০৫:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
নীরব চা উৎসব সিরিয়ায় গুম-অপহরণের ভয়াবহ উত্থান: জাতিসংঘের গভীর উদ্বেগ গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, গুরুত্বপূর্ণ পথ সাইপ্রাস যুক্তরাষ্ট্রের স্নাইপার রাইফেল পেল ব্রাজিলের পুলিশ চীন-নেদারল্যান্ডস দ্বন্দ্বে তৈরি চিপ সংকট প্রশমনের পথে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ তদন্ত নিয়ে কী বলছে সরকার, আইএসপিআর চীন বিরল খনিজ রপ্তানি বিধিনিষেধ শিথিলের উদ্যোগ নিলেও ট্রাম্পের প্রত্যাশার পূর্ণতা নেই এআই বাজারে উদ্বেগে নাসডাকের পতন: এপ্রিলের পর সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ টাইফুন ‘কালমেগি’-এর তাণ্ডবে ভিয়েতনামে প্রাণহানি, ফিলিপাইনে মৃতের সংখ্যা ছুঁয়েছে ২০০ ইলন মাস্ক পেলেন ইতিহাসগড়া বেতন অনুমোদন, টেসলার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোট্যাক্সি কেন্দ্রীয় ভূমিকা

কুইন্স: প্রবাসী নারীদের জীবনের টানাপোড়েন ও আত্মসংগ্রামের নাটক

প্রবাসী নারীদের সংগ্রামের গল্প

মার্টিনা মাজকের লেখা নাটক “কুইন্স” নিউইয়র্কের “কুইন্স” এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসী নারীরা একসঙ্গে বসবাস করেন একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের বেসমেন্টে। নাটকটি তাদের টিকে থাকার লড়াই, মানসিক আঘাত, একাকীত্ব এবং জীবনের অনিশ্চয়তার কাহিনি তুলে ধরে।


প্রবাসী জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি

পোল্যান্ড, ইউক্রেন, হন্ডুরাস, বেলারুশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা এই নারীরা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন জীবন গড়ার চেষ্টা করছেন। তারা সমাজের প্রান্তিক অবস্থানে থেকে নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন। মাজকের নিজস্ব অভিবাসী অভিজ্ঞতা ও তীক্ষ্ণ সামাজিক পর্যবেক্ষণ নাটকটিকে আরও বাস্তবসম্মত করে তুলেছে।

নাটকটির প্রথম প্রযোজনা হয় ২০১৮ সালে। এখন ম্যানহাটন থিয়েটার ক্লাব এটি পুনরায় মঞ্চস্থ করছে। গল্পটি ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পরবর্তী সময় থেকে শুরু হয়ে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত।


কেন্দ্রীয় চরিত্র রেনিয়া

গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র রেনিয়া, পোল্যান্ড থেকে আসা এক নারী। শুরুতে তিনি সরলমনা হলেও ধীরে ধীরে জীবনের কঠোরতা তাকে কৌশলী ও দৃঢ় করে তোলে। অফ-ব্রডওয়ে অভিনেত্রী মারিন আয়ারল্যান্ড রেনিয়ার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন।

নাটকের শুরুতেই দেখা যায় ২০১৭ সালে রেনিয়া এক তরুণী ইননার মুখোমুখি হন, যে তাকে নিজের মা ভেবে ভুল করে এবং ক্ষোভে আক্রমণ করে। কিন্তু পরক্ষণেই রেনিয়া তাকে থাকার জন্য আশ্রয় দেন।


২০০১ সালের ঘটনাপ্রবাহ

প্রথম অঙ্কে দেখা যায়, ২০০১ সালে সদ্য আসা রেনিয়া দুই সহবাসী নারীর মুখোমুখি হন — বেলারুশের পেলাগিয়া, যিনি অন্যদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করেন, এবং আফগানিস্তানের আমানি, যিনি একই সঙ্গে কঠোর ও সহানুভূতিশীল। আরেক নারী ইসাবেলা হন্ডুরাসে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, কারণ তার অসুস্থ মায়ের খবর এসেছে।

ইসাবেলার বিদায়ের আগে আয়োজিত ছোট্ট পার্টিতে তারা হাসি-কান্নার মিশ্র অনুভূতিতে মেতে ওঠে। ইসাবেলার সংলাপটি নাটকের অন্যতম হৃদয়স্পর্শী মুহূর্ত —
“মানুষ ভাবে এক বছর থাকবে, টাকা জমাবে, তারপর ফিরবে। কিন্তু সময় গড়াতে গড়াতে জীবন গড়ে ওঠে এখানে, ভুলবশতই।”


নিঃসঙ্গতা ও না-বলা সম্পর্কের বন্ধন

নাটকটি দেখায়, একই ছাদের নিচে বছরের পর বছর কাটালেও এই নারীরা একে অপরের জীবনের গভীর কিছুই জানে না। এক পর্যায়ে আমানি প্রশ্ন করে, “আমরা কথা বলি না কেন?” পেলাগিয়ার উত্তর, “সময় নেই — আমরা কাজ করি আর ঘুমাই।”

