একটি নতুন গবেষণায় প্রথমবারের মতো প্রমাণ মিলেছে যে ভোমরা (bumblebee) সময়ের স্থায়িত্ব বা সময়ের দৈর্ঘ্য বুঝতে পারে। আলো ঝলকানোর সময়কাল পরিমাপ করে তারা নির্ধারণ করে কোনদিকে গেলে খাবার পাওয়া যাবে। প্রাণীজগতে এটি বিরল ক্ষমতা, আর কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে তো একেবারেই নতুন।
গবেষণা কারা করলেন
লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির গবেষক অ্যালেক্স ডেভিডসন ও তার তত্ত্বাবধায়ক এলিসাবেত্তা ভারসাচে এই আবিষ্কার করেন। তারা বলছেন, এটি প্রমাণ করে যে মৌমাছি কেবল প্রতিক্রিয়া-নির্ভর যন্ত্র নয়; বরং তাদের শেখার ক্ষমতা ও নমনীয় আচরণ রয়েছে।
মৌমাছির জন্য বিশেষ গোলকধাঁধা
গবেষক দলটি একটি গোলকধাঁধা তৈরি করে, যার মধ্য দিয়ে মৌমাছিরা খাদ্য খুঁজতে বের হতো। সেখানে দুই ধরনের আলো-সংকেত দেখানো হতো—
- একটি বৃত্ত থেকে স্বল্প সময়ের আলো ঝলকানি
- আরেকটি বৃত্ত থেকে দীর্ঘ সময়ের আলো ঝলকানি
স্বল্প সময়ের আলোতে ছিল মিষ্টি খাবার, আর দীর্ঘ আলোতে ছিল তেতো খাবার। প্রতিটি কক্ষে বৃত্তের অবস্থান বদলানো হলেও মৌমাছিরা ধীরে ধীরে শিখে নেয় কোন আলো-সংকেত মিষ্টি খাবারের সঙ্গে যুক্ত।
নতুন পরীক্ষায় প্রমাণ
খাবার সরিয়ে নেওয়ার পরও মৌমাছিরা সঠিক বৃত্তে উড়ে যায়। এতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তারা গন্ধ বা খাবার দেখে নয়, বরং আলো ঝলকানোর সময়কাল দেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
ডেভিডসনের ভাষায়, মৌমাছিরা আলো ঝলকানোর দুই সময়কাল তুলনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে—এটাই বড় প্রমাণ।

অপরিচিত উদ্দীপনাও তারা বুঝতে পারে
গবেষকদের মতে, বিবর্তনের ইতিহাসে মৌমাছি এমন আলো-সংকেত কখনোই দেখেনি। তবুও তারা এই নতুন উদ্দীপনাকে ব্যবহার করে শিখতে পারে। এটি তাদের জ্ঞানগত নমনীয়তা সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।
বিরল ক্ষমতা
মানুষ, ম্যাকাক বানর ও কবুতরের মতো অল্প কিছু প্রাণীই এত সূক্ষ্ম সময়-পরিমাপ করতে পারে। যেমন—মরস কোডে “E” লেখা হয় ক্ষুদ্র আলো দিয়ে, আর “T” লেখা হয় দীর্ঘ আলো দিয়ে। মৌমাছির ক্ষেত্রেও ০.৫ সেকেন্ড এবং ৫ সেকেন্ডের ফ্ল্যাশ আলাদা করতে পারা বড় প্রমাণ।
বিজ্ঞানীরা এখন কী অনুসন্ধান করবেন
- মৌমাছি কীভাবে সময় গণনা করে—এর স্নায়বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া যাচাই
- সম্পূর্ণ কলোনিতে মুক্তভাবে উড়তে দেওয়া মৌমাছি নিয়ে একই ধরনের পরীক্ষা
- কেন কিছু মৌমাছি সময় বোঝার ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় দ্রুত শেখে—তার কারণ অনুসন্ধান
মৌমাছিকে নতুন দৃষ্টিতে দেখা প্রয়োজন
ডেভিডসনের মতে, এই গবেষণা দেখায় যে মৌমাছি কোনো অটোমেটিক যন্ত্র নয়, বরং জটিল অভ্যন্তরীণ অনুভূতি ও শেখার ক্ষমতা নিয়ে বেঁচে থাকা প্রাণী। তাদের স্মৃতি, আচরণ এবং শেখার নমনীয়তা সত্যিই বিস্ময়কর।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতামত
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষক সিনতিয়া আকেমি ওই বলেন, মৌমাছিদের সময়-পরিচালনা ক্ষমতা থাকা যৌক্তিক, কারণ খাবার সংগ্রহের সময় তাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
ইংল্যান্ডের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজ্যুয়াল ইকোলজিস্ট জোলিওন ট্রোসিয়ানকো বলেন, এত ছোট মস্তিষ্ক দিয়েও মৌমাছিরা যেভাবে সময় মাপতে শেখে তা অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। এটি প্রমাণ করে, বড় মস্তিষ্ক সব সময় বেশি বুদ্ধিমত্তার নিশ্চয়তা নয়।

মানব-বোধের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ
ডেভিডসন বলেন, সময় আমাদের জীবনের মূল উপাদান হলেও আমরা এখনও জানি না মস্তিষ্কে সময়-অনুভূতি কীভাবে কাজ করে। এই গবেষণা দেখায়, সময় বোঝা কেবল মানুষের প্রশ্ন নয়; অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও এটি সমান গুরুত্বপূর্ণ।
এই আবিষ্কার শুধু মৌমাছির বুদ্ধিমত্তা নয়, বরং প্রাণীজগতের সময়-অনুভূতির ধারণাকেও নতুন আলোয় তুলে ধরেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















