চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় একের পর এক হিন্দু পরিবারের বসতঘরে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এলাকায় চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে কার্যকর তথ্য দিলে আর্থিক পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ, যদিও পুরস্কারের পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়নি।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সুলতানপুর এলাকায় একটি হিন্দু পরিবারের বসতঘরে পরিকল্পিতভাবে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে তথ্যদাতাদের জন্য আর্থিক পুরস্কার ঘোষণার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে পুরস্কারের নির্দিষ্ট অঙ্ক তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়নি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা
বুধবার ২৪ ডিসেম্বর রাউজান উপজেলার সুলতানপুর পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক আহসান হাবীব পলাশ। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, যারা এই ঘটনায় জড়িতদের ধরিয়ে দিতে কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দেবেন, তাদের আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করা হবে।
কীভাবে ঘটেছে অগ্নিসংযোগ
এর আগে মঙ্গলবার ভোরে রাউজান পৌরসভার সুলতানপুর পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে কাতারপ্রবাসী সুখ শীলের বসতঘরে বাইরে থেকে দরজা আটকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় ঘরে ছিলেন সুখ শীলের বোন ও বোন জামাই অনিল শীল। সৌভাগ্যক্রমে তারা প্রাণে বেঁচে গেলেও ঘরের ভেতরের আসবাবপত্র, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ বহু জিনিসপত্র পুড়ে যায়।
ক্ষয়ক্ষতি ও আলামত উদ্ধার
পুলিশের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় আট থেকে দশ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে হাতে লেখা কিছু ব্যানার ও কাগজ জব্দ করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের নাম এবং মোবাইল নম্বর লেখা ছিল। বুধবার রাতে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস
পুলিশ কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
একই কায়দায় আগের ঘটনাগুলো
এই ঘটনার কয়েক দিন আগেও রাউজানে একই কৌশলে একাধিক হিন্দু পরিবারের বসতঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। গত শনিবার ভোর রাতে রাউজান পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের ঢেউয়াপাড়া এলাকায় বিমল তালুকদার ও রুবেল দাশের বাড়িতে বাইরে থেকে দরজা আটকে আগুন ধরানো হয়। আগুনের তীব্রতা টের পেয়ে বাসিন্দারা বের হতে চাইলে দরজা বাইরে থেকে বাঁধা থাকার বিষয়টি বুঝতে পারেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব ঘটনায় ঘরের দরজা কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা হয় এবং উঠানে কেরোসিনমাখা কাপড় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এর আগেও শুক্রবার ভোর রাতে রাউজানের কেউটিয়া সাত নম্বর ওয়ার্ডে সাধন বড়ুয়ার এবং নয় নম্বর ওয়ার্ডে সোনা পাল ও কামিনী মোহন পালের বসতঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকেও কেরোসিনমিশ্রিত কাপড় এবং রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের নাম ও মোবাইল নম্বর লেখা কাগজ উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্ত জোরদার
পুলিশ জানিয়েছে, ধারাবাহিক এসব ঘটনার পেছনে কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে তদন্ত জোরদার করা হয়েছে এবং দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
#রাউজান #অগ্নিসংযোগ #হিন্দুপরিবার #সংখ্যালঘু_নিরাপত্তা #চট্টগ্রাম #পুলিশ_তদন্ত #আইনশৃঙ্খলা #বাংলাদেশ_সংবাদ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















