ্রুপ নিউজিনস-এর মামলায় আদালতের রায় শিল্পে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই রায়গুলো আবারও প্রশ্ন তুলেছে — কোরিয়ার তারকা তৈরির পদ্ধতিতে আসলে শিল্পীরা কতটা স্বাধীনতা পান?

এক্সও-সিবিএক্স বনাম এসএম এন্টারটেইনমেন্ট

এক্সও-র তিন সদস্য এবং এসএম এন্টারটেইনমেন্টের মধ্যে উত্তেজনা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসএম সম্প্রতি ডিসেম্বর মাসে এক্সও’র পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দেয়, কিন্তু তাতে সিবিএক্স সদস্যরা ছিলেন না। এর কারণ, ওই তিনজন নিজেদের নতুন এজেন্সি INB100 এর অধীনে পৃথকভাবে কাজ শুরু করেছিলেন।

বিরোধের সূত্রপাত ২০২৩ সালের জুনে, যখন তারা এসএম-এর সঙ্গে নবায়ন করা চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন, অভিযোগ করে যে আয়ের হিসাব, স্বচ্ছ নয়। এসএম এই অভিযোগ অস্বীকার করে। পরে আলোচনার মাধ্যমে তারা একটি সমঝোতায় পৌঁছায় — এক্সও নামের অধীনে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন, তবে ব্যক্তিগত আয়ের ১০ শতাংশ এসএম-কে দিতে হবে।

K-pop girl group NewJeans / Newsis

কিন্তু পরে এই সমঝোতা ভেঙে যায়। সিবিএক্স দাবি করে, এসএম মৌখিকভাবে করা ৫.৫ শতাংশ ডিস্ট্রিবিউশন ফি চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং তাদের অর্থ আটকে রেখেছে। ফলে তারা একাধিক মামলা ও অভিযোগ দায়ের করে, যা শেষ পর্যন্ত আদালতে এসএম-এর পক্ষেই গেছে।

অবশেষে সিবিএক্স জানায় তারা পূর্ববর্তী চুক্তি মেনে নেবে। তবে এসএম ‘বিশ্বাসের অভাব’ উল্লেখ করে তাদের এক্সও’র ভবিষ্যৎ কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়, যা জনমতের বড় অংশকে সিবিএক্সের বিপক্ষে দাঁড় করিয়েছে।

নিউজিনস বনাম অ্যাডর (HYBE লেবেলস)

নিউজিনস গ্রুপের পাঁচ সদস্য — মিনজি, হানি, ড্যানিয়েল, হেয়ারিন ও হেইন — এক বছরের বেশি সময় ধরে অ্যাডর (HYBE এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান)-এর সঙ্গে আইনি বিরোধে জড়িয়ে আছেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তারা আকস্মিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, তারা তাদের চুক্তি বাতিল করছে, কারণ প্রাক্তন সিইও মিন হি-জিনকে বরখাস্ত করার পর থেকে বিশ্বাসের সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে।

তারা আরও অভিযোগ করে যে, কোম্পানি তাদের ট্রেনি অবস্থার ছবি ও ভিডিও ফাঁস করেছে, HYBE এর পিআর কর্মীরা অবমাননাকর মন্তব্য করেছে এবং HYBE এর অন্য একটি সাব-লেবেল Belift Lab তাদের স্টাইল অনুকরণ করে নতুন গ্রুপ “ILLIT” তৈরি করেছে।

তবে আদালত জানায়, এসব অভিযোগ আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে চুক্তি বাতিলের যথেষ্ট কারণ নয়। রায়ে বলা হয়, “শিল্পীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য করা ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ হতে পারে, কিন্তু সৃজনশীল মতবিরোধ বা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত দ্বন্দ্ব তা নয়।” আদালত আরও সতর্ক করে দেয় যে, এমন মামলা ভবিষ্যতে পুরো শিল্পে ‘পূর্বনজির’ তৈরি করতে পারে, যা ‘ট্যালেন্ট পোঁচিং’ এর মতো নতুন সমস্যার জন্ম দেবে।

Former Ador CEO Min Hee-jin / Yonhap

শিল্পে চুক্তির ভারসাম্য বদলাচ্ছে

দীর্ঘদিন ধরে কোরিয়ান বিনোদনজগতে চুক্তিগুলো ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর পক্ষে ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। এক বড় বিনোদন সংস্থার এক অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি বলেন, “একসময় সংস্থাগুলো শিল্পীদের তৈরি করত এবং তারা ছিল দুর্বল পক্ষ। এখন কে-পপ বিশ্বজোড়া প্রভাব ফেলছে, ফলে শিল্পীরাও অনেক বেশি ক্ষমতাবান হয়েছেন। এখন চুক্তিগুলো পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হয় এবং যেহেতু এগুলো আইনত বাধ্যতামূলক, তাই একতরফা ভঙ্গ হলে মামলা অনিবার্য।”

তিনি আরও বলেন, “এখন বিষয়টি আর শুধুমাত্র কোম্পানি বনাম ব্যক্তি নয়; এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক কাঠামোর অংশ, যেখানে প্রতিটি পক্ষকেই আদালতের চূড়ান্ত রায়কে সম্মান করতে হবে।”

বিশ্লেষণ: কে-পপের ‘চুক্তি সংস্কৃতি’

এই দুই মামলার ফলাফল প্রমাণ করে যে কে-পপের সাফল্যের পেছনে শুধু গান বা পারফরম্যান্স নয়, বরং চুক্তির শক্ত কাঠামোও কাজ করে। এখন আর শিল্পীরা নিছক তারকা নয় — তারা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। ফলে, চুক্তি ও আইনি দায়বদ্ধতা নিয়ে তাদেরও সচেতন থাকতে হচ্ছে।

যে যুগে কে-পপ কেবল কোরিয়ার নয়, বৈশ্বিক বিনোদন অর্থনীতির অংশ, সেখানে শিল্পী ও প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ককে নতুন ভারসাম্যের মধ্যে আনা এখন সময়ের দাবি।