তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত তৃতীয় দফা সীমান্ত সন্ত্রাসবিরোধী আলোচনা ভেঙ্গে গেছে। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, আলোচনা এখন “শেষ পর্যায়ে” পৌঁছেছে, যদিও অস্ত্রবিরতি এখনও কার্যকর রয়েছে। তিনি সতর্ক করেছেন, আফগান পক্ষ থেকে লঙ্ঘন ঘটলে পাকিস্তান “উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া” জানাবে।
মূল পয়েন্টসমূহ
- পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমানাপারি সন্ত্রাসবিরোধী আলোচনা অচলাবস্থায় পড়েছে, যা এখন “অনির্দিষ্ট পর্যায়ে” রয়েছে।
- অস্ত্রবিরতি কার্যত বলবৎ থাকলেও আফগান পক্ষ থেকে কোনও লঙ্ঘন হলে পাকিস্তান কড়া প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
- আলোচনায় উভয়পক্ষের মধ্যে বড় ধরণের মতপার্থক্য থাকায় কোনও চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। আফগান প্রতিনিধি দল লিখিত চুক্তিতে রাজি হয়নি, তারা কেবল মৌখিক সম্মতিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
আলোচনার অবস্থা ও ব্যর্থতা
তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় শুরু হওয়া এই আলোচনা সিরিজের তৃতীয় ধাপ ছিল ইস্তানবুলে, যা দুই দিনব্যাপী চলে।
খাজা আসিফ জানিয়েছেন, আফগান দল অপ্রস্তুত অবস্থায় অংশ নেয় এবং লিখিত চুক্তিতে সম্মতি দিতে অনিচ্ছুক ছিল।
নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, “ইস্তানবুল আলোচনায় গলদ খেয়ে গেছে” — উভয়পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস ও প্রস্তুতির ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

পাকিস্তানের মূল দাবি ও হুঁশিয়ারি
- পাকিস্তানের প্রধান দাবি ছিল, আফগান ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানের ওপর সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ করতে হবে।
- আসিফ বলেন, যদি আফগান পক্ষ “অগ্রহণযোগ্য দাবি” তোলে, তবে তা তাদের ব্যর্থতার প্রতিফলন।
- বর্তমানে অস্ত্রবিরতি বলবৎ থাকলেও পাকিস্তান স্পষ্ট করেছে — লঙ্ঘন ঘটলে তারা “উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া” দেবে।
আলোচনা ও মধ্যস্থতার ভূমিকা
- পাকিস্তান প্রতিনিধিদলে ছিলেন আইএসআই পরিচালক জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিক এবং সেনাবাহিনী, গভর্নমেন্ট ও পররাষ্ট্র কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
- আফগান তালিবান প্রতিনিধিদলে ছিলেন আব্দুল হক ওয়াসেক (জিআইডি প্রধান), সুহেল শাহীণ, আনাস হক্কানী ও ডেপুটি ইন্টেরিয়র মন্ত্রী রেহমতুল্লাহ নাজিব।
- তুরস্ক ও কাতার মধ্যস্থতার মাধ্যমে আলোচনায় যুক্ত ছিল এবং পূর্ববর্তী ধাপগুলোতে যাচাই-পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার প্রণয়ন নিয়ে কাজ করেছিল।
সীমান্ত সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
- অক্টোবরের শুরুতে পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্ত এলাকায় ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়, যেখানে দুই পক্ষের সৈনিক ও সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারান।
- সেই ঘটনার পর দোহায় একটি অস্থায়ী অস্ত্রবিরতির চুক্তি হয়, যেখানে বলা হয় আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং যাচাইকরণের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করা হবে।
- তবে ইস্তানবুলে নতুন দফা আলোচনায়ও বড় মতপার্থক্যগুলো সমাধান হয়নি। পাকিস্তানের দাবি, আফগান ভূখণ্ড থেকে সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ হওয়া জরুরি; অপরদিকে আফগান পক্ষ দাবি করছে তাদের প্রস্তাব যুক্তিসঙ্গত হলেও পাকিস্তানের শর্তাবলি “অবাস্তব ও আগ্রাসী”।

আছে কি এবার কোনও পথ সামনে?
আলোচনার এই ধাপ কার্যত স্থবির হয়ে গেছে। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী উভয়েই জানিয়েছেন, পুরো প্রক্রিয়া এখনো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি — মধ্যস্থতাকারীরা আলোচনার পুনরায় সূচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, আলোচনায় বড় পরিবর্তন না এলে পাকিস্তান তার নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব ধরনের বিকল্প ব্যবহার করবে বলেও সতর্ক করেছে।
পাকিস্তান–আফগানিস্তান আলোচনার বর্তমান অবস্থা জটিল ও অনিশ্চিত। অস্ত্রবিরতি বলবৎ থাকলেও পারস্পরিক আস্থা কমে গেছে, এবং দুই পক্ষের মধ্যে গভীর ফাঁক তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের মতে, লিখিত ও কার্যকর চুক্তি ছাড়া সীমান্তে স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়। অন্যদিকে আফগান পক্ষ দাবি করছে, তাদের প্রস্তাব যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। ফলে আলোচনাটি আপাতত “অনির্দিষ্ট পর্যায়ে” স্থগিত — অপেক্ষা, কখন এবং কীভাবে তা নতুনভাবে শুরু হবে।
#Pakistan #Afghanistan #Ceasefire #IstanbulTalks #Diplomacy #SarakKhonReport
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















