চাঁদে মানুষের স্থায়ী উপস্থিতি গড়তে বিদ্যুৎ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাশিয়া আগামী এক দশকের মধ্যেই চাঁদে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এই কেন্দ্র থেকে শক্তি জোগানো হবে রাশিয়ার চন্দ্র কর্মসূচি এবং রাশিয়া ও চীনের যৌথ গবেষণা কেন্দ্রকে। মহাকাশে প্রভাব বিস্তারের নতুন দৌড়ে এই উদ্যোগকে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাশিয়ার পুরোনো গৌরব আর নতুন লক্ষ্য
মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে রাশিয়ার নাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম মানুষ হিসেবে ইউরি গাগারিনের মহাকাশে যাওয়া দেশটিকে একসময় শীর্ষে তুলে ধরেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের তুলনায় রাশিয়ার গতি কিছুটা কমে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যর্থ চন্দ্র অভিযান সেই বাস্তবতাকেই সামনে এনে দেয়। এবার চাঁদে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা রাশিয়ার হারানো নেতৃত্ব ফেরানোর চেষ্টার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
চাঁদে বিদ্যুৎকেন্দ্র কেন দরকার
চাঁদের পরিবেশ খুব কঠিন। সেখানে দিনের পর রাত দীর্ঘ, সূর্যের আলো সব সময় পাওয়া যায় না। ফলে শুধু সৌরশক্তির ওপর নির্ভর করা কঠিন। পারমাণবিক শক্তি হলে দীর্ঘ সময় ধরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। এই বিদ্যুৎ দিয়ে চাঁদে রোভার চালানো, গবেষণাগার পরিচালনা করা এবং ভবিষ্যতে মানুষের থাকার উপযোগী অবকাঠামো গড়ে তোলা সহজ হবে।
রাশিয়া ও চীনের যৌথ পরিকল্পনা
রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, চাঁদে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানো হবে তা রাশিয়া ও চীনের যৌথ আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রের জন্যও ব্যবহার করা হবে। এই কেন্দ্রকে ভবিষ্যতে স্থায়ী বৈজ্ঞানিক ঘাঁটিতে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। একবারের অভিযানের বদলে দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি গড়াই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।
যুক্তরাষ্ট্রও পিছিয়ে নেই
চাঁদকে ঘিরে এই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রও সক্রিয়। তারা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, চলতি দশকের শেষের দিকে চাঁদে একটি পারমাণবিক শক্তির উৎস স্থাপন করা হবে। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি গড়তে হলে শক্তির নির্ভরযোগ্য উৎস অপরিহার্য। এই প্রতিযোগিতায় চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াইও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
চাঁদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সম্পদ
চাঁদ শুধু গবেষণার জায়গা নয়, সম্ভাব্য সম্পদের ভাণ্ডার হিসেবেও দেখা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সেখানে হিলিয়াম তিন নামের একটি বিরল উপাদান রয়েছে, যা ভবিষ্যতের জ্বালানি হতে পারে। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত নানা মূল্যবান ধাতুর উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। এসব কারণেই চাঁদ নিয়ে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
নিয়মকানুন আর ভবিষ্যৎ ভাবনা
আন্তর্জাতিক আইনে মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহারে নির্দিষ্ট শর্ত মেনে চললে বাধা নেই। তাই রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো দেশগুলো চাঁদে শক্তির উৎস বসানোর পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বছরগুলোতে চাঁদ ঘিরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং কৌশলগত প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















