কানাডার ইউনিভার্সিটি অব সাসকাচুয়ানের ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ অর্গানাইজেশন (ভিডিও) বিশ্বমানের গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে, ভবিষ্যতের মহামারির প্রস্তুতি নিচ্ছে
গবেষণা ও উদ্ভাবনের অর্ধশতাব্দী
ইউনিভার্সিটি অব সাসকাচুয়ানের ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ অর্গানাইজেশন (ভিডিও) গত ৫০ বছর ধরে টিকা গবেষণায় বৈপ্লবিক সাফল্য অর্জন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে এমন এক গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত, যা দ্রুত ও কার্যকরভাবে, নতুন সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম।
ভিডিওর বিস্তৃত গবেষণা পরিকাঠামোর মধ্যে রয়েছে ৩০টিরও বেশি গবেষণাগার, ৪০টিরও বেশি প্রাণী পর্যবেক্ষণ কক্ষ, ৬৫ হেক্টর বিস্তৃত বৃহৎ প্রাণী গবেষণা স্টেশন এবং একটি উন্নতমানের টিকা উৎপাদন কারখানা, যেখানে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ভাইরাস যেমন কোভিড-১৯ বা ইনফ্লুয়েঞ্জা নিরাপদে গবেষণা করা যায়।
ভবিষ্যতের টিকা আজই গড়ে উঠছে
ভিডিও বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও উন্নত ডেটা বিশ্লেষণ ব্যবহার করে এমন টিকা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে, যা একাধিক রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে একসাথে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে।

পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ভল্কার গের্ডটস বলেন, “আমরা ভবিষ্যতের রোগজীবাণুর ধরন পূর্বাভাস করতে পারছি এবং এমন টিকা তৈরি করছি, যা ভবিষ্যতের মহামারির আগেই প্রস্তুত থাকবে।”
প্রাণী থেকে মানুষের টিকা গবেষণায় বিশ্বনেতৃত্ব
১৯৭৫ সালে পশু রোগ গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে, যাত্রা শুরু করে ভিডিও। আজ এটি বিশ্বমানের সংক্রামক রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইতিহাস অনুযায়ী মানুষের দুই-তৃতীয়াংশ সংক্রামক রোগ প্রাণী থেকেই উদ্ভূত হয়—এই বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা ভিডিওর বিকাশকে যৌক্তিক ও জরুরি করেছে।
গত পাঁচ দশকে প্রতিষ্ঠানটি আটটি বাণিজ্যিক প্রাণী টিকা তৈরি করেছে: যার ছয়টি ছিল বিশ্বের প্রথম। এসব উদ্ভাবন বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
কোভিড-১৯ গবেষণায় সাফল্যের মাইলফলক
২০২০ সালে ভিডিও কানাডার প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে আলাদা করতে সক্ষম হয় এবং দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা শুরু করে।
ড. গের্ডটস বলেন, “আমরা এক বছরেরও কম সময়ে টিকা তৈরি করতে পেরেছি এবং পরবর্তীতে বৈশ্বিক সংস্থা সিইপিআই-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বে এমন টিকা তৈরি করছি, যা বর্তমান ও ভবিষ্যতের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে।”
বার্ড ফ্লু গবেষণায় নতুন আবিষ্কার
মহামারি-পরবর্তী সময়ে ভিডিও যুক্তরাষ্ট্রে দুগ্ধ গাভীদের মধ্যে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাবে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়। এই গবেষণায় প্রমাণিত হয়, গাভীরাও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে, কিন্তু সংক্রমণের পর তারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম—যা ভবিষ্যতে গবাদি পশুর টিকা উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

মহামারি প্রতিরোধে গবেষণার উৎকর্ষ
ভিডিওর চলমান গবেষণার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের করোনাভাইরাস টিকা তৈরি করা—যা একাধিক রূপের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দেবে।
ড. গের্ডটস বলেন, “আমরা পরবর্তী মহামারির আগে প্রস্তুত হতে চাই—যাতে পৃথিবী আর কখনও এমন বিপর্যয়ের মুখোমুখি না হয়।”
বর্তমানে ভিডিওর দলে ২০০-রও বেশি বিজ্ঞানী, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ কাজ করছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিষ্ঠানটি ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সরকারি ও বেসরকারি তহবিল পেয়েছে নতুন গবেষণা অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য।
বৈজ্ঞানিক সহযোগিতায় বৈশ্বিক নেতৃত্ব
ইউনিভার্সিটি অব সাসকাচুয়ানের প্রেসিডেন্ট পিটার স্টোইচেফ বলেন, “মহামারির মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একক কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যথেষ্ট নয়; আমাদের বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা প্রয়োজন।”
ভিডিও বর্তমানে সিইপিআই-এর সেই বৈশ্বিক পরিকল্পনার অংশ, যার লক্ষ্য মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে নতুন টিকা তৈরি করা, যাতে ভবিষ্যতের রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকা যায়।
নতুন ল্যাব ও উৎপাদন সুবিধা
বর্তমানে ভিডিও নতুন কনটেইনমেন্ট লেভেল-৪ ল্যাব এবং ছয়গুণ বড় প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করছে, যা আরও বেশি প্রজাতির উপর গবেষণা সম্ভব করবে।
২০২২ সালে চালু হওয়া ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের সম্প্রসারণের মাধ্যমে মানব টিকার প্রোটোটাইপ তৈরি ও প্রাণী টিকার বাণিজ্যিক উৎপাদন—উভয়ই সম্ভব হবে।
ড. গের্ডটস বলেন, “এই উল্লম্বভাবে সমন্বিত কাঠামো আমাদের যেকোনো নতুন রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম করবে—মানব হোক বা প্রাণীজ।”

সহযোগিতা, দক্ষতা ও অবকাঠামোর সম্মিলিত শক্তি
ভিডিওর শক্তি শুধু উন্নত প্রযুক্তিতে নয়, বরং একটি সহযোগিতামূলক, আন্তঃবিভাগীয় পরিবেশে অন্তর্নিহিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কেন্দ্র যেমন সিলভিয়া ফেডোরুক কানাডিয়ান সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার ইনোভেশন, কানাডিয়ান লাইট সোর্স এবং ওয়েস্টার্ন কলেজ অব ভেটেরিনারি মেডিসিন—ভিডিওর সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
স্টোইচেফ বলেন, “ভিডিও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈচিত্র্য ও গবেষণার উৎকর্ষতা এনেছে। এটি এক সত্যিকারের পারস্পরিক সম্পর্ক।”
আগামীর সুরক্ষায় ভিডিওর প্রস্তুতি
অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে ভিডিও এখন ভবিষ্যতের সংক্রামক রোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত। প্রাণী ও মানব সংক্রমণ গবেষণায় বিশ্বজোড়া খ্যাতি, আধুনিক গবেষণা অবকাঠামো ও উৎপাদন সক্ষমতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি শুধু কানাডাই নয়, গোটা বিশ্বকেও সুরক্ষিত রাখতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















