সীমান্তে আরসা ও আরএসও-কে সমর্থনের অভিযোগ ‘পুরোটাই মিথ্যা’ বলে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সংস্থাটি জানায়, আরাকান আর্মি (এএ) ও ইউনাইটেড লীগ অব আরাকান (ইউএএলএ) ইচ্ছাকৃতভাবে ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে সীমান্তে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
ভিত্তিহীন অভিযোগে বিজিবির প্রতিবাদ
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) আরাকান আর্মি (এএ) ও ইউনাইটেড লীগ অব আরাকান (ইউএএলএ)-এর ছড়ানো ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ ও ‘ভুল তথ্য’ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। সংস্থাটি জানায়, সীমান্ত এলাকায় তাদের কার্যক্রম নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে—বিশেষ করে আরসা (ARSA) ও আরএসও (RSO) গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনের অভিযোগ—তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সীমান্তে ঘটনার বিস্তারিত
শুক্রবার বিজিবি সদর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৫ নভেম্বর পালংখালী এলাকার বিআরএম (১৯) পয়েন্টের কাছাকাছি বাংলাদেশের সীমান্তভুক্ত স্থানে সংঘটিত একটি ঘটনা বিজিবির পেশাদারিত্ব ও শান্তি রক্ষার প্রতিশ্রুতির প্রমাণ দেয়।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “সেদিন তিনজন অস্ত্রধারী আরাকান আর্মি সদস্য স্বেচ্ছায় জিরো লাইন অতিক্রম করে বিজিবি সদস্যদের ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে তিন রাউন্ড গুলি চালায়। এক গুলি আমাদের সীমান্ত পোস্টে আঘাত করে, যা তাদের আক্রমণাত্মক মনোভাবের স্পষ্ট ইঙ্গিত।”

বিজিবি জানায়, তাদের সদস্যরা ধৈর্য ধরে কেবল সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছিলেন, যাতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটে। অতীতে আরাকান আর্মির গুলিতে সীমান্তের ঘরবাড়ি ও দোকানে ক্ষতি হয়েছে, এমনকি সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন; তাদের পাতা মাইনে থেকেও আগে এক বিজিবি সদস্যসহ কয়েকজন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছিলেন।
আরসা ও আরএসও সমর্থনের অভিযোগ ‘পুরোটাই মিথ্যা’
বিজিবি স্পষ্টভাবে বলেছে, তারা কোনোভাবেই আরসা, আরএসও কিংবা রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জড়িত নয় বা তাদের সহায়তা করে না। সংস্থার একমাত্র লক্ষ্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষা।
বিবৃতিতে বলা হয়, এএ ও ইউএএলএ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ভুল প্রচারণা চালাচ্ছে, যাতে বিজিবির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। বিজিবির টহল কার্যক্রমের ফলে রাখাইন রাজ্য থেকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ও চোরাচালান কার্যক্রমে বড় বাধা সৃষ্টি হয়েছে, যা আরাকান আর্মির স্বার্থে সরাসরি আঘাত হেনেছে।
মাদক পাচারে বিজিবির সাফল্য ও প্রতিরোধ
বিজিবি জানায়, রাখাইন সীমান্ত দিয়ে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক পাচার প্রায় বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে তারা। এসব কার্যক্রমের লক্ষ্য ছিল জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এসব ইতিবাচক পদক্ষেপকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে এএ ও ইউএএলএর মিথ্যা প্রচারণা।

‘মিথ্যা প্রচারণার চক্র’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিজিবি যখনই কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়, তখনই আবার নতুন করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়—যা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করার কৌশল। বিজিবি বলেছে, “আমরা প্রস্তুত আছি যেকোনো মিথ্যা প্রচারণার জবাবে সত্য ও তথ্যনির্ভর প্রতিক্রিয়া জানাতে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বিজিবি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অখণ্ড সীমান্ত রক্ষায় অটল থাকবে।”
ভারতের অনুপ্রবেশ সম্পর্কেও গুজব প্রত্যাখ্যান
বিজিবি লালমনিরহাট সীমান্তে ভারতের অনুপ্রবেশ সম্পর্কিত গুজবও সরাসরি নাকচ করেছে।
দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান
বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা আরাকান আর্মি ও ইউএএলএ-কে আহ্বান জানাই, তারা যেন মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করে। ভিত্তিহীন অভিযোগ শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে না, বরং সীমান্তে অবিশ্বাস ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে।”
বিজিবি তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বে অটল থেকে সকল পক্ষকে দায়িত্বশীল ও সত্যনিষ্ঠ অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

সীমান্ত রক্ষায় অঙ্গীকার
বিবৃতির শেষে বিজিবি পুনর্ব্যক্ত করেছে—বাংলাদেশের সীমান্তের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা অঙ্গীকারবদ্ধ এবং যেকোনো বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার জবাব তারা তথ্য ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে দিতে থাকবে।
#বিজিবি #আরাকানআর্মি #ইউএএলএ #সীমান্তসংঘাত #বাংলাদেশসুরক্ষা #মিথ্যাপ্রচারণা #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















