০২:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
২০২৫ সালের ১০০ প্রভাবশালী জলবায়ু-অভিযান নেতা: বিশ্বের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে ব্যবসার নতুন অঙ্গীকার আনিসিমোভার দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন: রিবাকিনা সেমিফাইনালে জায়গা পেলেন বেসামরিক যুদ্ধে ভেটেরানদের জন্য বিক্রিত শিল্পের উত্থান ইউপিএস ফ্লাইট ২৯৭৬ দুর্ঘটনা: তদন্ত ও উদ্ধার কার্যক্রম মেক্সিকো: রাষ্ট্রপতি শেইনবাউমের প্রতি শারীরিক নির্যাতন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে লুলার ‘সত্যের COP’ প্রতিশ্রুতি: জাতিসংঘের প্রতিবেদন থেকে উদ্বেগ সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিপদে — কংগ্রেসের রাজস্ব ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের দাবি জোরালো ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বড় অগ্রগতি: পোকরোভস্ক দখলের দ্বারপ্রান্তে কুইন্স: প্রবাসী নারীদের জীবনের টানাপোড়েন ও আত্মসংগ্রামের নাটক মার্কিন ধনী বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন দিগন্ত: ব্যক্তিগত শেয়ার ব্যবসায় প্রবেশ করল চার্লস শোয়াব

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে: ঝুঁকিপূর্ণ ২৫ এলাকা চিহ্নিত

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে নগরবাসী এখন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৭৬২ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ২৫টি এলাকা এখন ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি অতিঝুঁকিপূর্ণ।


মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, উদ্বেগে নগরবাসী

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে দুর্বলতার কারণে নগরবাসীকে ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মুখে পড়তে হচ্ছে। যদিও মশাবাহিত আরেক রোগ চিকুনগুনিয়া কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৭ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৭৬২ জন এবং চিকুনগুনিয়ায় ৩,৬৭২ জন। চিকুনগুনিয়ায় কেউ মারা না গেলেও ডেঙ্গুতে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে শিশু ৩ জন, পুরুষ ১১ জন এবং নারী ৬ জন।


২৫টি এলাকা ‘হটস্পট’, ৫টি অতিঝুঁকিপূর্ণ

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের ২৫টি এলাকা ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে পাঁচটি এলাকা—বন্দর, কোতোয়ালি, কেপিজেড, হালিশহর এবং সদরঘাট—অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

প্রায় ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী এসব এলাকার বাসিন্দা, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক অঞ্চল।

চিহ্নিত এলাকা:
বন্দর, কোতোয়ালি, কেপিজেড, হালিশহর, সদরঘাট, বাকলিয়া, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, খুলশী, পাঁচলাইশ, আকবরশাহ, চকবাজার, চান্দগাঁও, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, পাথরঘাটা, লালখানবাজার, আন্দরকিল্লা, কাট্টলী, দেওয়ানহাট, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, চন্দনপুরা ও মহাম্মদনগর।


📄 সিভিল সার্জনের চিঠি ও সতর্কবার্তা

জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। সেখানে মশা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে—

  • নিয়মিতভাবে মশার ওষুধ ছিটানো,
  • পানি ও ময়লা জমে থাকা রোধ করা,
  • পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাড়ানো জরুরি।

তবে অভিযোগ উঠেছে, সিটি করপোরেশন কেবল লোক দেখানো কার্যক্রম চালাচ্ছে, যার ফলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ছে।


📊 সংক্রমণের পরিসংখ্যান

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী—

ডেঙ্গু আক্রান্ত: ৩,৭৬২ জন

  • শিশু: ৬৬৮ জন
  • পুরুষ: ১,৯৭০ জন
  • নারী: ১,১২৪ জন
  • নগর এলাকায়: ২,০২২ জন
  • উপজেলা এলাকায়: ১,৭৪০ জন

চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত: ৩,৬৭২ জন

  • শিশু: ২৭০ জন
  • পুরুষ: ১,৯৩৭ জন
  • নারী: ১,৪৬৫ জন


সিভিল সার্জনের সতর্কবার্তা

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,

“বছরের এই সময়েও ডেঙ্গুর বিস্তার অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে। চিকুনগুনিয়া কিছুটা কমলেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। সিটি করপোরেশনকে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”


নগরবাসীর ক্ষোভ

সঙ্গীত আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আনাস উদ্দিন সোয়াত বলেন,

“এলাকায় মশার উপদ্রব ভয়াবহ, কিন্তু সিটি করপোরেশনের স্প্রে টিমকে দেখা যায় না। সন্ধ্যা নামলেই মশা বেড়ে যায়, অথচ করপোরেশনের লোকজনের কোনো উদ্যোগ নেই।”


