ভারতের দ্রুত বাড়তে থাকা স্থূলতা চিকিৎসার বাজারে আধিপত্য ধরে রাখতে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে দুই বৈশ্বিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের লিলি, অন্যদিকে ডেনমার্কের নোভো নরডিস্ক। দাম কমানো, দ্রুত বাজার সম্প্রসারণ, চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার এবং স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি—সব দিক থেকেই চলছে প্রতিযোগিতা। সামনে জেনেরিক ওষুধের প্রবেশ এই লড়াইকে আরও তীব্র করে তুলছে
ভারতের বাজার কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দুই বছরের মধ্যেই ভারতের স্থূলতা চিকিৎসার বাজারের আকার এক বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশাল এই দেশে দুই হাজার পঞ্চাশ সালের মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল জনগোষ্ঠী গড়ে উঠবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ রোগী নিজ খরচে ওষুধ কিনলেও আগ্রহ দ্রুত বাড়ছে, যা বাজারকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে
লিলির এগিয়ে থাকা ও নোভোর মূল্যকৌশল
ভারতে তুলনামূলক আগে বাজারে আসার সুবিধা পেয়েছে লিলির ওষুধ। তাদের ইনজেকশন দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এবং অল্প সময়েই বিক্রি দ্বিগুণ হয়। বিপরীতে নোভো নরডিস্ক শুরুতে উচ্চমূল্যের কারণে চাপে পড়ে এবং পরে দাম কমিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে। নোভোর ব্যবস্থাপনা বলছে, সহজলভ্যতা বাড়াতে মূল্যছাঁটাই জরুরি ছিল
জেনেরিক আসার আশঙ্কা ও পেটেন্টের হিসাব
আগামী বছরে নোভোর মূল উপাদানের পেটেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তখন দেশীয় বহু ওষুধ প্রস্তুতকারক কমদামে বিকল্প পণ্য আনতে পারে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এসব জেনেরিক ওষুধ বর্তমান দামের তুলনায় প্রায় ষাট শতাংশ সস্তা হতে পারে। এতে বিশেষ করে দামের ওপর নির্ভরশীল বাজারে নোভোর চাপ বাড়বে। তবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তারা পেটেন্ট নয়, গুণমান ও আস্থার ওপর জোর দেবে
শহর ছাড়িয়ে ছোট শহরে বিস্তার
এই প্রতিযোগিতা এখন শুধু বড় শহরকেন্দ্রিক নয়। মধ্যবিত্ত পরিবার, অফিসকর্মী, নারীদের একটি বড় অংশ এবং ছোট শহরের মানুষও স্থূলতা চিকিৎসায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই চাহিদা ধরতে লিলি ও নোভো উভয়ই স্থানীয় ওষুধ কোম্পানি ও হাসপাতাল গোষ্ঠীর সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচারণার মাধ্যমে স্থূলতাকে একটি রোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে
বাজারের ভবিষ্যৎ কোন দিকে
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগাম বাজার দখলের সুবিধা লিলিকে কিছুটা এগিয়ে রাখলেও মূল্যসংবেদনশীল ভারতের বাজারে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে হলে দুই প্রতিষ্ঠানকেই কৌশল বদলাতে হবে। জেনেরিক প্রবেশ, দাম কমানোর চাপ এবং সচেতনতার বিস্তার—সব মিলিয়ে ভারতের স্থূলতা চিকিৎসার বাজার সামনে আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