তাদের জীবনে সবচেয়ে বড় অভাব হলো স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা। মাতৃভূমির প্রতি টান, পরিবারের প্রতি অপরাধবোধ, আর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা — সব মিলিয়ে তারা এক অবিরাম টানাপোড়েনে বেঁচে থাকে।


সংঘাত ও মানবিক বেদনা

দ্বিতীয় অঙ্কে আসে নাটকের অন্যতম তীব্র দৃশ্য — গর্ভবতী আগাতা, পোল্যান্ড থেকে আসা আরেক নারী, হঠাৎ বেসমেন্টে এসে রেনিয়ার মুখোমুখি হয়। দুই নারীর মধ্যে উত্তপ্ত তর্ক চলে পোলিশ ভাষায়। আগাতা জানায়, রেনিয়া তার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিল, আর তার মা মারা গেছেন।


‘কুইন্স’-এর প্রতীকী অর্থ

নাটকটির নাম যেমন নিউইয়র্কের কুইন্স অঞ্চল থেকে এসেছে, তেমনি এর ভেতরেও “কুইন” বা রাণীর এক প্রতীকী মানে লুকিয়ে আছে — এই নারীরা নিজেদের দৈনন্দিন সংগ্রামের মধ্যেও এক ধরনের মর্যাদা বহন করেন।

গিটারটি, যা এক পুরোনো ভাড়াটে রেখে গিয়েছিল, আমানি মাঝে মাঝে বাজায় — এটি যেন হারিয়ে যাওয়া অতীত ও স্মৃতির প্রতীক।


মঞ্চায়ন ও নির্মাণ

ট্রিপ কালম্যানের পরিচালনায় নাটকটি সংবেদনশীলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। মার্শা গিন্সবার্গের ডিজাইন করা মলিন বেসমেন্ট সেট দর্শকদের মনে করিয়ে দেয় এই নারীদের কঠিন বাস্তবতা।


প্রত্যাবর্তনের দ্বন্দ্ব

মাজকের নাটক দেখায়, এই নারীদের কাছে যাত্রাপথ যেদিকে হোক না কেন, সব পথই কষ্টকর। নিজের দেশে ফেরা মানে আবার দারিদ্র্য বা দমন-পীড়নের মুখে ফেরা, আর আমেরিকায় থাকা মানে এক অনিশ্চিত লড়াই চালিয়ে যাওয়া।

রেনিয়ার সংলাপে ধরা পড়ে সেই দোলাচল —
“আমি এখানে ১৬ বছর ধরে কিছু একটা গড়ছিলাম! যদি শূন্য হাতে ফিরে যাই, তাহলে এতদিনের মানে কী?”

তারা কেউ-ই ফিরে গেলে রাজমুকুট পাবে না, কেবল স্মৃতি আর অসমাপ্ত স্বপ্ন সঙ্গে নিয়ে ফিরবে।



#কুইন্স #নাটক #প্রবাসীনারী #থিয়েটার #নিউইয়র্ক #মার্টিনামাজক #মানবিকগল্প #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

নীরব চা উৎসব

কুইন্স: প্রবাসী নারীদের জীবনের টানাপোড়েন ও আত্মসংগ্রামের নাটক

০১:১৬:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

প্রবাসী নারীদের সংগ্রামের গল্প

মার্টিনা মাজকের লেখা নাটক “কুইন্স” নিউইয়র্কের “কুইন্স” এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসী নারীরা একসঙ্গে বসবাস করেন একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের বেসমেন্টে। নাটকটি তাদের টিকে থাকার লড়াই, মানসিক আঘাত, একাকীত্ব এবং জীবনের অনিশ্চয়তার কাহিনি তুলে ধরে।


প্রবাসী জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি

পোল্যান্ড, ইউক্রেন, হন্ডুরাস, বেলারুশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা এই নারীরা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন জীবন গড়ার চেষ্টা করছেন। তারা সমাজের প্রান্তিক অবস্থানে থেকে নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন। মাজকের নিজস্ব অভিবাসী অভিজ্ঞতা ও তীক্ষ্ণ সামাজিক পর্যবেক্ষণ নাটকটিকে আরও বাস্তবসম্মত করে তুলেছে।

নাটকটির প্রথম প্রযোজনা হয় ২০১৮ সালে। এখন ম্যানহাটন থিয়েটার ক্লাব এটি পুনরায় মঞ্চস্থ করছে। গল্পটি ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পরবর্তী সময় থেকে শুরু হয়ে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত।


কেন্দ্রীয় চরিত্র রেনিয়া

গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র রেনিয়া, পোল্যান্ড থেকে আসা এক নারী। শুরুতে তিনি সরলমনা হলেও ধীরে ধীরে জীবনের কঠোরতা তাকে কৌশলী ও দৃঢ় করে তোলে। অফ-ব্রডওয়ে অভিনেত্রী মারিন আয়ারল্যান্ড রেনিয়ার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন।

