০২:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
২০২৫ সালের ১০০ প্রভাবশালী জলবায়ু-অভিযান নেতা: বিশ্বের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে ব্যবসার নতুন অঙ্গীকার আনিসিমোভার দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন: রিবাকিনা সেমিফাইনালে জায়গা পেলেন বেসামরিক যুদ্ধে ভেটেরানদের জন্য বিক্রিত শিল্পের উত্থান ইউপিএস ফ্লাইট ২৯৭৬ দুর্ঘটনা: তদন্ত ও উদ্ধার কার্যক্রম মেক্সিকো: রাষ্ট্রপতি শেইনবাউমের প্রতি শারীরিক নির্যাতন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে লুলার ‘সত্যের COP’ প্রতিশ্রুতি: জাতিসংঘের প্রতিবেদন থেকে উদ্বেগ সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিপদে — কংগ্রেসের রাজস্ব ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের দাবি জোরালো ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বড় অগ্রগতি: পোকরোভস্ক দখলের দ্বারপ্রান্তে কুইন্স: প্রবাসী নারীদের জীবনের টানাপোড়েন ও আত্মসংগ্রামের নাটক মার্কিন ধনী বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন দিগন্ত: ব্যক্তিগত শেয়ার ব্যবসায় প্রবেশ করল চার্লস শোয়াব

বিপর্যস্ত ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ কে দেখবে?

নজিরবিহীন সংকটে ব্যাংক বিনিয়োগকারীরা

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন এক সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। আর্থিকভাবে দুর্বল পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্তে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইঙ্গিত—ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দিতে চাইলে সরকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা বিবেচনা করতে পারে।


গভর্নরের ঘোষণা: শেয়ার এখন ‘শূন্যমূল্যের’

৫ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের নিট সম্পদমূল্য এখন ঋণাত্মক। ১০ টাকার মুখমূল্যের বিপরীতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। ফলে এসব ব্যাংকের শেয়ারের আর কোনো আর্থিক মূল্য নেই—স্পনসর বা সাধারণ বিনিয়োগকারী কেউই ক্ষতিপূরণ পাবেন না।

এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে কার্যত কিছুই থাকছে না। অনেকে অভিযোগ করছেন—বাংলাদেশ ব্যাংকের নীরবতার সুযোগে লুটেরা গোষ্ঠী এসব ব্যাংক থেকে টাকা লোপাট করেছে, আর এখন তার বোঝা চাপানো হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের গলায়।

গভর্নর আরও জানান, ব্যাংকগুলোকে ইতোমধ্যে অকার্যকর ঘোষণা দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুই লাখ টাকার কম আমানতকারীরা দ্রুত অর্থ ফেরত পাবেন বলেও আশ্বাস দেন তিনি।


বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: প্রতিবাদ ও ঘেরাও কর্মসূচি

গভর্নরের ঘোষণার পরদিনই ঢাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন। ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মার্জারের সিদ্ধান্তে তাদের জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, “মার্জারের সার্কুলার জারির পর থেকেই আমরা তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। অদক্ষ গভর্নর আমাদের কথা শোনেননি। এখন লাখো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পথে বসেছেন।”


পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণে শেয়ারহোল্ডারদের শূন্য প্রাপ্তি

এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী এবং ইউনিয়ন ব্যাংক—এই পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীরা কোনো আর্থিক প্রাপ্তি পাবেন না বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আমানতকারীদের সুরক্ষা অবশ্যই জরুরি, তবে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করলে পুঁজিবাজারে বড় আস্থার সংকট তৈরি হবে।

বিআইবিএম-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “একীভূত করার আগে শেয়ারহোল্ডারদের অবস্থান বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। এখন বলা হচ্ছে তারা কিছুই পাবেন না—এটা অযৌক্তিক।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আল-আমিন বলেন, “ব্যাংকগুলোর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ঋণাত্মক হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কিছুই পাবেন না। তবে যারা সম্পদ লোপাট করেছে, তাদের সম্পদ জব্দ করা গেলে কিছুটা ন্যায়বিচার সম্ভব।”


বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা: ক্ষতিপূরণের আইনি সুযোগ সীমিত

৬ নভেম্বর রাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’-এর আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের ওপর লোকসান আরোপের ক্ষমতা রাখে। তবে যদি লিকুইডেশনের পথ নেওয়া হতো, তাহলে শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি কিছুটা কম হতে পারত।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বর্তমানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তাৎক্ষণিক সুরক্ষার সুযোগ নেই, তবে সরকার চাইলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।”


বিএসইসি’র ক্ষোভ: অন্ধকারে রাখা হয়েছে

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জানিয়েছে, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় তাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে। মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, “আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় চিঠি দিয়েছিলাম। আশা করি তালিকাচ্যুতির আগে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।”

সূত্র জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে বিএসইসি পাঁচটি প্রস্তাবনা পাঠালেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা উপেক্ষা করেছে।


নতুন ব্যাংক কাঠামো ও ক্ষতির পরিমাণ

‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন ব্যাংকটি ৩৫ হাজার কোটি টাকার অনুমিত মূলধনে যাত্রা শুরু করবে। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার এবং বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে আমানতকারীদের।

কিন্তু শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতির চিত্র ভয়াবহ:

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: সাধারণ বিনিয়োগকারী ৬৫%
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: সাধারণ ৩২%, প্রাতিষ্ঠানিক ৫৩%, উদ্যোক্তা ১৫%
  • ইউনিয়ন ব্যাংক: উদ্যোক্তা ৫৪%, সাধারণ ৩২%
  • এক্সিম ব্যাংক: সাধারণ ৩৯%, উদ্যোক্তা ৩২%
  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: সাধারণ ১৯%, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি ৬৯%

অর্থাৎ, ক্ষতির মূল বোঝা পড়ছে সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ওপর।


আস্থা পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ব্যাংকগুলোর শেয়ারকে ‘জিরো ভ্যালু’ ঘোষণা করা হলো। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত রক্ষায় তৎপর থাকলেও বিনিয়োগকারীরা হারাচ্ছেন তাদের জীবনের সঞ্চয়।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের যে ক্ষীণ সম্ভাবনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেখেছে, সেটিই এখন তাদের একমাত্র আশার আলো।

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—এই আশ্বাস বাস্তবে রূপ নেবে তো?

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা না হলে, দেশের পুঁজিবাজারে আস্থা পুনর্গঠন আরও কঠিন হয়ে পড়বে—এতে কোনো সন্দেহ নেই।


#বিনিয়োগকারীসংকট #বাংলাদেশব্যাংক #শরিয়াহব্যাংকএকীভূতকরণ #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

২০২৫ সালের ১০০ প্রভাবশালী জলবায়ু-অভিযান নেতা: বিশ্বের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে ব্যবসার নতুন অঙ্গীকার

বিপর্যস্ত ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ কে দেখবে?

১২:০০:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

নজিরবিহীন সংকটে ব্যাংক বিনিয়োগকারীরা

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন এক সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। আর্থিকভাবে দুর্বল পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্তে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইঙ্গিত—ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দিতে চাইলে সরকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা বিবেচনা করতে পারে।


গভর্নরের ঘোষণা: শেয়ার এখন ‘শূন্যমূল্যের’

৫ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের নিট সম্পদমূল্য এখন ঋণাত্মক। ১০ টাকার মুখমূল্যের বিপরীতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। ফলে এসব ব্যাংকের শেয়ারের আর কোনো আর্থিক মূল্য নেই—স্পনসর বা সাধারণ বিনিয়োগকারী কেউই ক্ষতিপূরণ পাবেন না।

এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে কার্যত কিছুই থাকছে না। অনেকে অভিযোগ করছেন—বাংলাদেশ ব্যাংকের নীরবতার সুযোগে লুটেরা গোষ্ঠী এসব ব্যাংক থেকে টাকা লোপাট করেছে, আর এখন তার বোঝা চাপানো হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের গলায়।

গভর্নর আরও জানান, ব্যাংকগুলোকে ইতোমধ্যে অকার্যকর ঘোষণা দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুই লাখ টাকার কম আমানতকারীরা দ্রুত অর্থ ফেরত পাবেন বলেও আশ্বাস দেন তিনি।


বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: প্রতিবাদ ও ঘেরাও কর্মসূচি

গভর্নরের ঘোষণার পরদিনই ঢাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন। ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মার্জারের সিদ্ধান্তে তাদের জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, “মার্জারের সার্কুলার জারির পর থেকেই আমরা তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। অদক্ষ গভর্নর আমাদের কথা শোনেননি। এখন লাখো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পথে বসেছেন।”


পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণে শেয়ারহোল্ডারদের শূন্য প্রাপ্তি

এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী এবং ইউনিয়ন ব্যাংক—এই পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীরা কোনো আর্থিক প্রাপ্তি পাবেন না বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আমানতকারীদের সুরক্ষা অবশ্যই জরুরি, তবে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করলে পুঁজিবাজারে বড় আস্থার সংকট তৈরি হবে।

বিআইবিএম-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “একীভূত করার আগে শেয়ারহোল্ডারদের অবস্থান বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। এখন বলা হচ্ছে তারা কিছুই পাবেন না—এটা অযৌক্তিক।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আল-আমিন বলেন, “ব্যাংকগুলোর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ঋণাত্মক হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কিছুই পাবেন না। তবে যারা সম্পদ লোপাট করেছে, তাদের সম্পদ জব্দ করা গেলে কিছুটা ন্যায়বিচার সম্ভব।”


বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা: ক্ষতিপূরণের আইনি সুযোগ সীমিত

৬ নভেম্বর রাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’-এর আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের ওপর লোকসান আরোপের ক্ষমতা রাখে। তবে যদি লিকুইডেশনের পথ নেওয়া হতো, তাহলে শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি কিছুটা কম হতে পারত।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বর্তমানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তাৎক্ষণিক সুরক্ষার সুযোগ নেই, তবে সরকার চাইলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।”


বিএসইসি’র ক্ষোভ: অন্ধকারে রাখা হয়েছে

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জানিয়েছে, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় তাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে। মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, “আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় চিঠি দিয়েছিলাম। আশা করি তালিকাচ্যুতির আগে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।”

সূত্র জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে বিএসইসি পাঁচটি প্রস্তাবনা পাঠালেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা উপেক্ষা করেছে।


নতুন ব্যাংক কাঠামো ও ক্ষতির পরিমাণ

‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন ব্যাংকটি ৩৫ হাজার কোটি টাকার অনুমিত মূলধনে যাত্রা শুরু করবে। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার এবং বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে আমানতকারীদের।

কিন্তু শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতির চিত্র ভয়াবহ:

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: সাধারণ বিনিয়োগকারী ৬৫%
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: সাধারণ ৩২%, প্রাতিষ্ঠানিক ৫৩%, উদ্যোক্তা ১৫%
  • ইউনিয়ন ব্যাংক: উদ্যোক্তা ৫৪%, সাধারণ ৩২%
  • এক্সিম ব্যাংক: সাধারণ ৩৯%, উদ্যোক্তা ৩২%
  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: সাধারণ ১৯%, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি ৬৯%

অর্থাৎ, ক্ষতির মূল বোঝা পড়ছে সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ওপর।


আস্থা পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ব্যাংকগুলোর শেয়ারকে ‘জিরো ভ্যালু’ ঘোষণা করা হলো। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত রক্ষায় তৎপর থাকলেও বিনিয়োগকারীরা হারাচ্ছেন তাদের জীবনের সঞ্চয়।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের যে ক্ষীণ সম্ভাবনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেখেছে, সেটিই এখন তাদের একমাত্র আশার আলো।

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—এই আশ্বাস বাস্তবে রূপ নেবে তো?

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা না হলে, দেশের পুঁজিবাজারে আস্থা পুনর্গঠন আরও কঠিন হয়ে পড়বে—এতে কোনো সন্দেহ নেই।


#বিনিয়োগকারীসংকট #বাংলাদেশব্যাংক #শরিয়াহব্যাংকএকীভূতকরণ #সারাক্ষণরিপোর্ট