জাপানে সাম্প্রতিক সময়ে ভাল্লুকের হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশগত পরিবর্তন, জনসংখ্যা হ্রাস এবং শিকারির অভাব—এই তিনটি কারণেই পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। কিছু ক্ষেত্রে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ‘সেলফ-ডিফেন্স ফোর্সেস’-এর হস্তক্ষেপ পর্যন্ত করতে হয়েছে, কারণ শহরাঞ্চলেও এখন বন্যপ্রাণীর আক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
অস্বাভাবিক পরিস্থিতি
অদ্ভুতভাবে, এসব হামলার বেশিরভাগই পাহাড়ি এলাকায় নয়; বরং শহরের বাসাবাড়িতেই ঘটছে। এই বছর অন্তত ১২ জন মারা গেছেন—যা ২০২৩ সালের ছয়জনের রেকর্ডের দ্বিগুণ। প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছেন। এভাবে শহুরে জীবনে ভাল্লুকের হানা জাপানের জন্য এক নতুন আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে।
বন্যপ্রাণীর শহরে উপস্থিতি
ভাল্লুকদের দেখা মিলছে সুপারমার্কেট, হট স্প্রিং রিসর্ট এবং স্কুলের মাঠ পর্যন্ত। গত সপ্তাহে মোরিওকা শহরে একাধিক ভাল্লুকের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আতঙ্ক। এখন ভাল্লুক দেখা বা শিকার করার ঘটনার খবরের জন্য বিশেষ ব্রেকিং নিউজ এলার্ট পাঠানো হচ্ছে।
শহরের ভাল্লুকের জন্য প্রস্তুতি
নাগরিকরা আত্মরক্ষার জন্য ভাল্লুক স্প্রে কিনছেন, ব্যাগে ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখছেন—যা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাল্লুক দূরে রাখার কার্যকর উপায়। আকিতা প্রিফেকচারের মতো এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সাধারণত এ বাহিনী দুর্যোগ ত্রাণে অংশ নেয়, কিন্তু এবার তাদের কাজ বন্যপ্রাণী নিয়ন্ত্রণে—যা একেবারেই নতুন বাস্তবতা।
জাপানের ইতিহাসে ভাল্লুকের সহাবস্থান
ভাল্লুকের সঙ্গে সহাবস্থানের ইতিহাস জাপানে নতুন নয়। ১৯১৫ সালে হোক্কাইডোর একটি কুখ্যাত ঘটনায় এক বুদ্ধিমান ভাল্লুক সাতজনকে হত্যা করেছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক জটিল, কারণ এখন বন্যপ্রাণী মানুষের জীবনের কাছাকাছি চলে এসেছে।

বিগত বছরের পরিবর্তন এবং পরিবেশ
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যসংকটই ভাল্লুকদের মানুষের বসতিতে টেনে আনছে। বিশেষ করে শীতকালীন হাইবারনেশনের জন্য প্রয়োজনীয় আকর্ণের অভাব এবং অতিরিক্ত গরম গ্রীষ্ম এদের খাদ্যসংকট আরও বাড়িয়েছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, মানুষের অতিরিক্ত কর্মকাণ্ড প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে—এটাই এর মূল কারণ।
জনসংখ্যা এবং শিকারির অভাব
জাপানের জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে। ফলে ভাল্লুকরা আরও সাহসী হয়ে উঠছে, কারণ মানববসতি কমে যাওয়ায় শিকারির সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। ১৯৭৫ সালে যেখানে পাঁচ লাখ শিকারি ছিল, এখন সংখ্যা কমে ২.৫ লাখেরও নিচে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ শিকারির বয়স ৬০ বছরের বেশি—যা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক।
অর্থনৈতিক বাস্তবতা
অবশিষ্ট শিকারিরা অভিযোগ করেছেন, তারা পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। ফলে ভাল্লুক শিকারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা তাদের জন্য ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।
পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ ও সমাধান
যদিও শীতকালে ভাল্লুকরা পাহাড়ে ফিরে যেতে পারে, তবে সমস্যার মূল কারণ এখনো বিদ্যমান। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানব ও বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
#জাপান #বন্যপ্রাণী #ভাল্লুক
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