নাটকের শুরুতেই দেখা যায় ২০১৭ সালে রেনিয়া এক তরুণী ইননার মুখোমুখি হন, যে তাকে নিজের মা ভেবে ভুল করে এবং ক্ষোভে আক্রমণ করে। কিন্তু পরক্ষণেই রেনিয়া তাকে থাকার জন্য আশ্রয় দেন।


২০০১ সালের ঘটনাপ্রবাহ

প্রথম অঙ্কে দেখা যায়, ২০০১ সালে সদ্য আসা রেনিয়া দুই সহবাসী নারীর মুখোমুখি হন — বেলারুশের পেলাগিয়া, যিনি অন্যদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করেন, এবং আফগানিস্তানের আমানি, যিনি একই সঙ্গে কঠোর ও সহানুভূতিশীল। আরেক নারী ইসাবেলা হন্ডুরাসে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, কারণ তার অসুস্থ মায়ের খবর এসেছে।

ইসাবেলার বিদায়ের আগে আয়োজিত ছোট্ট পার্টিতে তারা হাসি-কান্নার মিশ্র অনুভূতিতে মেতে ওঠে। ইসাবেলার সংলাপটি নাটকের অন্যতম হৃদয়স্পর্শী মুহূর্ত —
“মানুষ ভাবে এক বছর থাকবে, টাকা জমাবে, তারপর ফিরবে। কিন্তু সময় গড়াতে গড়াতে জীবন গড়ে ওঠে এখানে, ভুলবশতই।”


নিঃসঙ্গতা ও না-বলা সম্পর্কের বন্ধন

নাটকটি দেখায়, একই ছাদের নিচে বছরের পর বছর কাটালেও এই নারীরা একে অপরের জীবনের গভীর কিছুই জানে না। এক পর্যায়ে আমানি প্রশ্ন করে, “আমরা কথা বলি না কেন?” পেলাগিয়ার উত্তর, “সময় নেই — আমরা কাজ করি আর ঘুমাই।”

তাদের জীবনে সবচেয়ে বড় অভাব হলো স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা। মাতৃভূমির প্রতি টান, পরিবারের প্রতি অপরাধবোধ, আর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা — সব মিলিয়ে তারা এক অবিরাম টানাপোড়েনে বেঁচে থাকে।


সংঘাত ও মানবিক বেদনা

দ্বিতীয় অঙ্কে আসে নাটকের অন্যতম তীব্র দৃশ্য — গর্ভবতী আগাতা, পোল্যান্ড থেকে আসা আরেক নারী, হঠাৎ বেসমেন্টে এসে রেনিয়ার মুখোমুখি হয়। দুই নারীর মধ্যে উত্তপ্ত তর্ক চলে পোলিশ ভাষায়। আগাতা জানায়, রেনিয়া তার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিল, আর তার মা মারা গেছেন।


‘কুইন্স’-এর প্রতীকী অর্থ

নাটকটির নাম যেমন নিউইয়র্কের কুইন্স অঞ্চল থেকে এসেছে, তেমনি এর ভেতরেও “কুইন” বা রাণীর এক প্রতীকী মানে লুকিয়ে আছে — এই নারীরা নিজেদের দৈনন্দিন সংগ্রামের মধ্যেও এক ধরনের মর্যাদা বহন করেন।

গিটারটি, যা এক পুরোনো ভাড়াটে রেখে গিয়েছিল, আমানি মাঝে মাঝে বাজায় — এটি যেন হারিয়ে যাওয়া অতীত ও স্মৃতির প্রতীক।


মঞ্চায়ন ও নির্মাণ

ট্রিপ কালম্যানের পরিচালনায় নাটকটি সংবেদনশীলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। মার্শা গিন্সবার্গের ডিজাইন করা মলিন বেসমেন্ট সেট দর্শকদের মনে করিয়ে দেয় এই নারীদের কঠিন বাস্তবতা।


প্রত্যাবর্তনের দ্বন্দ্ব

মাজকের নাটক দেখায়, এই নারীদের কাছে যাত্রাপথ যেদিকে হোক না কেন, সব পথই কষ্টকর। নিজের দেশে ফেরা মানে আবার দারিদ্র্য বা দমন-পীড়নের মুখে ফেরা, আর আমেরিকায় থাকা মানে এক অনিশ্চিত লড়াই চালিয়ে যাওয়া।

রেনিয়ার সংলাপে ধরা পড়ে সেই দোলাচল —
“আমি এখানে ১৬ বছর ধরে কিছু একটা গড়ছিলাম! যদি শূন্য হাতে ফিরে যাই, তাহলে এতদিনের মানে কী?”

তারা কেউ-ই ফিরে গেলে রাজমুকুট পাবে না, কেবল স্মৃতি আর অসমাপ্ত স্বপ্ন সঙ্গে নিয়ে ফিরবে।



#কুইন্স #নাটক #প্রবাসীনারী #থিয়েটার #নিউইয়র্ক #মার্টিনামাজক #মানবিকগল্প #সারাক্ষণরিপোর্ট