 সিটি করপোরেশনের দাবি

অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহী বলেন,

“সারা বছরই স্প্রে ও ফগিং কার্যক্রম চলে। যেখানে ডেঙ্গু রোগী বেশি, সেখানে বিশেষ ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ২১০ জন কর্মী ৪১টি ওয়ার্ডে কাজ করছেন। এছাড়া ৭২ জনের ছয়টি বিশেষ টিম আক্রান্ত এলাকায় ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।”


চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য প্রশাসন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মশা নিধন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি—এই তিনটি পদক্ষেপই এখন সবচেয়ে জরুরি।


#চট্টগ্রাম_ডেঙ্গু #স্বাস্থ্যসংকট #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

২০২৫ সালের ১০০ প্রভাবশালী জলবায়ু-অভিযান নেতা: বিশ্বের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে ব্যবসার নতুন অঙ্গীকার

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে: ঝুঁকিপূর্ণ ২৫ এলাকা চিহ্নিত

১১:৪৩:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে নগরবাসী এখন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৭৬২ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ২৫টি এলাকা এখন ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি অতিঝুঁকিপূর্ণ।


মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, উদ্বেগে নগরবাসী

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে দুর্বলতার কারণে নগরবাসীকে ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মুখে পড়তে হচ্ছে। যদিও মশাবাহিত আরেক রোগ চিকুনগুনিয়া কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৭ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৭৬২ জন এবং চিকুনগুনিয়ায় ৩,৬৭২ জন। চিকুনগুনিয়ায় কেউ মারা না গেলেও ডেঙ্গুতে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে শিশু ৩ জন, পুরুষ ১১ জন এবং নারী ৬ জন।


২৫টি এলাকা ‘হটস্পট’, ৫টি অতিঝুঁকিপূর্ণ

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের ২৫টি এলাকা ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে পাঁচটি এলাকা—বন্দর, কোতোয়ালি, কেপিজেড, হালিশহর এবং সদরঘাট—অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

প্রায় ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী এসব এলাকার বাসিন্দা, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক অঞ্চল।

চিহ্নিত এলাকা:
বন্দর, কোতোয়ালি, কেপিজেড, হালিশহর, সদরঘাট, বাকলিয়া, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, খুলশী, পাঁচলাইশ, আকবরশাহ, চকবাজার, চান্দগাঁও, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, পাথরঘাটা, লালখানবাজার, আন্দরকিল্লা, কাট্টলী, দেওয়ানহাট, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, চন্দনপুরা ও মহাম্মদনগর।


📄 সিভিল সার্জনের চিঠি ও সতর্কবার্তা

জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। সেখানে মশা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে—

  • নিয়মিতভাবে মশার ওষুধ ছিটানো,
  • পানি ও ময়লা জমে থাকা রোধ করা,
  • পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাড়ানো জরুরি।

তবে অভিযোগ উঠেছে, সিটি করপোরেশন কেবল লোক দেখানো কার্যক্রম চালাচ্ছে, যার ফলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ছে।


📊 সংক্রমণের পরিসংখ্যান

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী—

ডেঙ্গু আক্রান্ত: ৩,৭৬২ জন

  • শিশু: ৬৬৮ জন
  • পুরুষ: ১,৯৭০ জন
  • নারী: ১,১২৪ জন
  • নগর এলাকায়: ২,০২২ জন
  • উপজেলা এলাকায়: ১,৭৪০ জন

চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত: ৩,৬৭২ জন

  • শিশু: ২৭০ জন
  • পুরুষ: ১,৯৩৭ জন
  • নারী: ১,৪৬৫ জন


সিভিল সার্জনের সতর্কবার্তা

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,

“বছরের এই সময়েও ডেঙ্গুর বিস্তার অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে। চিকুনগুনিয়া কিছুটা কমলেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। সিটি করপোরেশনকে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”


নগরবাসীর ক্ষোভ

সঙ্গীত আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আনাস উদ্দিন সোয়াত বলেন,

“এলাকায় মশার উপদ্রব ভয়াবহ, কিন্তু সিটি করপোরেশনের স্প্রে টিমকে দেখা যায় না। সন্ধ্যা নামলেই মশা বেড়ে যায়, অথচ করপোরেশনের লোকজনের কোনো উদ্যোগ নেই।”


 সিটি করপোরেশনের দাবি

অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহী বলেন,

“সারা বছরই স্প্রে ও ফগিং কার্যক্রম চলে। যেখানে ডেঙ্গু রোগী বেশি, সেখানে বিশেষ ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ২১০ জন কর্মী ৪১টি ওয়ার্ডে কাজ করছেন। এছাড়া ৭২ জনের ছয়টি বিশেষ টিম আক্রান্ত এলাকায় ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।”


চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য প্রশাসন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মশা নিধন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি—এই তিনটি পদক্ষেপই এখন সবচেয়ে জরুরি।


#চট্টগ্রাম_ডেঙ্গু #স্বাস্থ্যসংকট #সারাক্ষণ_রিপোর্ট